ঈদুল আজহার আগে-পরে ১২ দিনে দেশে ২৭৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩১১ জন ও অাহত ১১৯৭

প্রকাশিত: ১২:৫০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২২

ঈদুল আজহার আগে-পরে ১২ দিনে দেশে ২৭৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩১১ জন ও অাহত ১১৯৭

Manual6 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২১ জুলাই ২০২২ : ঈদুল আজহার আগে-পরে ১২ দিনে (৫ জুলাই-১৬ জুলাই) দেশে ২৭৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১১৯৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৪৩, শিশু ৫৮। ১৫৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১২৩ জন, যা মোট নিহতের ৩৯.৫৪ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৪৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৪.৭৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৩ জন, অর্থাৎ ১৭.০৪ শতাংশ।

এই সময়ে ৯টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। ১৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১২৩ জন (৩৯.৫৪%), বাস যাত্রী ৩৩ জন (১০.৬১%), ট্রাক-পিকআপ-লরি আরোহী ১৬ জন (৫.১৪%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার যাত্রী ১৮ জন (৫.৭৮%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৫৭ জন (১৮.৩২%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়াটিলার) ১০ জন (৩.২১%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ৮ জন (২.৫৭%) নিহত হয়েছে।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১০৯টি (৩৯.৭৮%) জাতীয় মহাসড়কে, ৭৭টি (২৮.১০%) আঞ্চলিক সড়কে, ৬১টি (২২.২৬%) গ্রামীণ সড়কে এবং ২৭টি (৯.৮৫%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন:

দুর্ঘটনাসমূহের ৭৬টি (২৭.৭৩%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৯৯টি (৩৬.১৩%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৫১টি (১৮.৬১%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪২টি (১৫.৩২%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৬টি (২.১৮%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

Manual4 Ad Code

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ:

ঈদুল আজহা উদযাপনকালে ১৫৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১২৩ জন নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ৩৯.৫৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৫৬.২০ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়-

১. অন্য যানবাহনের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ৩১.১৬%
২. মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২.০৭%
৩. অন্য যানবাহন দ্বারা মোটরসাইকেল ধাক্কা/চাপায় আক্রান্ত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৬.৭৫% ।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫৯.৩৪ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর এবং নিহত পথচারীদের ৩২.৬০ শতাংশ বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হয়েছে।

২০২১ সালের ঈদুল আজহা উদযাপনকালে ৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৫ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসেবে এ বছর ঈদুল আজহায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৮৫.৫৪% এবং প্রাণহানি বেড়েছে ১৯.৪৭%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-লরি ১৬.৪২%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-জীপ ৩.৭৪%, যাত্রীবাহী বাস ১৭.৪৬%, মোটরসাইকেল ৩৪.০৯%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক) ১৯.৯৫%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন- (নসিমন-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-পাওয়ারটিলার) ৬.৪৪% এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ১.৮৭%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪৮১টি। (ট্রাক ৩৬, বাস ৮৪, কাভার্ডভ্যান ৮, পিকআপ ১৬, ট্রাক্টর ৬, লরি ২, তেলবাহী লরি ৩, দশ চাকার লরি ১, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, ড্রাম ট্রাক ৬, মাইক্রোবাস ৬, প্রাইভেটকার ১১, জীপ ১, মোটরসাইকেল ১৬৪, থ্রি-হুইলার ৯৬ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩১ (নসিমন-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়াটিলার) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ৯টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪.৭৪%, সকালে ২২.৬২%, দুপুরে ১৯.৭০%, বিকালে ২০.৮০%, সন্ধ্যায় ৯.৮৫% এবং রাতে ২২.২৬%।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান:

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩৩.৯৪%, প্রাণহানি ৩৩.৪৪%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৫৯%, প্রাণহানি ১৪.১৪%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.৪০%, প্রাণহানি ১৩.৫০%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৬.৭৮%, প্রাণহানি ১১.৫৭%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৪৭%, প্রাণহানি ৫.৪৬%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৭৪%, প্রাণহানি ৬.৭৫%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৯৩%, প্রাণহানি ৯.৩২% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.১০%, প্রাণহানি ৫.৭৮% ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৯৩টি দুর্ঘটনায় ১০৪ জন নিহত। ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম ১৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ১৭ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় সবচেয়ে বেশি ২০ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মাগুরা, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁও জেলায়। এই ৯টি জেলায় স্বল্প মাত্রার কিছু দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

রাজধানীতে ১৯টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছে।

ঈদযাত্রা ও দুর্ঘটনা পর্যালোচনা:

এবারের ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২৬ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনা ফিরতি যাত্রায় বেশি হয়েছে। গত বছরের ঈদুল আজহার চেয়ে এ বছরের ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫৯.৩০ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৩৭.৬১ শতাংশ। গত ঈদুল আজহায় করোনা সংক্রমণরোধে মানুষের চলাচল সীমিত থাকার কারণে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কম ছিল। তবে এটাও ঠিক, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ক্রমাগত বাড়ছে। এই বৃদ্ধি প্রবণতার প্রধান কারণ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বৃদ্ধি।

এবারের ঈদুল আজহায় রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ১ কোটি মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছে এবং প্রায় ৩ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছে। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ বঙ্গগামী ঈদ যাত্রা অনেক বেশি স্বস্তির ছিল এবং পাটুরিয়া-দৌলদিয়া ঘাটে যানবাহনের কোনো চাপ ছিল না। উত্তর বঙ্গগামী সড়কে দীর্ঘ যানজট হয়েছে। ৬ ঘন্টার যাত্রা ২৫/২৬ ঘন্টায় ঠেকেছে। ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা গত ঈদুল ফিতরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও জনভোগান্তি বেড়েছে। মোটরসাইকেল বন্ধের সুযোগে পরিবহন মালিকরা যাত্রী প্রতি ২/৩ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করেছে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে সরকার তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। মোটরসাইকেল বন্ধের কারণে যাত্রীর চাপা বেশি থাকায় পরিবহন মালিকরা তাদের অতি ভাঙ্গাচোরা যাচ্ছেতাই মার্কা যানবাহন রাস্তায় নামিয়েছে। এসব যানবাহন সড়কে বিকল হয়ে যানজট বাড়িয়েছে। মানুষ বাধ্য হয়ে মুরগীবাহী পিকআপ ভ্যানের খাঁচার মধ্যে বসেও বাড়িতে গেছে। রাজধানীতে চলাচলকারী বহু বাস আন্তঃজেলায় চলাচল করেছে। ফলে রাজধানীতে তীব্র পরিবহন সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সুযোগে সকল প্রকার যানবাহন ব্যাপক ভাড়া নৈরাজ্য চালিয়েছে। ঈদ যাত্রায় রেল গাড়িতে ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। টিকেট কালোবাজারী ও ভাড়া নৈরাজ্য ছিল পূর্বের মতোই। নৌ-পথে অনেকটা স্বস্তি থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও ছিল। ঈদের আগে সরকারি ছুটি কম থাকার কারণে ঘরমুখী যাত্রায় জনভোগান্তি বেশি হয়েছে। ঈদের পরে ছুটি কম থাকলেও মানুষ এক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে ঢাকায় ফিরেছে। ফলে ফিরতি যাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। যদিও ভাড়া নৈরাজ্য বহাল ছিল এবং এখনও চলছে।

উল্লেখ্য, ঈদযাত্রা ও ঈদ উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাপক সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে। কিন্তু যে সকল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেনি, শুধু আহত হয়েছে- সেসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই গণমাধ্যমে আসেনি। ফলে দুর্ঘটনায় আহতের প্রকৃত চিত্র জানা যায়নি। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে যে পরিমাণ মানুষ ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিয়েছে এবং নিচ্ছে তা থেকে অনুমান করা যায়, সারা দেশে আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার হবে।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ:

১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন;
২. বেপরোয়া গতি;
৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা;
৪. বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল;
৬. তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো;
৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;
৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা;
৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি;
১০ গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সুপারিশসমূহ:

Manual4 Ad Code

১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে;
২. চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;
৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৪. পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে;
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে;
৭. যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে;
৮. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে;
৯. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে;
১০.গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে;
১১. ঈদের আগে-পরে সড়ক, নৌ ও রেলপথে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;
১২. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
১৩.“সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জীবনে এখন নিত্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

Manual3 Ad Code

প্রতিবেদকের প্রতিক্রিয়া ও সুপারিশ :

Manual7 Ad Code

এ বিষয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথা’র বিশেষ প্রতিনিধি, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “দুর্ঘটনার এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সড়কে নিরাপত্তাহীনতা ও সীমাহীন অব্যবস্থাপনার চিত্রই প্রকাশ পেয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালনার প্রাথমিক শিক্ষা কোর্স (ব্যবহারিক সহ) চালু করাসহ দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা,পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করা, সকল সড়ক-মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করা, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমানো, গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা, সড়ক, নৌ ও রেলপথে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাসহ
সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিমালা যথাযথ বাস্তবায়নে নতুন নতুন কৌশল ও ডিজিটালাইজড উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে হবে। সর্বোপরি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও ডিজিটাইজড করতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রায় দুই বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উন্নয়ন প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছে, তা বাস্তবায়ন জরুরি।
যাত্রী ও পথচারীদের ব্যক্তি নিরাপত্তা ও বিধি-বিধান প্রতিপালনে সচেতন হতে হবে। নাগরিকদের মধ্যে আইন ও শৃঙ্খলা মানার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে হবে। সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, শ্রমিক নেতা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ আইন প্রয়োগে সহায়তা প্রদান করতে হবে।
প্রশাসন, পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ, মালিক, চালক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয়ভাবে সেল তৈরি করে এবং প্রতি বিভাগ ও জেলায় একইভাবে সেল গঠন করে নিয়মিত মনিটরিং ও পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং এ সেলকে সর্বদাই সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব।”

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code