রবীন্দ্রনাথ ও ঔপনিবেশিকতা : একটি সংক্ষিপ্ত নোট

প্রকাশিত: ১:৩১ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২১

রবীন্দ্রনাথ ও ঔপনিবেশিকতা : একটি সংক্ষিপ্ত নোট

Manual7 Ad Code

।।|| সৈয়দ আমিরুজ্জামান ||।।

সেই ১৮৯৮ সালে, ভারতে সিডিশন বিল পাস হওয়ার একদিন আগে, কলকাতার টাউন হলে রবীন্দ্রনাথ ‘কণ্ঠরোধ’ শিরোনামের যে প্রবন্ধটি পাঠ করেন, তার প্রায় শুরুতেই তিনি একটি স্বীকারোক্তিমূলক উচ্চারণকে আমাদের সামনে হাজির করেন এভাবে: ‘আমি বিদ্রোহী নহি, বীর নহি, বোধ করি নির্বোধও নহি।’
নিঃসন্দেহে এ উচ্চারণে বিনয় আছে, যে গুণটিকে রবীন্দ্রনাথ সুযোগ পেলেই তারিফ করেছেন। আবার আমরা এও জানি, সমাজের শক্তিশালীদের কাছে বিদ্রোহীরা বেয়াদব হিসেবে চিহ্নিত হয়। সেটি আরেক প্রসঙ্গ। তবে রবীন্দ্রনাথ তার ভাষ্য মোতাবেক মোটেই ‘নির্বোধ’ নন। জোর দিয়েই বলা দরকার, তিনি অনেক বিষয়ই আগেভাগে দেখতে পেতেন, বুঝে ফেলতেন, ধরতে পারতেন। ওই কথাটা বেশ পুরনো হলেও আবারো ফিরে আসে: কবিরা দ্রষ্টা। রবীন্দ্রনাথও দ্রষ্টা ছিলেন। কয়েকটি উদাহারণ দেওয়া যাক।

‘ক্যাথলিক সোশ্যালিজম’ ও ‘সোশ্যালিজম’ প্রবন্ধ দুটির কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। বোধ করি রবীন্দ্রনাথই ভারতবর্ষে প্রথম দেখাতে পেয়েছিলেন যে, ইতিহাসের মঞ্চে ‘সোশ্যালিজম’ হাজির হবে বিজয়ীর বেশেই। উনিশ শতকের শেষ দিকে রবীন্দ্রনাথ যা দেখেছিলেন তা ১৯১৭ সালেই প্রমাণিত হয়েছে রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে, যদিও রবীন্দ্রনাথ ও সমাজতন্ত্র একইসঙ্গে যায় না, যদিও ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব রবীন্দ্রনাথকে ভেতর থেকে নাড়া দেয়নি।

ইংরেজদের যে ভারত ছেড়ে চলে যেতেই হবে তাও আগেভাগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, যদিও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান আগাগোড়া বৈপ্লবিক ছিল না। একজন নজরুল ইসলাম বা একজন ফ্রানৎস ফানোর মতো রবীন্দ্রনাথ চেঁচিয়ে বা চিৎকার করে পূর্ণ স্বাধীনতার ডাক দিতে পারেননি, যদিও উপনিবেশবাদের নৃশংসতাকে রবীন্দ্রনাথ আগেভাগেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং তাকে ধিক্কারও দিয়েছিলেন।

সেই ১৯০৫ সালে লেখা ‘ইম্পীরিয়ালিজম’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেন: ‘ব্রিটিশ এম্পায়ারের মধ্যে এক হইয়া যাওয়াই ভারতবর্ষের পক্ষে যখন পরমার্থলাভ, তখন সেই মহদুদ্দেশে ইহাকে জাঁতায় পিষিয়া বিশিষ্ট করাই ‘হিউম্যানিটি’। ভারতবর্ষের কোনো স্থানে তাহার অধীন শক্তিকে সঞ্চিত হইতে না দেওয়া ইংরেজ সভানীতি অনুসারে নিশ্চয়ই লজ্জাকর; কিন্তু যদি মন্ত্র বলা হয় ইম্পীরিয়ালিজম, তবে তাহা মহামনুষ্যত্বের পক্ষে একান্ত লজ্জাকর তাহা রাষ্ট্রনীতির পক্ষে চূড়ান্ত গৌরব হইয়া উঠিতে পারে’।

হ্যাঁ, চেঁচিয়ে বা চিৎকার করে কথা বলাটাও রবীন্দ্রনাথের পক্ষে আসলেই সম্ভব ছিল না; বরঞ্চ সেটা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ। চেঁচিয়ে কথা বলার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ নিজেই একটি নিবন্ধ ফেঁদেছিলেন, যার মূল কথাটা হলো এই যে, ‘সভ্য’ লোকেরা চেঁচিয়ে কথা বলে না। আসলেই ‘সভ্য’/‘অসভ্যে’র স্পষ্ট বিভাজনে রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ দারুণ আস্থাশীল। এছাড়া জাপানের যে তুমুল বৈষয়িক উন্নতি ঘটবে তাও রবীন্দ্রনাথ বেশ আগেই বুঝে ফেলেছিলেন। সর্বোপরি উপনিবেশবাদী সংস্কৃতি ও ঔপনিবেশিক হীনমন্যতা থেকে ভারতবাসীর মুক্তি যে মোটেই সহজ নয়, তাও ভালো করেই বুঝেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, যেমন তিনি বুঝেছিলেন উগ্র জাতীয়তাবাদের দৌড়ও।

Manual1 Ad Code

আসলে উগ্র জাতীয়তাবাদের সমালোচনাও পাই রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে, যদিও রবীন্দ্রনাথ সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের মধ্যে এক অমীমাংসিত টানাপড়েনেও ভুগেছেন বারবার। বিশেষ করে ১৮৯৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎসভার বার্ষিক অধিবেশনে পঠিত রবীন্দ্রনাথের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ‘বাংলা জাতীয় সাহিত্য’-এ ওই টানাপড়েনের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ একজন দ্রষ্টাই বটে, যিনি আগেভাগে দেখে ফেলেন ও বুঝে ফেলেন। আবার অনেক কিছুই একসঙ্গে বুঝতে পারেন বলেই টানাপড়েনেও ভোগেন। এখানে এও বলে নেওয়া দরকার, রবীন্দ্রনাথের উপনিবেশবাদবিরোধিতার গায়েই লেগে থাকে তার ঔপনিবেশিক টানাপড়েনের বিভিন্ন চিহ্ন।

Manual6 Ad Code

মাতৃভাষার পক্ষে ওকালতি ও রবীন্দ্রনাথের ঢাকাসফর

রবীন্দ্রনাথ প্রথম ঢাকা এসেছিলেন মাতৃভাষার পক্ষে ওকালতি করতে। বিষয়টি কৌতূহল-উদ্দীপক, কেননা কাজটা রাজনৈতিক। সাহিত্য করাটা আশলে যে রাজনীতির বাইরের বিষয় নয়, তা অনুধাবনের ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা বা ঔদাসীন্য রবীন্দ্রনাথের ছিল না। যদিও তার ভক্তদের মধ্যে তাই লক্ষণীয়। এই যে মাতৃভাষার দাবি উত্থাপন, এর গুরুত্ব কবির কাছে এতখানিই যে, প্রায় পঁচিশ-ছাব্বিশ…
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি (১৯১০)
১৫৭টি গীত নিয়ে গীতাঞ্জলি প্রথম প্রকাশিত হয় আগস্ট ১৯১০ (ভাদ্র, ১৩১৭ বঙ্গাব্দ) খৃষ্টাব্দে, শান্তিনিকেতন গ্রন্থনবিভাগ থেকে। ‘শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ নাম স্বাক্ষরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিজ্ঞাপন (নিচে উদ্ধৃত) করেন শুরুতে। বিজ্ঞাপন এই গ্রন্থের প্রথমে কয়েকটি গান পূর্বে অন্য দুই-একটি পুস্তকে প্রকাশিত হইয়াছে। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে যে-সমস্ত গান পরে পরে রচিত হইয়াছে…
অনিঃশেষ প্রাণ: হইয়াও হইল না শেষ
[২৮ নভেম্বর ২০১১ তারিখ সন্ধ্যায় ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে এক্সকালিবার এন্টারটেইনমেন্ট ও যাত্রিক-এর উদযোগে আয়োজিত হয় রবীন্দ্রনাথের কাজ ও জীবনালেখ্য নিয়ে মঞ্চায়ন–‘জীবন অনিঃশেষ: লাইফ আনএন্ডিং‘। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় আলেখ্য পাঠ ও অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর ও জগন্নাথ গুহ। বি. স.] পাঠ করছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুর;

#

সৈয়দ আমিরুজ্জামান

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;

বিশেষ প্রতিনিধি, সাপ্তাহিক নতুনকথা;

Manual3 Ad Code

সম্পাদক, আরপি নিউজ;

Manual7 Ad Code

সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা;

‘৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক

সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।

E-mail : rpnewsbd@gmail.com

মুঠোফোন: ০১৭১৬৫৯৯৫৮৯

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code