দেশ তার সাহসী সন্তানকে মনে রাখবে

প্রকাশিত: ৫:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২০

দেশ তার সাহসী সন্তানকে মনে রাখবে

Manual8 Ad Code

রাশেদ খান মেনন, ১৪ জুন ২০২০ : শেষ পর্যন্ত চলেই গেলেন মোহাম্মদ নাসিম। ক’দিন ধরেই মৃত্যুর সঙ্গে তার লড়াই চলছিল। আশা ছিল, যেভাবে তিনি এক-এগারোর সেনা শাসনে জেলের অভ্যন্তরে স্ট্রোকের সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছিলেন, তেমনি বিজয়ী হয়ে তিনি জীবনে ফিরে আসবেন। করোনা তাকে পরাজিত করতে পারেনি। কিন্তু এক-এগারোর সেনাশাসন আমলের নিপীড়নের যে ক্ষত তিনি বহন করে চলেছিলেন তা-ই তাকে পর্যুদস্ত করল। এই করোনাকালে যখন পুরো জাতি এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে সেই সময় জাতি এক যোগ্য সেনাপতিকে হারাল। এই করোনা সময়কালে আমরা সবাই যখন কার্যত গৃহবন্দি তখন তিনি করোনা সংক্রমণ উপেক্ষা করে ছুটে গেছেন সিরাজগঞ্জে তার এলাকার মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে। এ অবস্থাতেই তিনি চৌদ্দ দলের ত্রাণ তৎপরতাকে সংগঠিত করেছেন, সমন্বিত করেছেন। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে চিন্তিত ছিলেন করোনা মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা নিয়ে।

Manual7 Ad Code

এ বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমূল কাঠামোগত পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটের অপ্রতুলতা নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তার চিন্তায় ছিল দেশের মানুষ, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। এর ভিত্তিতেই কিছুটা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চৌদ্দ দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এবং তার ওই কাজের মধ্য দিয়েই হয়ে উঠেছিলেন চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র।

Manual5 Ad Code

নাসিম তার লড়াকু জীবনে তার পিতা জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর যোগ্য উত্তরসূরি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তো বটেই, স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সামনে থেকে সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের চিফ হুইপ হিসেবে তিনি যোগ্যতার সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেন এবং পার্লামেন্ট ও পার্লামেন্টের বাইরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দৃঢ় ভূমিকা রাখেন। শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয়ের তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সন্ত্রাস উৎপীড়িত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের সন্ত্রাসীদের তিনি দলে দলে আত্মসমর্পণ করান ও তাদের স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে ভারত সীমান্তে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেন। পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন তার অন্যতম কৃতিত্ব। বিশেষ করে শেখ হাসিনা প্রবর্তিত ও খালেদা জিয়া বাতিলকৃত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক পুনঃস্থাপনে তিনি যথাযোগ্য সেনাপত্য দেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনে রাস্তার সংগ্রামে পুলিশের আক্রমণে তার দেহ ক্ষতবিক্ষত হলেও তিনি বিচলিত হননি। তেমনি বিচলিত হননি এক-এগারোর সেনাশাসনে জেলের অভ্যন্তরে নিপীড়নেও। চৌদ্দ দলকে এগিয়ে নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন; সর্বোপরি গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তার দৃঢ় পদক্ষেপ এবং গভীর আস্থা ও বিশ্বাস দিয়ে। দেশের মানুষ, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সব শক্তি তাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণে রাখবে।
#
রাশেদ খান মেনন এমপি
সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

Manual8 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code