ইউক্রেন যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তা বন্ধ করার চেষ্টা করছে রাশিয়া: পুতিন

প্রকাশিত: ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪

ইউক্রেন যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তা বন্ধ করার চেষ্টা করছে রাশিয়া: পুতিন

Manual3 Ad Code

কূটনৈতিক প্রতিবেদক | মস্কো (রাশিয়া), ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাৎকার নিয়ে ইন্টারনেটে ঝড় তুলেছেন মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন। এক্সে ওই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের পর তা এরইমধ্যে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি এখন ভিউয়ারের সংখ্যায় এক্সের সব রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে। এক্সের মালিক ইলন মাস্ক ওই ভিডিও নিজের একাউন্ট থেকে শেয়ার করে সবাইকে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারটিতে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান সংঘাতকে। টাকার কার্লসন দাবি করেছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার ও গণমাধ্যম এই সংঘাত ইস্যুতে নিজ দেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখেছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে তিনি সবার সামনে সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পশ্চিমা মিডিয়া আউটলেটগুলি তাদের পাঠক এবং দর্শকদের কাছে মিথ্যা প্রচার করেছে। কিন্তু মার্কিনিদেরও অধিকার আছে যুদ্ধ সম্পর্কে সত্যিটা জানার।
দুই ঘণ্টারও বেশি সময়ব্যাপী সাক্ষাৎকারটির মূল অংশগুলো এই রিপোর্টে তুলে ধরা হলো-

‘ইউক্রেনই ২০১৪ সালে এই যুদ্ধ শুরু করেছিল। আমাদের লক্ষ্য এই যুদ্ধ বন্ধ করা’: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ২০২২ সালে মস্কো কোনো যুদ্ধ শুরু করেনি। বরঞ্চ ২০১৪ সালে ইউক্রেন যে যুদ্ধ শুরু করেছিল তা বন্ধ করার চেষ্টা করছে রাশিয়া।

Manual3 Ad Code

৮ বছর ধরে ডনবাসে ইউক্রেনের সামরিক অভিযান চলার পর ২০২২ সালে এসে রাশিয়া পালটা অভিযান ঘোষণা করে। পুতিন বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মিনস্ক চুক্তি করে শত্রুতার অবসান ঘটাতে চেয়েছিলেন তিনি। তার বিশ্বাস ছিল, স্থানীয় জনগণকে ইউক্রেনে ফিরে যেতে রাজি করা হলে এবং কিয়েভ যদি তার শর্ত পূরণে রাজি হতো তাহলে এই অঞ্চলের সংকট নিরসন করা যেত। কিন্তু কিয়েভের নীতিনির্ধারকদের তেমন আগ্রহ ছিল না।

এছাড়া সংঘাতের প্রথম দিকে রাশিয়া এবং ইউক্রেন এই শত্রুতা শেষ করার কাছাকাছি ছিল বলেও জানান পুতিন। তিনি বলেন, ২০২২ সালের বসন্তে ইউক্রেনের রাজধানীর কাছ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়া সেনা সরিয়ে নেয়ার পরই ইউক্রেন সব কূটনীতি ভুলে গিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

Manual3 Ad Code

‘ন্যাটো শুধু হুমকির উদ্বেগ তৈরি করে’’

পুতিন বলেন, পোল্যান্ড বা লাটভিয়ার মতো ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়া শুধুমাত্র সামরিক সংঘর্ষে জড়াবে, যদি তারা আগে রাশিয়াকে আক্রমণ করে। রাশিয়া আগ বাড়িয়ে কোনো দেশকে আক্রমণ করবে এসব দাবি করা হচ্ছে খামোখা উদ্বেগ তৈরির চেষ্টা। রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে কিংবা নির্মম আক্রমণ চালাবে বলা হচ্ছে শুধুমাত্র পশ্চিমাদের কিছু ভয়ঙ্কর গল্প। এটি হচ্ছে মার্কিন ও ইউরোপীয় জনগণের থেকে অতিরিক্ত কর আদায়ের একটি চেষ্টা।

‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়া চীনকে ভয় পায় না’

যুক্তরাষ্ট্র চীনের উত্থানকে যেভাবে ভয় পায়, রাশিয়া সেভাবে ভয় পায়না বলে মন্তব্য করেন পুতিন। কার্লসন রুশ প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করেন, ব্রিকস কি চীনের অর্থনীতি দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত হতে যাচ্ছে কিনা? এর উত্তরে পুতিন বলেন, বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র নীতি আগ্রাসী নয়। রাশিয়া চীনের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য তৈরি করেছে।

‘সংঘাতের অবসান চাইলে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করুন’

Manual2 Ad Code

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনে সত্যিই সংঘাত বন্ধ করতে চায়, তবে দেশটির উচিৎ কিয়েভকে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করা। কিয়েভকে অস্ত্র দেয়া বন্ধ করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শত্রুতার শেষ হবে। পুতিন আরও বলেন যে, এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং অত্যন্ত দুঃখজনক যে কিয়েভ তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কথা শুনে যুদ্ধ করতে আগ্রহী হয়েছিল। তারা রাশিয়ার সাথে একটি খসড়া যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার জানায়। অথচ প্রাথমিকভাবে তারা শান্তি আলোচনায় সম্মত ছিল। সেই সংঘর্ষ আজও অব্যাহত রয়েছে, অথচ জনসন আর বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী নেই।

