বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খান — তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী: স্মৃতি, কর্ম ও দেশবরেণ্য অবদান

প্রকাশিত: ১২:২০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫

বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খান — তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী: স্মৃতি, কর্ম ও দেশবরেণ্য অবদান

Manual7 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী কাল (১ অক্টোবর)।

মরহুমের স্মরণে গুলশানের বাসভবনে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিবারের উদ্যোগে বুধবার বাসায় কোরআন খানি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

Manual1 Ad Code

২০২২ সালের ১ অক্টোবর ৮৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তোয়াব খান।

স্মরণসভা ও শোকপর্ব

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানের পারিবারিক ঠিকানায় আয়োজন করা মিলাদ মাহফিলে আত্মীয় স্বজন, ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও অনুরাগীরা অংশ নেন। পরিবার মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন স্তরে ছোট ছোট স্মরণসভা, কোরআন খানি ও দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করেছে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে—মরহুমের আত্মার মাগফিরাত ও জাতির কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করা হবে।

স্মরণসভায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকসহ অনেকেই তোয়াব খানকে ‘এক প্রজন্মের অনুঘটক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন—যিনি দেশের সাংবাদিকতাকে স্বাধীনতার পর থেকে নিয়ম ও আদর্শে দাঁড় করিয়ে স্ট্যান্ডার্ড প্রবর্তন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

জীবন ও কর্ম: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয়

তোয়াব খান ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন। এরপর প্রায় সাত দশক ধরে তিনি দেশের সংবাদ-শিল্প ও স্বাধীনতা-ভিত্তিক সাংবাদিকতায় অনন্য এক স্থান গড়ে তোলেন। স্বাধীনতার পর তিনি দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ওই সময়ই সংবাদ প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার মানদণ্ড স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

Manual1 Ad Code

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবের দায়িত্বও নিজের কাঁধে বহন করেন। এছাড়া তিনি প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তাঁর নামকরা অনুষ্ঠান ‘পিন্ডির প্রলাপ’ মুক্তিকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস ছিল—বৈপ্লবিক সময়ে রেডিওর মাধ্যমে যে সাহস, প্রত্যয় ও বাংলাদেশের স্বাধিকার-চেতনা ছড়িয়ে পড়ত, তার এক বড় কণ্ঠ ছিলেন তোয়াব খান।

সাংবাদিকতা ও নৈতিকতা: তার অবদানের বৈশিষ্ট্য

তোয়াব খানের সাংবাদিকতা ছিল নীতিবান ও দায়িত্বশীল। দীর্ঘ কর্মজীবনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সাংবাদিকতাকে কেবল সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি—বরং সেটিকে সমাজ-বদলানোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বাস করেছেন। তার সম্পাদকীয়, রেডিও ভাষণ ও সংবাদ সংকলনগুলোতে সততা, বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক অনুভূতি প্রকাশ পেত। তিনি অসংখ্য তরুণ সাংবাদিককে পথ দেখিয়েছেন এবং অনেকে তাকে রাখঢাকহীন উৎসাহ-প্রেরণার উৎস হিসাবে মনে করেন।

Manual1 Ad Code

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

তোয়াব খান রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একুশে পদকে সম্মানিত হন—এটি তার দীর্ঘকালীন সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক-জাতীয় অবদানের স্বীকৃতি। (অন্যান্য পুরস্কার/স্বীকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত রেকর্ড বা স্মৃতিচারণীর ভিত্তিতে আরও তথ্য যোগ করা যেতে পারে।)

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার—এবং সেখানে প্রচারিত কর্মসূচিগুলো—যেভাবে জনগণকে আন্দোলনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল, তার এক উল্লেখযোগ্য কণ্ঠ ছিলেন তোয়াব খান। ‘পিন্ডির প্রলাপ’ অনুষ্ঠান বহু মুক্তিযোদ্ধার মনোবল বাড়িয়েছিল; সেই কালের রেডিও সম্প্রচারের স্মৃতি এখনও ঐতিহাসিকভাবে সংরক্ষিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-ঐতিহ্যের সঙ্গে তার এই ভূমিকা তাকে সময়ের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর নেতা-সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

প্রাসঙ্গিক সময়রেখা (সংক্ষিপ্ত)

১৯৫৩ — সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় যোগদান।

স্বাধীনতা পর — দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ।

১৯৭৩–১৯৭৫ — প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সেক্রেটারি।

পরবর্তীতে — রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ ও প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সাহাবুদ্দীন আহমেদের প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন।

প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০২২ সালের ১ অক্টোবর — ইন্তেকাল; বয়স ৮৭ বছর।

Manual5 Ad Code

(উপরের সময়রেখায় বিস্তারিত পদ ও দায়িত্ব গ্রহণের নির্দিষ্ট সাল-সময়ের জন্য সরকারি রেকর্ড বা ব্যক্তিগত সূত্রে যাচাইযোগ্য তথ্য সংযোজন করা যেতে পারে।)

সহকর্মী ও রাজনৈতিক-সামাজিক প্রভাব

তোয়াব খানের মতো একাধিক প্রতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত ভূমিকাই তাকে সাংবাদিক-সম্প্রদায়ের কাছে সম্মানিত করেছে। যেমন—সম্পাদকীয় দফতর, সরকারি ও অ-সরকারি তথ্য সংস্থায় তার নেতৃত্বদান কৌশলগত যোগাযোগ ও তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলেছে। একই সঙ্গে তিনি সাংবাদিকতা ও রাষ্ট্রীয় তথ্যনীতির মধ্যকার সংলাপকে বিস্তৃত করেছেন—যা পরবর্তীকালে তথ্যপ্রবাহ ও গণমাধ্যম নীতিতে প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকে মনে করেন।

স্মরণ ও উত্তরাধিক্য

তোয়াব খানের প্রয়াণের পর থেকেই তার স্মৃতি নিয়ে স্মারক আলোচনা, রচণা ও ছোট-বড় নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে। উপস্থিতি রেখে বহু তরুণ সাংবাদিক তাঁর জীবনভাগ থেকে পেশাগত নীতিবোধ আর কাজের অনুশীলন শিখেছে—এটিই সম্ভবত তার সবচেয়ে স্থায়ী উত্তরাধিকার।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code