মানুষ হওয়ার যাত্রা: সুস্থতার প্রকৃত রহস্য

প্রকাশিত: ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫

মানুষ হওয়ার যাত্রা: সুস্থতার প্রকৃত রহস্য

Manual1 Ad Code

রূপালী রায় |

✍️ আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিপোক্রেটিস একসময় বলেছিলেন—
“Modern medicine cure rarely, comfort mostly, console always.”

অর্থাৎ চিকিৎসার মূল কাজ রোগ সারানো নয়, বরং রোগীর যন্ত্রণা লাঘব করা, আরাম দেওয়া এবং সর্বোপরি তাকে মানসিক সান্ত্বনা দেওয়া। যুগের পর যুগ ধরে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি যতই হোক না কেন, এই উক্তিটি এখনো সত্য হয়ে আছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। কিছু রোগে স্থায়ী আরোগ্য সম্ভব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হয় না। সেখানে চিকিৎসক ওষুধ, থেরাপি বা সার্জারির মাধ্যমে রোগীকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেন, ব্যথা কমান এবং আশা জাগান। চিকিৎসকের হাতে সবসময় নিরাময় নেই, তবে সান্ত্বনা ও সহানুভূতি সবসময় আছে।

বিশ্বাসই চিকিৎসার মূল শক্তি

বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও চিকিৎসাবিদ্যার অধ্যাপক লর্ড ব্লাড একবার বলেছিলেন—
“Modern medicine, homoeopathy, ayurveda, traditional… what you have — ওষুধ নয়, বিশ্বাসই মানুষকে রোগমুক্ত করে।”

Manual6 Ad Code

এই উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ওষুধের চাইতেও বড় শক্তি হলো মনের বিশ্বাস। একজন রোগী যখন বিশ্বাস করেন তিনি সুস্থ হবেন, তখন তার শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাই তাকে সুস্থ করে তোলার পথে কাজ করে।

ওষুধের বাইরে সুস্থতার গবেষণা

২০১৫ সালে গ্লাস আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে ১৪৫টি দেশ অংশ নেয়। সেমিনারের থিম ছিল— “How To Remove Medicine From Human Life.”

ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও ওশেনিয়া মহাদেশের অনেক উন্নত দেশে আজ আর ছোটখাটো অসুখে ওষুধ খাওয়ার প্রচলন নেই। বরং সেখানে মানুষকে প্রাকৃতিক উপাচার, জীবনযাপন পদ্ধতির উন্নয়ন এবং “Self Healing”-এর মাধ্যমে সুস্থ থাকতে শেখানো হয়।

Manual6 Ad Code

গত দুই দশক ধরে “ওষুধ ছাড়াই সুস্থতা” নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। ফলাফল বিস্ময়কর। গবেষণায় দেখা গেছে—

যারা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, ঈর্ষা, ঘৃণা, স্বার্থপরতা, মিথ্যা, শঠতা ও ষড়যন্ত্রে ভরপুর জীবন যাপন করেন, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি রোগে আক্রান্ত হন।

এদের জীবনে দ্বন্দ্ব, ঝামেলা ও অস্থিরতা বেশি থাকে।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এরা অনেক সময় সামাজিকভাবে শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত ও ভদ্র লোকজন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে মানসিক অশান্তি ও নেতিবাচকতা তাদের শরীরে রোগ ডেকে আনে।

অন্যদিকে যারা দয়া, মায়া, প্রেম, ক্ষমা, সহযোগিতা ও পরোপকারের মতো গুণে সমৃদ্ধ, তাদের মধ্যে রোগবালাই তেমন দেখা যায় না। তাদের জীবনে অযথা ঝঞ্ঝাট নেই, মন শান্ত থাকে, শরীর সুস্থ থাকে। তারা দীর্ঘজীবী ও সুখী হন।

এই সমীকরণ থেকে গবেষকরা এক নতুন ধারণা দিয়েছেন— “Quantum Healing।” অর্থাৎ দেহের সুস্থতার মূল চাবিকাঠি মনের ভেতরেই লুকানো।

মানুষ হওয়ার প্রকৃত অর্থ

এই সত্যটি আমাদের সামনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি এনে দেয়— কেবল চামড়া ও হাড় নিয়ে জন্মালেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজন মানবিক গুণের বিকাশ।

Manual8 Ad Code

বুদ্ধত্ব, ঈশ্বরপ্রাপ্তি, মোক্ষ বা নির্বাণলাভ কোনো রহস্যময় বিষয় নয়। এগুলো মূলত মানুষের পূর্ণ বিকাশের প্রতীক। পতঞ্জলির যোগদর্শনও এই পথেই আহ্বান জানায়— যেখানে অপূর্ণ মানুষ নিজেকে ধীরে ধীরে পূর্ণ মানুষে রূপান্তরিত করতে পারে।

উপসংহার

আজকের দিনে সুস্থ থাকার জন্য কেবল চিকিৎসা নয়, বরং আমাদের মানবিক বিকাশই সবচেয়ে জরুরি।

সুস্থ থাকতে হলে আমাদের রাগ, লোভ, হিংসা, ঈর্ষার মতো নেতিবাচক প্রবৃত্তি ত্যাগ করতে হবে।

ভালোবাসা, সহমর্মিতা, ক্ষমাশীলতা, সততা ও পরোপকারকে জীবনের মূল মন্ত্রে পরিণত করতে হবে।

মানুষ হওয়ার যাত্রাটিই হবে আমাদের আসল স্বাস্থ্যযাত্রা।

সুস্থ, সুন্দর ও সার্থক জীবনের জন্য তাই আজই আমাদের শুরু করতে হবে “মানুষ হওয়ার যাত্রা।”
#
✍️ রূপালী রায়

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code