১৪ অক্টোবর ৫৬তম বিশ্ব মান দিবস

প্রকাশিত: ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৩, ২০২৫

১৪ অক্টোবর ৫৬তম বিশ্ব মান দিবস

Manual7 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৫ : আগামীকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিশ্বের ১৬৩টি দেশে একযোগে পালিত হবে ৫৬তম বিশ্ব মান দিবস (World Standards Day)।

বিশ্বব্যাপী এ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য—
“A Shared Vision for a Better World”
অর্থাৎ “সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব নির্মাণে – মান”।

মান—টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি

বিশ্ব মান দিবস মূলত সেই সব বিশেষজ্ঞদের সম্মান জানানোর দিন, যারা পণ্য ও সেবার মান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (International Standards) প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাজ করছেন।
এ বছর দিবসটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)–এর গোল-১৭: “অভীষ্ট অর্জনে অংশীদারিত্ব”-এর ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে অর্থ, প্রযুক্তি, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতিগত সংহতির মাধ্যমে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো অপরিহার্য।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ আজ আন্তর্জাতিক মান ও সার্টিফিকেশন ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
ISO (International Organization for Standardization), IEC (International Electrotechnical Commission) এবং ITU (International Telecommunication Union) যৌথভাবে এই দিবসের আয়োজন করে থাকে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও বিএসটিআই’র ভূমিকা

বাংলাদেশে বিশ্ব মান দিবস পালনের কেন্দ্রীয় সংগঠন হলো বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
বিএসটিআই দেশের শিল্পপণ্য ও সেবার মান নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষা ও সার্টিফিকেশন প্রদান করে থাকে।
২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ৩,২০০টিরও বেশি জাতীয় মান (BDS) প্রণয়ন করেছে, যার মধ্যে খাদ্যপণ্য, নির্মাণসামগ্রী, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, টেক্সটাইল, রাসায়নিক ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত অন্তর্ভুক্ত।

Manual3 Ad Code

বিএসটিআই মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম জানান—
“আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে পণ্যের মান নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন ও সেবা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা।”

বিশ্ব মান দিবস উপলক্ষে বিএসটিআই রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে আলোচনা সভা, ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শন, এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
১৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে মূল আলোচনা সভা।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান,
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বুয়েটের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরী।

Manual4 Ad Code

বিশ্বায়ন ও মান ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

বৈশ্বিক মান সংস্থা ISO–এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
বর্তমানে বিশ্বে ২৫,০০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক মান (ISO Standards) কার্যকর রয়েছে।
এর মধ্যে প্রায় ৪,০০০ মান সরাসরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত।
বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তা (ISO 22000), পরিবেশ ব্যবস্থাপনা (ISO 14001), এবং গুণমান ব্যবস্থাপনা (ISO 9001) মানগুলো এখন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শিল্প খাতে বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, যে দেশগুলো জাতীয় মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর, তাদের শিল্প উৎপাদন প্রবৃদ্ধি গড়ে ৩.২ গুণ বেশি।
উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে ১৯৯০-এর দশকে মান নিয়ন্ত্রণে বিনিয়োগ জিডিপির ১ শতাংশেরও কম ছিল, অথচ তারা বর্তমানে বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারের শীর্ষে রয়েছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও মানের বিবর্তন

বিশ্বব্যাপী এখন চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (Industry 4.0)—যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), রোবোটিক্স ও ডেটা অ্যানালিটিক্স উৎপাদন ব্যবস্থাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে।
এই নতুন প্রযুক্তিনির্ভর যুগে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত না করলে কোনো পণ্য বা সেবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানই আস্থার প্রতীক—যেখানে ভোক্তার আস্থা ও বাজারের স্থিতি একই সূত্রে গাঁথা।

Manual3 Ad Code

বাংলাদেশেও ডিজিটাল রূপান্তরের অগ্রযাত্রায় মান নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ডিজিটাল ডিভাইস, খাদ্যপ্রসেসিং, ওষুধ শিল্প এবং কৃষি-প্রযুক্তি খাতে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন যেমন ISO, HACCP, GMP ও CE Mark অর্জনের প্রবণতা বাড়ছে।

Manual3 Ad Code

মান সচেতনতা ও ভোক্তা অধিকার

বিশ্ব মান দিবসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধি।
ভোক্তাদের মানসম্পন্ন ও নিরাপদ পণ্য বেছে নেওয়া শুধু ব্যক্তিগত পছন্দ নয়, এটি সামাজিক দায়িত্বও বটে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন—
“যদি প্রতিটি ভোক্তা মাননির্ভর পণ্য ক্রয়ে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে বাজারে নিম্নমানের পণ্য টিকতে পারবে না। এটি জাতীয় অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক।”

আগামী দিনের দিকনির্দেশনা

বিশ্ব মান দিবসের মূল লক্ষ্য—“একটি মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা।”
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার, শিল্প উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
এসডিজি’র নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০৩০ সাল পর্যন্ত একই প্রতিপাদ্যে বিশ্ব মান দিবস পালন করা হবে, যাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়ন একসঙ্গে অগ্রসর হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ যদি মান ও মানদণ্ডের চর্চা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে পারে,
তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশটি উন্নত ও টেকসই অর্থনীতির ক্লাবে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code