পশ্চিমের সাথে সম্পর্ক নিয়ে যা বলেন পুতিন

পুতিন বলেন, রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন মেনে নিয়েছিল। আমাদের আশা ছিল পশ্চিমাদের সঙ্গে মতাদর্শগত পার্থক্য দূর হয়ে গেলে তাদের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপিত হবে। কিন্তু এটি কখনই ঘটেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ‘স্যাটেলাইট’ রাষ্ট্রগুলো ১৯৯০ এর দশকে রাশিয়ার বিদ্রোহীদের রাজনৈতিক, তথ্যগত, আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা প্রদান করে উত্তর ককেশাসে বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেছিল। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের অভ্যুত্থানেও পশ্চিমারা জড়িত ছিল।

ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পুতিন

পুতিন বলেন, ন্যাটো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা আর পূর্ব দিকে তার অঞ্চল সম্প্রসারণ করবে না। তবে তারা পূর্ব ইউরোপ ও বাল্টিক দেশগুলিকে ন্যাটোতে যুক্ত করে তারা এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক ব্লক এখন ইউক্রেনকেও টেনে আনতে চায়। পুতিন ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে একটি বিশাল রাজনৈতিক ভুল বলে অভিহিত করেন। পুতিন জানান, তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে রাশিয়াকে তারা ন্যাটোতে যুক্ত হতে দেবে কিনা। কিন্তু ক্লিনটন বলেছিলেন যে এটি সম্ভব হবে না। এরমধ্য দিয়ে পুতিন ইঙ্গিত দেন যে, রাশিয়ার আগ্রহ থাকার পরেও পশ্চিমারা বিশ্বে শত্রুতা বজায় রাখতে আগ্রহী ছিল।

‘নর্ড স্ট্রিম কে উড়িয়ে দিয়েছে?’

বাল্টিক সাগরের মধ্য দিয়ে রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যেকার নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন কে উড়িয়ে দিয়েছে? পুতিনের কাছে এই প্রশ্ন করেন কার্লসন। পুতিন উত্তরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এ কাজ করেছে। সিআইএ ও ন্যাটোর এ নাশকতার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন প্রমাণ রাশিয়ার কাছে কিনা প্রশ্ন করা হলে পুতিন বলেন, এ ধরণের ক্ষেত্রে আপনাকে দেখতে হবে যে এই নাশকতার ফলে কার লাভ হয়েছে?

Manual5 Ad Code

ইলন মাস্ককে থামানো যাবে না – পুতিন

বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ককে থামানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন পুতিন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং জেনেটিক্সের সাম্প্রতিক অর্জনগুলিকে গত শতকের পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশের সাথে তুলনা করেন পুতিন। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে দেশগুলি যখন বিপদ বুঝতে শুরু করে তখনই তারা এসব নতুন প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে চুক্তি করে।

গের্শকোভিচের মুক্তির বিষয়টি উড়িয়ে দেননি পুতিন
মার্কিন সাংবাদিক ইভান গের্শকোভিচকে শান্তির ইঙ্গিত হিসেবে মস্কো ছেড়ে দিতে প্রস্তুত কিনা এমন প্রশ্ন করা হয় পুতিনকে। গত বছর রাশিয়ায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ওই সাংবাদিককে। পুতিন বলেন, রাশিয়া পশ্চিমাদের সাথে কাজ করার জন্য প্রস্তুত। তবে পশ্চিমারা এই আগ্রহের দাম দেয়নি। তবে পুতিন সরাসরি গের্শকোভিচের মুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করেননি।

‘রুশবিরোধী যে কাউকে আজীবন সমর্থন দিয়ে যাবে পশ্চিমারা’

ক্ষমতা পাওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নব্য-নাৎসি ও জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন পুতিন। তিনি বলেন, জেলেনস্কির মতো মানুষেরা সাধারণত আক্রমনাত্মক হয়। তাদের থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব তাদের সমর্থন করে আসছে। রাশিয়ার বিরোধিতা করলেই পশ্চিমাদের সমর্থন পাওয়া যায়। আর জেলেনস্কির জন্য এই সমর্থন দরকার ছিল। কিন্তু তিনি ইউক্রেনের জনগণের কাছে যে শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন জেলেনস্কি। পুতিন বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, ইউক্রেন তার নিজস্ব পরিচয় খোঁজার জন্য একটি অনুসন্ধানে নেমেছিল। কিন্তু তারা ভাল কোনো বিকল্প খুঁজে পায়নি। এরপর তারা কিছু ‘ভুয়া নায়কদের’ জাতীয় বীর হিসেবে প্রচার শুরু করে, অথচ তারা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর সহযোগী।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code