’৭১ পূর্ববর্তী সাবেক পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাসদ

প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২৫

’৭১ পূর্ববর্তী সাবেক পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাসদ

Manual8 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২১ আগস্ট ২০২৫ : পাকিস্তানের গণমাধ্যম ‘দি ক্যাচলাইন’-এ গত ১৬ আগস্ট, ’২৫ তারিখে প্রকাশিত এক নিবন্ধে গতবছর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের হৃদ্যতার বিষয় উল্লেখ করে ৫৪ বছর পর ’৭১ পূর্ববর্তী সাবেক পাকিস্তান পুনর্গঠনের জন্য পাকিস্তান সরকারকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।

আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট ২০২৫) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক এই ভূখণ্ডের জনগণের উপর চালানো প্রায়-উপনিবেশিক শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে এক জনযুদ্ধ। দীর্ঘ প্রায় দুশত বছরের বৃটিশ উপনিবেশিক শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের মানুষের মুক্তি সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ’৪৭ সালে ব্রিটিশের ষড়যন্ত্রে অবৈজ্ঞানিক-অনৈতিহাসিক দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হলেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বাস্তবে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত হয়। তারা বৃটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক প্রায়-উপনিবেশিক শোষণের জালে আবদ্ধ হয়। দ্রুতই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ এই শোষণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই ভূখণ্ডের মানুষের স্বতন্ত্র জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটে। ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামে স্বায়ত্ব শাসন থেকে স্বাধীকারের দাবি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মুক্তি সংগ্রামে পরিণত হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লক্ষ মানুষের শহীদী আত্মদান, আড়াই লক্ষ মা-বোনের নির্যাতন ভোগ আর স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর ছাড়া সকল নিপীড়িত মানুষের নানামাত্রিক অংশগ্রহণে এদেশের মানুষ স্বাধীন ভূখণ্ড অর্জন করেছে। সুতরাং ক্যাচ লাইন পত্রিকায় যারা এই মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের ইন্ধনে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন-গৃহযুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করে বাস্তবে তা ইতিহাসের মিথ্যা ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়।

Manual2 Ad Code

বিবৃতিতে তিনি বলেন, উল্লেখিত নিবন্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত ও বাঙ্গালী হিন্দুদের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীও আমাদের জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে একইরূপে উপস্থাপন করে। আমাদের মুক্তির সংগ্রাম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক এই ভূখণ্ডের জনগণের উপর চালানো শোষণ-বৈষম্য এবং ‘ভাগ কর, শাসন কর’ নীতি বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা উস্কানোর প্রতিবাদে এদেশের মানুষের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল। এটাই ছিল মূল নির্ধারক বাস্তবতা। ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কৌশলগতভাবে আমাদের কিছুটা সুবিধা দিয়েছে মাত্র। যুদ্ধের শেষদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধে জড়ানোতে মুক্তিযুদ্ধকে শুধুমাত্র দীর্ঘ মেয়াদে পরিণত হতে দেয়নি। ভারত যুক্ত না হলেও এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ ঠিকই বিজয় ছিনিয়ে আনতো। আর আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে বাঙ্গালী হিন্দুদের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে বাস্তবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সেই পুরানো কায়দায় মুক্তিযুদ্ধকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ফল হিসেবে দেখাতে চায়।

Manual6 Ad Code

উল্লেখ্য, আমাদের ভূখণ্ডে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে নিম্নবর্ণের কৃষক জনগোষ্ঠীর প্রকৃতির বিরুদ্ধ শক্তি এবং সামন্তীয় শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতপাত বিভাজনের উর্দ্ধে উঠে তাদের ঐক্য ও মুক্তির নিশানা প্রদর্শক হিসেবে। এখানে তাই ধর্ম ছিল সম্প্রীতি ও ঐক্যের রূপে। কিন্তু বৃটিশ শাসকদের সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির কৌশল এবং ভারতবর্ষের উঠতি ধনীকশ্রেণি নিজেদের গোষ্ঠী স্বার্থে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ সৃষ্টি করে। একই কৌশল তারা ব্যবহার করতে চেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নস্যাৎ করার জন্যও। কিন্তু তারা পারেনি আমাদের নিপীড়িত মুক্তিকামী জনগণের অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণে।

Manual7 Ad Code

কমরেড ফিরোজ আরও বলেন, গতবছরের ৫ আগস্ট রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তির আস্ফালন দেখা যাচ্ছে। এরা দেশের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা পরিবর্তন করার দাবি জানানোর ধৃষ্টতাও দেখিয়েছে। কোথাও কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ও আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেটের পতাকা নিয়েও মিছিল করেছে; মব সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক হামলা, হত্যা এবং মাজারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে আমরা ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখিনি। বরঞ্চ সরকারের অনেক বক্তব্য ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তিকে প্রশ্রয় দিয়েছে।

কমরেড ফিরোজ অবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও সকল গণ-অভ্যুত্থানের মৌল চেতনা অর্থাৎ বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদী সকল অপশক্তির তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। একইসাথে পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে আমাদের অমিমাংসিত বিষয় সূরাহা করা এবং প্রাপ্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর আহ্বান জানান।

তিনি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তিকে প্রতিহত করে গণ-অভ্যুত্থানের অর্জনকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশের সকল বাম-প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও আপামর জনগণের প্রতিও আহ্বান জানান।

Manual2 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code