সিলেট ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার), ২৫ মে ২০২৫ : “আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন উপযোগী যৌক্তিক মজুরি নির্ধারণ করুন। এ নিয়ে কোনো তালবাহানা ও গড়িমসি গ্রহণযোগ্য না। শ্রমিকরা কারো দয়া চায় না। তারা দৈনিক ৮ ঘন্টা শ্রম দিয়ে অর্থনীতিতে যে মূল্য যুক্ত করে, তার পূর্ণ পারিশ্রমিক চায়।”
“বৈষম্য দুর কর, চা শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ কর, চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণের দাবি তুলে ধরুন, চা শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃত্বে ন্যায্য মজুরি, ভূমি অধিকার, সামাজিক সুরক্ষা, মর্যাদাপূর্ণ মানবিক জীবন প্রতিষ্ঠায় ৭ দফার সংগ্রামকে শক্তিশালী করুন।”- এইসব শ্লোগান ও দাবী নিয়ে শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত চা শ্রমিক কনভেনশনে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান এসব কথা বলেন।
আজ রবিবার (২৫ মে ২০২৫) দুপুরে শ্রীমঙ্গল শহরস্থ জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে এ কনভেনশন’ অনুষ্ঠিত হয়।
কনভেনশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ এবং প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন।
আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মঈনুর রহমান মগনু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) হবিগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জুনায়েদ আহমদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সিলেট জেলা আহবায়ক আবু জাফর, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবুল হাসান।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন চা শ্রমিক আদিবাসী নেতা পরিমল সিংহ বাড়াইক, সাইদুল ইসলাম সোহেল, ভজন, রাজিব মিয়া, এম এ আহাদ, বীরেন শীল, তুম্পা চাষী, বিমল কর্মকার, প্রেম কুমার পাল সহ বিভিন্ন জাতীয় শ্রমিক সংগঠন, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, দেশের ৬টা ভ্যালীর বিভিন্ন চা বাগানের সাবেক ও বর্তমান পঞ্চায়েত কমিটি এবং বিভিন্ন চা শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বাসদ নেতা ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবুল হাসানের সঞ্চালনায় কনভেনশন সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপ্লব মাদ্রাজি পাশি। এ কনভেনশনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নেতা কমরেড আবুল হাসান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান আরও বলেন, সামান্য কিছু সুযোগ-সুবিধাসহ দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে আট ঘন্টা, কখনো-বা আরো অধিক সময় ধরে কাজের বিপরীতে এই সামান্য পারিশ্রমিক শোষণ-বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি। মজুরী বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবীনামা নিয়ে দরকষাকষি ও আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাগান মালিকদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহার করতে হবে ও সরকারকেও চা-শ্রমিকদের দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে ন্যায্য ও মানবিক উদ্যোগ নিতে হবে। একইসাথে, চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য শ্রম আইনের কার্যকর বাস্তবায়নের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য সম-পর্যায়ের খাতের সর্বনিম্ন মজুরি বিবেচনায় নিয়ে মর্যাদাপূর্ণ জীবন ধারণের উপযুক্ত ও চা-শ্রমিকদের নিকট গ্রহণযোগ্য ন্যায্য পারিশ্রমিক নির্ধারণে বাগান মালিক, বাংলাদেশীয় চা সংসদ, শ্রম অধিদপ্তর ও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রতি দুই বছর পরপর চা-শ্রমিক ও বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে মজুরি সংক্রান্ত চুক্তি নবায়নের রীতি রয়েছে, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মজুরি নির্ধারণে বাস্তবে একতরফাভাবে বাগান কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তথাপি দীর্ঘদিন ধরে চা-শ্রমিকরা মজুরি চুক্তির বাইরে রয়েছে। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির এই সময় চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মাত্র ৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব চা-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি অবজ্ঞা ও নিছক উপহাসমূলক অধিকার লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলছেন, চা-শ্রমিকদের প্রাপ্ত আবাসনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নিয়েও একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, দেশের অন্য যে-কোনো খাতের তুলনায় চা শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন ও শোষণ-বৈষম্যমূলক। অথচ সার্বিক বিবেচনায় এ খাতটি অর্থনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, এখন পর্যন্ত কোনো পরিসংখ্যান বা তথ্য-উপাত্ত দিয়েও কেউ বলতে পারেননি যে, চা-বাগানের মালিক পক্ষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা এমন কোনো অবস্থায় আছেন যে, যাদের অবদানের ওপর নির্ভর করে চা-শিল্প