সিলেট ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫
বিশেষ প্রতিবেদক | ঢাকা, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ : বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যাদের উচ্চারণ মাত্রই একটি পুরো যুগ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেই নামগুলোর শীর্ষে যিনি, তিনি এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো—যিনি সারা বিশ্বে চিরপরিচিত ‘পেলে’ নামে। ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার, আজ তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।
২০২২ সালের এই দিনে, ৮২ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফুটবলের এই মহীরুহ। সময় গড়িয়েছে, কিন্তু তার নাম, কীর্তি আর প্রভাব আজও অম্লান।
১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মিনাস গেরাইস প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন পেলে। দারিদ্র্যপীড়িত শৈশব থেকেই ফুটবল ছিল তার স্বপ্ন ও আশ্রয়। ছোটবেলায় মোজা গুঁজে বানানো বল কিংবা কাগজে মোড়ানো কাপড় দিয়েই শুরু হয় তার ফুটবলযাত্রা। সেই যাত্রা যে একদিন পুরো বিশ্বের আনন্দ, আবেগ আর বিস্ময়ের উৎস হয়ে উঠবে, তা হয়তো তখন কল্পনাতেও আসেনি।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন পেলে। যোগ দেন সান্তোস ক্লাবে। উপকূলীয় অঞ্চলের এই তুলনামূলক ছোট ক্লাবটিকেই তিনি রূপ দেন বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ফুটবল প্রতিষ্ঠানে। সান্তোসের জার্সিতে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য শিরোপা জয়ের পাশাপাশি দুটি কোপা লিবার্তাদোরেস ও দুটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জিতে ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে স্থায়ী ছাপ রাখেন তিনি। পেলের উপস্থিতিতেই সান্তোস হয়ে ওঠে বিশ্ব ফুটবলের এক অনন্য নাম।
তবে ক্লাব ফুটবলের সাফল্যের গণ্ডি পেরিয়ে পেলের আসল মহিমা ফুটে ওঠে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে তিনি জিতেছেন ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর—ফিফা বিশ্বকাপ—তিনবার, যা আজও অনন্য কীর্তি। ১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে জোড়া গোল করে নিজের আগমনী বার্তাই নয়, বরং একটি নতুন যুগের সূচনার ঘোষণা দেন পেলে।
১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপে চোটের কারণে বেশিরভাগ ম্যাচে খেলতে না পারলেও শিরোপা ধরে রাখে ব্রাজিল। আর ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে পেলের নেতৃত্বে গড়া ব্রাজিল দলটিকে আজও বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বকালের সেরা দলগুলোর একটি হিসেবে ধরা হয়। সেই টুর্নামেন্টে পেলের ফুটবল ছিল নিখুঁত শিল্পকর্মের মতো—গোল, অ্যাসিস্ট, নেতৃত্ব ও সৌন্দর্যের এক অনবদ্য মিশেল।
ফুটবল মাঠে পেলে ছিলেন শুধু একজন গোলস্কোরার নন; তিনি ছিলেন এক পূর্ণাঙ্গ শিল্পী। তার ড্রিবল, প্রথম স্পর্শ, শট নেওয়ার দক্ষতা এবং খেলার বুদ্ধিমত্তা যুগের পর যুগ ফুটবলারদের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। মাঠের বাইরেও তিনি ছিলেন বিশ্বজুড়ে ফুটবলের দূত। ফুটবলকে তিনি জনপ্রিয় করেছেন এমন সব অঞ্চলে, যেখানে খেলাটি তখনও পুরোপুরি পৌঁছায়নি।
পেলের প্রভাব ছিল কেবল ক্রীড়াঙ্গনে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ছিলেন গত শতাব্দীর অন্যতম প্রথম বৈশ্বিক আইকন। তার বিজয়ীর হাসি, বিনয়ী আচরণ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাকে করে তুলেছিল কোটি মানুষের আপনজন। ২০০০ সালে ফিফা তাকে ‘শতাব্দীর সেরা ফুটবলার’ হিসেবে ঘোষণা করে—যা তার দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারেরই স্বীকৃতি।
২০১৩ সালে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেলে বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর আমাকে একটি কারণে এই ক্ষমতা দিয়েছেন—মানুষকে খুশি করার জন্য। আমি যা-ই করি না কেন, এই কথাটি আমি কখনোই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি না।’ এই কথাই যেন সারাজীবন ধারণ করেছেন তিনি—খেলার মধ্য দিয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়াই ছিল তার সাধনা।
আজ পেলে নেই, কিন্তু ফুটবল আছে তার উত্তরাধিকার নিয়ে। মাঠে নামা প্রতিটি তরুণ খেলোয়াড়, বিশ্বকাপ ট্রফির দিকে তাকানো প্রতিটি স্বপ্নবান দল এবং ফুটবলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রতিটি দর্শকের স্মৃতিতে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল। তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে বিশ্ব ফুটবল তাই আবারও নীরবে শ্রদ্ধা জানায় সেই মানুষটিকে, যিনি খেলাটিকে দিয়েছিলেন প্রাণ, গতি ও আত্মা—যিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন ফুটবলের রাজা।

সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি