সিলেট ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:০৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২৫
স্বাধীনতা যুদ্ধ আজও আমার কাছে ভীষণভাবে জীবন্ত। গোটা দেশ পাকিস্তানি হানাদারের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছে। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য যুবক ছেলেদের যেন মিছিল শুরু হয়ে গেছে। বাড়ি বাড়ি প্রায় সকলেই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে কান পেতে থাকে। অনেকের পছন্দ হোক আর না হোক,শেখ মুজিবের রেকর্ড করা কণ্ঠ শুনতে সকলেই উদগ্রীব থাকে। কোনো কোনো বাবা মা নিজের সন্তানকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। এমন কোনো রাত নেই, যে রাতে গুলির আওয়াজ আমাদের কানে আসছে না।
একই সময়ে আর একটা চিত্র। মাঠের পর মাঠে আগুন লাগানো হচ্ছে। রাতের অন্ধকার কেটে গেলেই গ্রামে গ্রামে লুটপাটকারি বাহিনী হানা দিচ্ছে। তারা বাড়িঘর লুটপাট করছে, কখনও কখনও আগুনে পুড়িয়ে সব নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। ধরে নিয়ে যাচ্ছে যুবতী নারী কন্যাদের। হুমকি দিয়ে যাচ্ছে-মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে ধরিয়ে না দিলে ভিটেটা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। ধরে নিয়ে যাওয়া কন্যাকে যেন খুঁজতে না যাওয়া হয়, সঙ্গে সে হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে। এবং এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো জামায়াতে ইসলামী। সঙ্গে সম মনোভাবাপন্ন আরও কিছু দল এবং ব্যক্তি।
আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশদ্রোহী এই গোষ্ঠীকে আমরা কখনও বিচারের আওতায় আনতে পারিনি। স্বাধীন দেশে এদের গ্রেফতারের নামে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছিলো। তৎকালীন সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী কেউ কেউ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছে।
৭১ এর খল নায়কেরা পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে স্বাধীন দেশের সব সরকারেরই। বিপরীত অবস্থায় দাঁড়িয়ে তাদের কষ্ট করে শক্তি সঞ্চয় করতে হয়নি। তাদের শক্তি রীতিমতো যোগান দেওয়া হয়েছে। কেন এ ধরণের দুঃখজনক ঘটনা ঘটলো, তা ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু ভয়াবহ যে দৃশ্য আমরা দেখলাম, ৭১ এর পরাজিত শক্তি নতুন শক্তিতে আবার আমাদের মুখোমুখি হাজির হয়ে গেলো। স্বাধীন দেশের জনগণের সামনে তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো। আর আমাদের সরকার পলাশির প্রান্তরের মতো নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখলো। আমাদের দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী সমাজের ভিষণ শত্রু এরা। এরা ৭১ সালে ঘোষণা করেছিলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নারীরা গনিমতের মাল। এবং প্রায় চার লক্ষ নারীকে ধর্ষণের সঙ্গে এরা সরাসরি জড়িত। এরা আরও মনে করে, নারী সমাজ স্বাধীন মানুষের সমকক্ষ মর্যাদা কিছুতেই পেতে পারেনা।
স্বাধীন দেশের মাটিতে অর্ধেক জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতায় ওরা বিশ্বাস করে না।
কেউ কেউ বলছেন ওরা কেন ভুল স্বীকার করেনা। আমাদের কেন পিছিয়ে গিয়ে কথা বলতে হবে! ৭১ সালে তারা ভুল করেনি। নারকীয় হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ-সেই সঙ্গে আমাদের দেশের অগণিত নারীকে তারা মহা বিপর্যয়ে নিক্ষেপ করেছিলো পরিকল্পিতভাবেই। মনের মাধুরি মিশিয়ে সে সব তাণ্ডবকে ভুল বলা মস্তবড় অপরাধ বলে আমি মনে করি। তাই আজও আমি এদের বিচার চাই।
#
তাহেরা বেগম জলি
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি