কমরেড ফিদেল কাস্ত্রোর স্মৃতিরপ্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২১

কমরেড ফিদেল কাস্ত্রোর স্মৃতিরপ্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

Manual2 Ad Code

ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২১ : আজ ২৫ নভেম্বর ২০২১ ‘কমরেড কমাদান্তে’ ফিদেল কাস্ত্রো পৃথিবীর মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছেন পাঁচ বছর হলো। তাঁর মৃত্যুদিবসে কমরেড ফিদেল কাস্ত্রোর স্মৃতিরপ্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী।

Manual6 Ad Code

কিউবা বিপ্লব ও কমরেড ফিদেল কাস্ত্রোঃ
তিনি ছিলেন কিউবান বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা।
তার মৃত্যুতে কেবল কিউবা নয়, কেঁদেছে সাম্যবাদের
স্বপ্ন দেখা সব মানুষ। এই মানুষটি কমিউনিস্ট ও পুঁজিবাদী শিবিরে ভাগ হওয়া গত শতকের বিশ্বে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের এক প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। বিশ্ব পুঁজিবাদের হোতা, যুক্তরাষ্ট্রের নাকের ডগায় গড়ে তুলেছিলেন একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র।

তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় পঞ্চাশ
বছরের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ করেছেন। কিউবা বিপ্লবের অপর কিংবদন্তী আর্নেস্ত্রো চে গুয়েভারার ‘কিউবা বিপ্লব’ নামের বইটি থেকে আমরা জানতে পারি এই বিপ্লবীসহ তার সহযোদ্ধাদের কথা। কিউবা বিপ্লবের জন্য যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো, কমরেড চে গুয়েভারা, কমরেড সিয়েররা মায়েস্ত্রার, কমরেড রাউল কাস্ত্রো, কমরেড হুয়ান আইমেইদা এবং কমরেড রামিরো ভালদেস।

Manual4 Ad Code

১৯৫৩ সালে সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবার মনকাদা সেনাছাউনি আক্রমণের মধ্য দিয়েই বিপ্লব শুরু করেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। বিপ্লবের ধাক্কায় ১৯৫৯ সালে পতন ঘটে কিউবার যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একনায়ক ফ্লুজেনসিও বাতিস্তার, ১ জানুয়ারী বাতিস্তা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বিপ্লবের সময় তারা তেমন অস্ত্র জোগাড় করতে না পারলেও তাদের মনোবল ছিল প্রচুর।

Manual3 Ad Code

কমরেড চে গুয়েভারা ছেলেন গেরিলা বাহিনীর ডাক্তার আর ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন গেরিলা বাহিনীর প্রধান।তাদের আরও অনেক সহযোগী গেরিলা ছিলেন। কয়েক দল কৃষক এই গেরিলা বাহিনীতে অংশ নেন, তাদের মধ্যে একজন কবিও ছিলেন নাম এল পাতাহো।
আবার এই বাহিনী’তে ছিল একজন বিশ্বাস ঘাতক, যে এক জাহাজ অস্ত্র গোপনে বিক্রি করে দিয়েছিল। ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর বাতিস্তার বাহিনী তাদের একটা টক্কর দিয়েছিল। সানচেস মস্কেরার বাহিনীকে হারানোর পর তারা বিমান হামলার মুখে পড়েন।

এরপর থেকে তারা রাতে চলাচল করতেন যেন শত্রু সরাসরি আক্রমণ করার সুযোগ না পায়। গেরিলা আক্রমণের জন্য কৃষকরা গাড়ি চলার পথ তৈরি
করে দেয়। এরপর থেকে তারা শত্রুর ঘাঁটি আক্রমণ করত এবং সফলতার সাথে শত্রুকে পরাজিত করে তাদের অস্ত্রগুলো নেওয়া শুরু করেন।

এর মাঝেই দল বড় হতে থাকে এবং যুদ্ধে জয় লাভ করতে থাকে, এসময় একজন সাংবাদিক ফিদেল কাস্ত্রোর সাক্ষাতকার প্রকাশ করলে বিশ্ব কিউবা বিপ্লবীদের কথা জানতে থাকেন এবং দলেও আরও নতুন নতুন সৈন্য যোগ দেয়। মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাসে কিউবান বিপ্লবের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিপ্লবীদের ত্যাগ, লড়াই, অভিযানের ভয়াবহতা, সর্বোপরি বিপ্লবের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে। কিউবা বিপ্লবের অনেক ঘটনা আজ মানুষ জানতে পারত না যদি না কমরেড চে গুয়েভারা এই বইটি লিখে না যেতেন।

১৯৭১ এ আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধে মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের পক্ষে দাঁড়ানো কমরেড ফিদেল কাস্ত্রোকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায়’ ভূষিত করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল কমিউনিস্ট নেতা কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো’র।

♦️প্রিয় কমরেডস প্রিয় মহান নেতার ১০টি উক্তি এখানে তুলে ধরা হলোঃ
?আমার নিন্দা করুন। এটা কোনো গুরুত্ব পাবে না।ইতিহাস আমাকে অব্যাহতি দেবে।’ ১৯৫৩ সালে সান্তিয়াগোতে মোংকাদা সামরিক ব্যারাকে আত্মঘাতীতুল্য হামলার অভিযোগে চলা বিচারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এ কথা বলেন কাস্ত্রো।
?আমি ৮২ জনকে নিয়ে বিপ্লব শুরু করি। তা যদি আমাকে আবার করতে হয়, তবে আমি ১০ বা ১৫ জনকে নিয়ে করব এবং সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে করবো।সংখ্যায় আপনি কত কম, সেটা কোনো বিষয় নয়, যদি আপনার বিশ্বাস ও কর্মপরিকল্পনা থাকে। *১৯৫৯ সালে কাস্ত্রো বলেছিলেন এ কথা।
?আমি আমার দাড়ি কেটে ফেলার কথা ভাবছি না। কারণ, আমি আমার দাড়িতেই অভ্যস্ত এবং আমার দাড়ি আমার দেশের জন্য অনেক অর্থ বহন করে সুশাসনের জন্য আমরা যেদিন আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করতে পারব, সেদিন আমি দাড়ি কাটব। *১৯৫৯ সালে বিপ্লবের ৩০ দিন পর সিবিএসের এডওয়ার্ড মুরোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন কমরেড ফিডেল কাস্ত্রো।
?আমি অনেক আগেই এ ব্যাপারে উপসংহারে পৌছেছি যে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে কিউবার জনগণের জন্য আমাকে এই শেষ ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। আমি আসলেই ধূমপানের তেমন অভাব বোধ করি না।’ ★১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিতে গিয়ে এ কথা বলেছিলেন কাস্ত্রো।
?আমাকে জিইয়ে রাখা মতাদর্শ আর ব্যতিক্রমী মূর্তির (যিশুখ্রিষ্ট) প্রতীকী মতাদর্শের মধ্যে কখনো কোনো তফাত দেখিনি। ★১৯৮৫ সালে কাস্ত্রো এই উক্তি করেন।
?ভাবুন তো, সাম্যবাদের সম্প্রদায় যদি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, পৃথিবীতে তখন কী হবে…যদি তা সম্ভব হতো এবং আমি মনে করি না যে এটা সম্ভব।★১৯৮৯ সালে কাস্ত্রোর মন্তব্য।
?বিপ্লবের সবচেয়ে বড় উপকার হচ্ছে, আমাদের যৌনকর্মীরাও গ্র্যাজুয়েট। ★২০০৩ সালে পরিচালক অলিভার স্টোনকে এ কথা বলেন কাস্ত্রো।
?কিউবার মডেল আমাদের জন্য আর কোনো কাজে আসবে না। ★২০১০ সালে মার্কিন সাংবাদিক জেফ্রে গোল্ডবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন কাস্ত্রো। তবে পরে এ বিষয়ে কাস্ত্রো বলেছিলেন, তাঁর এ মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিকভাবে টেনে আনা হয়েছিল।
?আমি উপলব্ধি করেছি যে আমার সত্যিকারের নিয়তি হচ্ছে যুদ্ধ, যা আমি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করতে যাচ্ছি। কিউবার এই নেতার ওপর ২০০৪ সালে পরিচালক অলিভার স্টোন নির্মিত দ্বিতীয় তথ্যচিত্র ”লুকিং ফর ফিদেল”-এ এই মন্তব্য করেন কাস্ত্রো।
?৮০ বছরে পৌছাতে পেরে আমি সত্যিই খুশি। আমি তা কখনো আশা করিনি, অন্তত এমন প্রতিবেশী পাওয়ার কথা ভাবিনি, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর যে প্রতিবেশী প্রতিদিন আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ২০০৬ সালের ২১ জুলাই আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত লাতিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ কথা বলেছিলেন কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো।

Manual1 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code