ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১৭-১৮ ঘণ্টার বিভীষিকা : মুক্তির পথ কোথায়?

প্রকাশিত: ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১৭-১৮ ঘণ্টার বিভীষিকা : মুক্তির পথ কোথায়?

Manual6 Ad Code

পারভেজ কৈরি |

ঢাকা থেকে সিলেট—একটি দেশের রাজধানী থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহর। সাধারণ সময়ে এই পথ অতিক্রম করতে লাগে সর্বোচ্চ ৭-৮ ঘণ্টা। অথচ আজ বাস্তবতা হলো ভিন্ন। চলমান উন্নয়ন কাজ, অব্যবস্থাপনা ও দুর্বল সমন্বয়ের কারণে একই পথে যাত্রীদের এখন ভোগ করতে হচ্ছে অকল্পনীয় ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টার যানজট। বিশেষ করে বিশ্বরোড, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ এলাকাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে গাড়ির দীর্ঘ সারিতে। নারী, শিশু ও অসুস্থ রোগীদের জন্য এই অবস্থা রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

Manual7 Ad Code

উন্নয়ন প্রকল্প না জনদুর্ভোগ?

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই মহাসড়ক শুধু সিলেট নয়, সারা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি লাইফলাইন। প্রবাসী আয়, শিল্পকারখানা, পর্যটনসহ নানা কারণে এই রুটের কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, পরিকল্পনার ঘাটতি এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুর্বল সমন্বয় পুরো উন্নয়নকাজকে জনদুর্ভোগে পরিণত করেছে। উন্নয়ন যদি মানুষের কষ্ট বাড়ায়, তবে সেটি আসলে ব্যর্থ উন্নয়ন।

Manual8 Ad Code

মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র

Manual2 Ad Code

গরমে ঘেমে ওঠা শিশু, ওষুধের অভাবে কাতরানো রোগী, প্রসূতি নারী কিংবা অফিসগামী যাত্রী—সবাই সমানভাবে ভোগান্তির শিকার। আটকে থাকা গাড়িগুলোতে খাদ্য, পানি ও শৌচাগারের সুযোগ না থাকায় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়াচ্ছে অসহনীয়। সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই মহাসড়কে পণ্য ও যাত্রী নিয়ে চলাচল করে; তাদের এই বন্দিদশা আর কোনোভাবেই উপেক্ষা করার মতো নয়।

কী করা যেতে পারে?

এই মহাসড়কে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবী। নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন—

১. ছয় লেন প্রকল্পে গতি আনা: কাজের অগ্রগতি প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
২. বিকল্প সড়ক সংস্কার: আশপাশের বিকল্প রাস্তাগুলো দ্রুত মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে, যাতে চাপ কমে।
৩. ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট: পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ, মোবাইল টিম ও সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৪. মানবিক সহায়তা: যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের জন্য অস্থায়ী মেডিকেল সহায়তা, বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি সেবার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৫. রেলপথের ব্যবহার বৃদ্ধি: ঢাকা-সিলেট রুটে অতিরিক্ত ট্রেন চালু, বগি বাড়ানো এবং টিকিট কালোবাজারি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

করণীয় শুধু সরকারের নয়

এ সমস্যার সমাধান শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার, ট্রাফিক বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণ—সব পক্ষেরই সমন্বিত ভূমিকা প্রয়োজন। গণমাধ্যমকে আরও সোচ্চার হয়ে সমস্যার ভয়াবহতা তুলে ধরতে হবে।

শেষকথা

সিলেটের মানুষের আজকের এই কষ্ট সাময়িক হলেও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক ধমনীরূপে পরিচিত। তাই এই রাস্তায় নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি জাতীয় প্রয়োজন।

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে সিলেটবাসীর একটাই আবেদন—এই অবর্ণনীয় কষ্ট লাঘবে এখনই দ্রুত, কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগ নিন। উন্নয়ন হোক মানুষের জন্য, দুর্ভোগের জন্য নয়।
#

✍️ পারভেজ কৈরি
প্রকল্প কর্মকর্তা, কান্ট্রি অফিস
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।

Manual1 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code