স্বাস্থ্য সচিবের দফতরে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে হেনস্তার পর থানায় হস্তান্তর

প্রকাশিত: ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ, মে ১৮, ২০২১

স্বাস্থ্য সচিবের দফতরে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটকে হেনস্তার পর থানায় হস্তান্তর

Manual8 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৮ মে ২০২১ : প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সচিবের দফতরে আটকে রেখে হয়রানি করা হয়েছে। তথ্য চুরির মতো হাস্যকর অভিযোগ এনে তাকে বেলা আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞার রুমে আটকে রাখা হয়। এ সময় রোজিনা ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লেও হাসপাতালে নিতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তিনি অসুস্থ হয়ে একাধিকবার বমিও করেছেন।

তারপরও তাকে হাসপাতালে নিতে দেওয়া হয়নি। বরং রাত সাড়ে ৮টায় গুরুতর অসুস্থ রোজিনা ইসলামকে পুলিশ ভ্যানে করে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। এর আগে গতকাল দুপুরে রোজিনা ইসলাম করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন।
জানা গেছে, গতকাল দুপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে রোজিনা ইসলাম সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সচিবের দফতরে যান।

Manual1 Ad Code

এ সময় সচিরের দফতরের কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ এনে তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এর প্রতিবাদ করলে তাকে প্রথমে হেনস্তা করা হয়। পরে পিএসের রুমে আটকে রেখে সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশকে খবর দেন সচিবের দফতরের অতিউৎসাহী কর্মচারীরা। এ সময় সচিব তার দফতরেই ছিলেন।

কিন্তু তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো রকম পদক্ষেপ নেননি। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্তা করে। দীর্ঘ সময় আটকে রাখায় গরমে ও অস্বস্তিতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় সচিবালয় বিটে কর্র্মরত অন্য সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু সচিব কারও সঙ্গে কথা বলেননি।
এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে একাধিকবার তার বিরুদ্ধে এজাহার লিখে তা আবার পরিবর্তন করে থানায় সোপর্দ করতে চেয়েছে। এ সময় সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরামের নেতারাসহ প্রায় ৪০ জন সাংবাদিক সচিবের দফতরে তাদের সহকর্মীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। চেষ্টারত সাংবাদিকরা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছিলেন। সাংবাদিক নেতারা এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা, উষ্মা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সচেতন নাগরিকরা প্রায় সারা দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা করে তারা বলেছেন, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সরকারের যে কোনো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা একজন সাংবাদিকের অধিকার। এতে বাধা দেওয়াই বরং স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।

Manual4 Ad Code

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেও এর কোনো সমাধান করতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- প্রথম আলোর রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। যতটুকু জেনেছি রোজিনা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কিন্তু এখনো আটকে রাখা হয়েছে, হাসপাতালে নিতে দিচ্ছে না। আমি তাকে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। নতুবা উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।

Manual3 Ad Code

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালীন নোমানী বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিবের অফিস স্টাফদের অসদাচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। যা দেশের গণমাধ্যমের জন্য হুমকিস্বরূপ।

Manual5 Ad Code

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিবের অফিস স্টাফদের অসদাচরণ, আটকে রেখে হয়রানি ও তথ্য চুরির মতো হাস্যকর অভিযোগ এনে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, “এটা গণস্বার্থ রক্ষার জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও প্রগতিশীল সাংবাদিকতার পরিপন্থী। যা গণমুখী সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের জন্যও হুমকিস্বরূপ।”

সাংবাদিক দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন ফেসবুক স্টেটাসে লিখেছেন, “সত্য প্রকাশে কন্ঠবোধ (গলা চেপে ধরা) এটা না গনমাধ্যম, না রাষ্ট্র কারো জন্যই সুখকর নয়। আমরা একদিকে বলি স্বাধীন গনমাধ্যম, আবার অন্য দিকে সত্য প্রকাশ করায় সাংবাদিকের কন্ঠ চেপে ধরতে। এটা শুধু গনমাধ্যকর্মীদের নয়, একটি গনতান্ত্রিক দেশের জন্যও লজ্জা। কতিপয় দুর্নীতিবাজ আমলাদের এমন নির্লজ্জ কর্মকান্ডে বহির্বিশ্বে নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। তাই জেবুন্নেছাদের এখুনি থামান। মুক্তি দিন রোজিনা আাপাকে।”

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code