চলে গেছেন কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

প্রকাশিত: ২:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২০

চলে গেছেন কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

Manual3 Ad Code

॥ দীপক মুখার্জী ॥ কলকাতা, ১৫ নভেম্বর ২০২০ : রাজার মতই চলে গেলেন আরেক স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি কিংবদন্তী অভিনেতা রাজকুমার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদাখ্যাত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

তিনদিন আগেই শ্বাসনালিতে সফল অস্ত্রোপাচার হয় সৗমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের, চিকিৎসকরাও শারিরিক অবস্থা নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু শনিবার রাত থেকেই তাঁর শারীরিক আবস্থার অবনতি ঘটে। রবিবার সকালে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকে, এদিন সকালেই চিকিৎসকরা এই পরিস্থিতি স¤পর্কে তাঁর বাড়ির লোকদেরকেও জানিয়ে দেয়।
হাসপাতালে ৪২ দিন মৃত্যুর সাথে পা›জা লড়ে অবশেষে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আপদমস্তক একজন বাঙালি, সারাজীবন মাথা উঁচু করা ব্যক্তিত্ব বাংলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে একটি সুস্থ ও অনন্যধারার মনষ্কতায় পৌঁছে দিয়ে গেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা, মঞ্চঅভিনেতা , নাট্যকার, আবৃত্তিকার, কবি, চিত্র শিল্পী, থিয়েটার পরিচালক ও অনুবাদক। বহুগুণের অধিকারী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সনের ১৯ জানুয়ারি কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিট (বর্তমানে সূর্যসেন স্ট্রীট) জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহিত কুমার চট্টেপাধ্যায় ও মাতা আশালতা চট্টোপাধ্যায়।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহর কাছে কয়া গ্রামে। স্বাধীনতার অনেক আগেই তাঁরা সপরিবারে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে চলে আসেন। শিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবারের সন্তান ছিলেন সৌমিত্র। তাঁর কথাবার্তা, রুচি, ভাষা ব্যবহারে সেই পারিবারিক পরিমার্জনার ছাপ বয়ে বেড়িয়েছেন আজীবন।
পিতা মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রথম জীবনে কলকতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন, পরে যোগদেন সরকারি চাকরিতে। পিসিমা তারা দেবীর সাথে বিয়ে হয় স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বড় ছেলে কলকাতা হাই কোর্টের জাস্টিস রমা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের।
সৌমিত্রর জন্ম কলকাতাতে হলেও তাঁর জীবনের প্রথম দশ বছর কাটে কৃষ্ণ নগরে। সেখানকার সেন্ট জন্স স্কুলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েন তিনি। পিতার চাকুরী সূত্রে বার বার স্কুল বদলাতে হয় তাঁকে। হাওড়া জেলা স্কুল শেষে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে আইএসসি, তারপর কলকতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স পাস করার পর কলেজ অফ আর্টসে দুবছর অধ্যায়ন করেন।
১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার ছবিতে অপুর ভূমিকায় অভিনয় করেন। অভনয় নৈপুণ্যতায় মুগ্ধ হন সত্যজিৎ রায়, এর পরে তার ৩৪টি ছবির মধ্যে ১৪টি-তেই অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে তিনি মৃনাল সেন, তপন সিংহ, আজয় করের মত বাঘা পরিচালকদের সাথেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও সৌমিত্র কাজ করেছেন রেডিওতে, টিভি’র সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন তিনি।
দু’শরও বেশী বাংলা ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। বাংলা সিনেমার শেষ রাজ কুমার সৌমত্র চট্টোপাধ্যায় বহু পুরস্কার পেয়েছেন, এর মধ্যে উললেখ যোগ্য হলো ভারত সরকারে পদ্ম ভূষণ, বঙ্গ বিভূষণ, ফরাসি সরকারের কাছ থেকেও পেযেছেন সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার। এ ছাড়াও শতাধিক পুরুস্কার পেযেছেন তিনি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় তিনি জানান, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়ান চলচ্চিত্র জগত, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর কাজের মধ্যে বাঙালির চেতনা, ভাবাবেগ ও নৈতিকতার প্রতিফলন পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার ও অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়ানের খবর পেয়ে বেলভিঊ হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেখানে ফেলুদা’কে তিনি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একজন ক্ষণজন্মা বাঙালি ছিলেন, যিনি সামাজিক বিপদে সব সময় মানুষের পাশে ছুটে গিয়েছেন। তাঁর প্রয়ানে মুখ্যমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সৌমিত্র কন্যা পৌলমী চট্টোপাধ্যায় (বসু) বাসসকে জানান, তাঁর মরদেহ দুপুর দু’টো নাগাদ নিয়ে যাওয়া হবে অভিনেতার গল্ফগ্রীণের বাড়িতে। তারপর টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নেয়া হবে এবং সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাবে সমস্ত শিল্পী-কুশলী ও সর্বস্তরের মানুষ। বিকেল সাড়ে তিনটায় মরদেহ নেয়া হবে রবীন্দ্র সদনে। সেখান থেকে শেষকৃত্বর জন্য কেওড়া তলা শ্মশানে নেয়া হবে। কেওড়াতলা শ্মশানে গান স্যালুট দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা ও বিদায় জানানো হবে বাংলার রাজকুমারকে।
গত ৪২ দিন আগে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন ছিলেন তিনি।

Manual2 Ad Code

ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

Manual4 Ad Code

স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি কিংবদন্তী অভিনেতা রাজকুমার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

সৈয়দ অামিরুজ্জামানের শোক

Manual2 Ad Code

স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি কিংবদন্তী অভিনেতা রাজকুমার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান।

Manual2 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code