প্রকৃতির গল্প

প্রকাশিত: ৫:৫৪ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০২১

প্রকৃতির গল্প

।।|| সুদর্শন শীল ||।।

একটি ঘন বনে পথ হারিয়ে অর্ণব দিশেহারা। দিনের বেলায়ই এই বনে অন্ধকারে কিছু দেখা যায়না, রাতের বেলা তো ভয়াবহ অন্ধকার। দুইহাত দূরের কিছু দেখা যায় না। দূরে দুই একটা হিংস্র পশুর চিৎকার শুনা যাচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিবেশে কিভাবে রাতটা কাটাবে এই চিন্তায় অর্ণবের বুক ঢিপঢিপ করছে।
হঠাৎ কয়েকহাত দূরে একটি ঝোপের পিছনে একটি ছায়া নড়েচড়ে ওঠলো। হিংস্র কোন পশু হবে এই ভয়ে অর্ণবের সারাশরীর হিম হয়ে গেছে। ছায়াটি নড়েচড়ে একটু কাছে আসলো, সাথে সাথে নারী কন্ঠের ফোঁপানী শোনা গেলো।
অর্ণব সাহস করে প্রশ্ন করলো-কে তুমি?
ছায়াটি আরো একটু কাছে আসলো। এবার অর্ণব স্পষ্ট দেখতে পেলো ক্লান্ত,বিধ্বস্ত, ও আহত এলোচুলের নারীমূর্তি।
আবারও জিজ্ঞেস করলো- -কে তুমি? তোমার এই অবস্থা কে করলো?
– আমি প্রকৃতি।
মিনমিনে কণ্ঠে জবাব।
একটু থেমে বললো,
– আমার এ অবস্থার জন্য তুমি দায়ী। তোমরা দায়ী।
অর্ণবের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি বা আমরা এই মেয়ের কী করলাম? সে ভাবলো হয়তো ভুল শুনেছে।
অর্ণব আবারো জিজ্ঞেস করলো আমি কী করলাম তোমার?
উত্তর আসলো-
– – আমি গাছ হয়ে তোমাদের ছায়া দেই,ফল দেই,কাঠ দেই,অক্সিজেন দেই।
নদী হয়ে জল দেই, পলি দেই, মাছ দেই।
পাহাড়-পর্বত হয়ে তোমাদের রক্ষা করি।
আমার আশ্রয়ে অনেক প্রাণী বাঁচে।অথচ বিনিময়ে তোমরা আমাকে আঘাত করো, ধ্বংস করো।তাইতো আজ আমার এই অবস্থা। তোমরা কত নিঃষ্ঠুর! এর জন্য তোমাদের শাস্তি পেতে হবে। শাস্তিস্বরূপ মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ
তোমাদের আঘাত হানবে। তোমাদের শাস্তি পেতেই হবে।

অর্ণব এবার বুঝতে পারছে প্রকৃতির পরিচয়। আসলেই আমরা কতো নিঃষ্ঠুর।হঠাৎ বনে প্রবল ঝড় ওঠলো। অর্ণব আর প্রকৃতিকে দেখতে পাচ্ছেনা। প্রবল ঝড়ে বিশাল একটি গাছ মড়মড় করে অর্ণবের মাথায় ভেঙ্গে পড়ছে। অর্ণব দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। দৌড়াতে পারছেনা।
ঘুম ভেঙ্গে গেলো অর্ণবের। দুঃস্বপ্ন দেখছিল সে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে,বুক এখনও ঢিপঢিপ করছে।
অর্ণব ভাবছে মানুষ কত
নিঃষ্ঠুর!!
# সুদর্শন শীল
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
গণিত
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