বিজ্ঞানী হাইপেশিয়া পৃথিবীর মানুষের কাছে বেঁচে থাকবেন জ্ঞানের প্রতীক হয়ে

প্রকাশিত: ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২৫

বিজ্ঞানী হাইপেশিয়া পৃথিবীর মানুষের কাছে বেঁচে থাকবেন জ্ঞানের প্রতীক হয়ে

Manual4 Ad Code

মো. মেহেদী হাসান |

প্রাচীনকালের হাতে গোনা কয়েকজন নারী বিজ্ঞানীর মধ্যে একজন ছিলেন হাইপেশিয়া। হাইপেশিয়া সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের জানতে হবে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি সম্পর্কে। আমাদের আজকের সভ্যতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান বিজ্ঞানের। পৃথিবীতে আরো একবার বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতা গড়ে উঠার সম্ভাবনা জন্মেছিলো এই লাইব্রেরিকে ঘিরে।আলেকজান্দ্রিয়া ছিলো কসমোপলিটান শহর। ফলে এখানে সারা বিশ্বের জ্ঞানীরা জ্ঞানচর্চা করতো।আলেকজান্ডারের পরবর্তী গ্রীক সম্রাটদের আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে প্রায় ১০ লক্ষাধিক বই ছিলো।এই বিশাল লাইব্রেরিকে ঘিরেই ইরাটোস্থিনিস প্রথমবারের মতো নিঁখুতভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ পরিমাপ করেন। হিপার্কাস, ইউক্লিডও তাদের মতবাদ প্রকাশ করেছিলেন এই লাইব্রেরিকে ঘিরেই।

Manual3 Ad Code

সেই লাইব্রেরির শেষদিকের গবেষক হাইপেশিয়ার জন্ম ৩৭০ সালে, যাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক থিওন।যে কোনো হিসেবে তিনি ছিলেন অনিন্দ্য সুন্দরী, কিন্তু শত আবেদন সত্ত্বেও তিনি কখনো বিয়ে করতে রাজি হন নি। এই সুন্দরী মহিলা নিয়মিতভাবে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে বক্তব্য দিতেন, যা শোনার জন্য দূর থেকে জ্ঞানী-গুণী মানুষেরা আসতো, রীতিমতো টিকেট কিনে তারা হাইপেশিয়ার বক্তব্য শুনতো।

তখন খ্রিষ্ট ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছে, আর্চ বিশপ ছিলেন সিরিল। জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চাকে খ্রিষ্ট ধর্মবিরোধী মনে করা হতো বলে ধর্মান্ধরা জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারক হাইপেশিয়াকে সহ্য করতে পারতেন না। তিনি খ্রিষ্টধর্মের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরতেন বলে তাকে তারা থামানোর চেষ্টা করতে থাকেন। ব্যর্থ হন বলে ধর্মান্ধরা তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। ৪১৭ খ্রিষ্টাব্দের কোনো একদিন ঘোড়ার গাড়িতে করে যাওয়ার সময় খ্রিষ্টান ধর্মান্ধরা আর্চ বিশপ সিরিলের নেতৃত্বে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে বিবস্ত্র করে গির্জায় নিয়ে মাংস খুবলে আগুনে ফেলে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডের পুরস্কারস্বরূপ সিরিলকে আর্চ বিশপ থেকে সেইন্টের মর্যাদা দেওয়া হয় (জগতে এর চাইতে উৎকট রসিকতা আর কি হতে পারে?)

Manual4 Ad Code

হাইপেশিয়ার মৃত্যুর সাথে পৃথিবীর সভ্যতার বিকাশও থেমে যায় এবং এই থেমে যাওয়া একদিন দু’দিনের নয়, বরং এক হাজার বছরের জন্য। আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিকে খ্রিস্টান বাইজেন্টান সাম্রাজ্য কর্তৃক পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়। কথিত আছে, বইগুলো পুড়িয়ে গোসলখানার পানি গরম করা হয় এবং ১০ লক্ষ বই পোড়াতে ছয় মাসেরও বেশি সময় লাগে।
মেয়ে হিসেবে জন্মানোর অপরাধে পৃথিবীর এই অসাধারণ বিজ্ঞানী ও গণিতবিদকে কেটে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হলেও ধর্মান্ধরা ইতিহাসের পাতা থেকে তাকে মুছে দিতে পারে নি।

Manual1 Ad Code

আধুনিক পৃথিবীর মানুষ চাঁদের একটি অংশের নাম রেখেছে হাইপেশিয়ার নামে। যতদিন আকাশে চাঁদ উঠবে, ততদিন হাইপেশিয়া বিশ্বের মানুষের কাছে বেঁচে থাকবেন জ্ঞানের প্রতীক হয়ে।

Manual5 Ad Code

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code