মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড

প্রকাশিত: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২৫

মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড

Manual1 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৩ আগস্ট ২০২৫ : সিআইএ ১৯৭২ সালের ২১ ডিসেম্বরেই বলেছিল, ‘বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হবে এক আকস্মিক আঘাতে। মুজিবের উত্তরসূরি তাঁর দল থেকেই আসবে।’

Manual3 Ad Code

প্রথমা থেকে ২০১৩ সালে প্রকাশিত মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড বইয়ে এ তথ্য রয়েছে। বইটির লেখক সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান উল্লেখ করেন, এফবিআই বাদে পররাষ্ট্র দপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্য সব সংস্থা ওই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত পোষণ করেছিল। সিআইএ ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গিও মূল্যায়ন করে চলেছিল।

Manual6 Ad Code

১৯৭৫ সালের ৯ মে সিআইএ বলেছে, ‘মুজিব সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর অধিকাংশ সদস্যের আনুগত্য ধরে রাখতে সক্ষম হবেন বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও রাজনৈতিক স্থিতির ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ ফুটে উঠেছে, তা দেখে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওই সদস্যরা ইতিমধ্যে অধৈর্য হয়ে পড়েছেন এবং তাঁরাই তাঁর অব্যাহত শাসনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে থাকবেন।’

১৯৭৫ সালের ৯ জুন সিআইএর রিপোর্ট বলেছে, ‘অধিকাংশ বাঙালি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুজিব কীভাবে দায়িত্ব পালন করেন, সেটা দেখার ও তাদের মতামত প্রকাশে আরও একটু সময় নিতে আগ্রহী। সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের ক্ষুব্ধ সদস্যরা, যাঁরা মুজিবের অব্যাহত শাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তম সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে গণ্য হচ্ছেন, তাঁরা সম্ভবত এই মর্মে সন্তুষ্ট হয়েছেন যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।’

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন বাংলাদেশের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ সমালোচকেরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রেসিডেন্ট মুজিবকে দোষারোপ করছেন। এখনো পর্যন্ত তিনি অধিকাংশ বাঙালি, বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর সমর্থন লাভ করছেন। অর্থনৈতিক সমস্যা সামলাতে তিনি একটি অধিকতর কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক পদ্ধতি চালু করেছেন, যার লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থান সম্পর্কে সিআইএর প্রতিবেদন নিচে তুলে ধরা হলো:
অভ্যুত্থানে মুজিবুর রহমান অপসারিত।
সেনাবাহিনী আজ দিনের শুরুতে মুজিবুর রহমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি সফল অভ্যুত্থান পরিচালনা করেছে। মুজিবের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সে বিষয়ে বিরোধপূর্ণ প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। কিছু রিপোর্টের দাবি, তিনি গৃহবন্দী রয়েছেন। অন্যদের মতে, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। (এর পরের একটি বাক্য প্রকাশ করা হয়নি)
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদকে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে। সামরিক আইন জারি করা হয়েছে। ঢাকায় ২৪ ঘণ্টার সান্ধ্য আইন কার্যকর রয়েছে। বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, দেশটি এখন থেকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।

এটা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে পরিষ্কার নয় যে সামরিক বাহিনীর কোন অংশটি এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত। কিংবা নতুন সরকারের ধরন কেমন হবে।
মোশতাক আহমদ অবশ্য একজন উদারপন্থী। তাঁকে মন্ত্রিসভার সবচেয়ে পাশ্চাত্যপন্থী এবং শাসক দলের উদারপন্থী গ্রুপের নেতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

মোশতাক আহমদ তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা যেহেতু সংহত করতে চাইছেন, তাই তিনি তাঁর দলের ডানপন্থীদের সমর্থন চাইতে পারেন। এই ডানপন্থীরা সম্প্রতি রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছিলেন। তাঁরা বাংলাদেশের বামমুখিতার কারণে বহুদিন ধরে অসন্তুষ্ট ছিলেন।

ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর মুজিবের কথিত নির্ভরশীলতা এবং তাঁর ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের কারণেও তাঁরা অসন্তুষ্ট ছিলেন।

অভ্যুত্থানের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি এখনো অজ্ঞাত রয়ে গেছে; সাম্প্রতিক মাসগুলোয় যদিও কতিপয় বাঙালি মুজিবের বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তাঁর শাসন নিয়ে অসন্তোষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে, দেশের অব্যাহত গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলায় তিনি অসমর্থ হয়ে পড়েছিলেন। (এর পরের একটি বা দুটি প্যারা প্রকাশ করা হয়নি)

ভারত বাংলাদেশের ঘটনাবলি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। নয়াদিল্লি ঢাকায় একটি স্থিতিশীল ও বন্ধু-সরকারের উপস্থিতিকে তার স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে। তবে ভারতীয়রা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অব্যাহত ভারতীয় হস্তক্ষেপের ব্যাপারে অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়া ঠেকাতে একেবারেই অক্ষম না হয়ে পড়ে, তাহলে তারা সরাসরি সৈন্য পাঠিয়ে হস্তক্ষেপ করার বিষয়ে খুব শিথিল মনোভাব দেখাবে। এমনকি তখন সেই পরিস্থিতিতেও ঢাকার সরকারের অনুরোধ না পেলে নয়াদিল্লি সম্ভবত অপেক্ষা করবে। (এর পরের একটি বা দুটি বাক্য প্রকাশ করা হয়নি)

Manual1 Ad Code

উল্লেখ্য, সিআইএর এসংক্রান্ত দলিলগুলো অবমুক্ত করা হলেও অনলাইনে প্রকাশ করা হয়নি। দলিলগুলো লেখক ম্যারিল্যান্ডে সিআইএ আর্কাইভ থেকে সংগ্রহ করেন এবং এই বইয়ে তা প্রথম ছাপা হলো।

বই পরিচিতি: মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড, মিজানুর রহমান খান, প্রথমা প্রকাশন।

Manual6 Ad Code

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code