বাংলা লুঠ কি কেবল ব্রিটিশরাই করেছিল?

প্রকাশিত: ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২২

বাংলা লুঠ কি কেবল ব্রিটিশরাই করেছিল?

Manual6 Ad Code

শিবাশীষ বসু |

১৬৫৮ সালে শাহ সুজার সময়ে বাংলার ভূমি বন্দোবস্ত হয়েছিল। আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ধার্য হয়েছিল ১ কোটি ৩১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৭ টাকা। ১৭০০ সাল নাগাদ মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব লক্ষ্য করেন, বিভিন্ন কারণে বাংলার রাজস্ব আদায় ক্রমেই কমে আসছে। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য তিনি তাঁর বিশ্বস্ত কর্মচারী করতালাব খাঁ-কে (পরবর্তীকালে মুর্শিদকুলী খাঁ নামে বিখ্যাত) বাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করলেন। ১৭০০ সালে আদায় হল ১ কোটি ১৭ লাখ ২৮ হাজার ৫৪১ টাকা। ১৭১৭ সালে সুবাদার নিযুক্ত হয়ে বাংলার জমি জরিপ করালেন। ১৭২২ সালে নুতন ভূমি ব্যবস্থায় ১৩.৫ শতাংশ রাজস্ব বাড়িয়ে তা করা হল ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৬ টাকা। ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলা আদায় করেছিলেন ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬১ টাকা।

Manual5 Ad Code

নবাব হওয়ার পর মুর্শিদকুলী বাংলার ভূমি রাজস্বের আর একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি দেওয়ানি বিভাগের হিসাবরক্ষক ও মুৎসুদ্দিদের জন্য এক খাতে বাংলার জমিদারদের উপর বাড়তি ভূমি রাজস্ব বসিয়েছিলেন। এর নাম ছিল ‘আবওয়াব’। তাঁর উত্তরাধিকারীরা ক্রমশ এই কর বাড়াতে থাকেন, যা বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। নবাব আলীবর্দী এই খাতে রাজস্ব আদায় ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছিলেন, আর জমিদাররা আবওয়াবের সুযোগ নিয়ে কৃষকদের উপর যে রাজস্ব হার চাপালো তাতে তাদের দেয় রাজস্বের পরিমাণ ৫০ শতাংশ বেড়ে গেল। রায়তরা এই বাড়তি করের বোঝা সইতে পারবে কিনা, এ সব প্রশ্ন খতিয়ে দেখা হয় নি।

Manual6 Ad Code

কৃষকদের কাছ থেকে ভূমি রাজস্ব নেওয়া ছাড়াও অন্যান্য পেশাদারদের কাছ থেকে ‘সায়ের’ নামে কর আদায় হত, যা ধার্য হত বাড়ি, দোকান, বাজার, গুদাম, মেলা, সেতু, ফেরিঘাট প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বিভিন্ন ধর্মের বণিকদের থেকে বিভিন্ন হারে কর আদায় হত – মুসলমান বণিকদের বাণিজ্য পণ্যের উপর মাশুল ছিল ২.৫ শতাংশ এবং হিন্দু বণিকদের ক্ষেত্রে তা ছিল ৩.৫ শতাংশ।

এ তো গেল বাংলার কৃষক শ্রমিক কারিগরদের রক্ত জল করা পরিশ্রম থেকে আদায় করা ট্যাক্সের কথা। দিল্লীর সম্রাটকে কি পরিমাণ রাজস্ব পাঠানো হত, তা একবার দেখে নেওয়া যাক। বাংলার অর্থনীতি সঙ্কটময় হয়ে উঠেছিল বাদশাহকে রাজস্ব দিতে গিয়ে। মুর্শিদকুলী প্রতি বছর এক কোটিরও বেশি টাকা দিল্লীতে পাঠাতেন। সুজাউদ্দিন পাঠাতেন ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। শত শত চটের বস্তায় ভরে রৌপমূদ্রা দিল্লীতে প্রেরণের পর রাজ্য এমন মূদ্রাসঙ্কটে পড়ে যেত যে টাকার সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে প্রায় মাস ছয়েক লাগতো। এঁরা দুজনে মিলেই প্রায় চল্লিশ কোটি টাকা রাজস্ব আর অসংখ্য বহুমূল্য উপঢৌকন দিল্লীতে পাঠিয়েছিলেন।

Manual6 Ad Code

বাংলা থেকে দিল্লীতে এই বিশাল অর্থপাচারের ফলে বাংলা ক্রমেই দরিদ্র হয়ে চলেছিল। দরিদ্র হলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়, ক্রয়ক্ষমতা কমলে দ্রব্যমূল্য হ্রাস পায়। বাংলায় সুলভমূল্যের তাৎপর্য হচ্ছে জনগণের দরিদ্রতা, সমৃদ্ধি নয়।

তথ্যসূত্র : প্রাক-পলাশী বাংলা – সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়
বাংলাদেশের ইতিহাস : ১৭০৪-১৯৭১ দ্বিতীয় খণ্ড – সিরাজুল ইসলাম সম্পাদিত

Manual8 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code