বিকাশমান, সেই শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদানে তারা অক্ষম। বরং এটি একটি লাভজনক বাণিজ্যিক খাত। অন্যদিকে চা-শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরিসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু মালিকপক্ষের মর্জির ওপর ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। চা শ্রমিকদের দেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবনের পাশাপাশি সমতাভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের নিকট গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, দেশের “ন্যূনতম মজুরি বোর্ড” অন্যান্য খাতের ন্যূনতম মজুরি যেখানে কয়েক গুণ বেশি নির্ধারণ করেছে, সেখানে কোন অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের “গাইড লাইন” উপেক্ষা করে বারবার চা বাগান মালিক পক্ষের নির্ধারণ করা ন্যূনতম মজুরির হার বহাল রেখে শ্রম মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
বক্তব্য রাখছেন কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান। ছবি – আরপি নিউজ
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, কনভেনশনে চা শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও সার্বিক সহযোগিতা রুটি-রুজির সংগ্রামের পাশাপাশি সার্বিক মুক্তির সংগ্রামে প্রেরণা জোগাবে।
বক্তব্য রাখছেন কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান। ছবি – আরপি নিউজ
শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত চা শ্রমিক কনভেনশনের ঘোষণাপত্রে বলা হয়, শ্রমিকদের মানবিক জীবনের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হতে আজকের এই কনভেনশনে আগত শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের জাতীয় নেতৃত্বসহ অতিথিবৃন্দ, সংবাদ কর্মী, প্রশাসনের প্রতিনিধি সহ সকলাকে শুভেচ্ছা। সম্মানিত সুধি, জনপ্রিয়তা ও ব্যবহারের বিচারে পৃথিবীতে যেমন, বাংলাদেশেও পানির পরেই চায়ের অবস্থান। কিন্তু এই জনপ্রিয় পানীয় চা উৎপাদন ক্ষেত্র মনোরম চা বাগানের সুন্দর পরিবেশ, সবুজ চা গাছের আড়ালে চাপা পড়ে আছে চা-শ্রমিকদের জীর্ণ-শীর্ণ করুণ চেহারা ও দীর্ঘ শ্বাস। ১৮৫৪ সালে মালিনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক চা চাষের শুরু। গাছ হিলায়গা তো প্যায়সা মিলেগা’ এই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে দখলদার ব্রিটিশ শাসকরা তৎকালীন ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, অস্ত্র প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে বৃহত্তর আসাম ও সিলেটে চা বাগান গড়ে তোলার জন্য হাজার হাজার অনগ্রসর মানুষকে নিয়ে আসে। বছরের পর বছর জঙ্গল পরিষ্কার করে, হিংস্র পশুর আক্রমণে জীবন দিয়ে, জোঁক ও মশার কামড় খেয়ে চা বাগান ও চা শিল্প গড়ে তুলেছিল এই চা শ্রমিকরা। সুন্দর ও মানবিক জীবনের স্বপ্ন- আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নিজেদের ভিটে-মাটি ত্যাগ করে চা বাগানে কাজ করতে এলেও চা শ্রমিকরা মুখোমুখী হন নির্মম শোষণ-বঞ্চনা-প্রতারণা ও নির্যাতনের। চা বাগান প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ মালিকরা চা শ্রমিকদেরকে আক্ষরিক অর্থেই ঘেরাটো পেবন্দি এক দাসত্বের মধ্যে নিক্ষেপ করে। তাঁরা গাছ হিলালো, কিন্তু ন্যায্য মজুরি পাওয়ার বদলে পেল দাসত্বের জীবন। প্রায় শত বছরের বঞ্চনা, নিপীড়ন আর অপমানের বিরুদ্ধে চা শ্রমিক নেতা পন্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত, পন্ডিত দেওসরন ত্রিপাঠি, হরিচরন প্রমূখ শ্রমিক নেতাদের নেতৃত্বে জবরদস্তি মূলক দাসত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে ‘মুলুক চলো’ আন্দোলনের ডাক দেন। তাদের আহবানে ৫ মে ১৯২১ সিলেট অঞ্চলের চা বাগানগুলি থেকে হাজার-হাজার শ্রমিক বের হয়ে আসতে থাকে। নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা পায়ে হেঁটে ১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুরে মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছায়। আতঙ্ক তৈরী করে এই শ্রমিকদের চা বাগানে ফিরিয়ে নিতে আসাম রাইফেলসের গোর্খা সৈন্যরা গুলি করে হত্যা করে অসংখ্য চা শ্রমিককে এবং বেয়নেট দিয়ে পেট কেটে তাদের লাশ মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তাই ২০ মে বাংলাদেশের চা শ্রমিকদের জীবনে শোক, সংগ্রাম এবং প্রতিজ্ঞার দিন। অধিকার বঞ্চিত চা শ্রমিকদের অধিকার মর্যাদা ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে রুখে দাঁড়ানোর দিন ২০ মে। প্রায় ১০ লক্ষাধিক চা জনগোষ্টির কাছে শোক এবং বিদ্রোহের এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের মধ্যে অধিকার আদায়ে জাগরণ সৃষ্টির জন্য ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন’ ২০০৮ সাল থেকে এই দিনটিকে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসাবে পালন করতে শুরু করে এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের লড়াইয়ের প্রতীক ২০ মে কে কেন্দ্র করে তাদের মানবিক জীবনের অধিকারের কথাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, তারই অংশ হিসেবে আজকের এই কনভেনশন। বাংলাদেশে চা উৎপাদন বাড়ছে, ২০২৩ সালে রেকর্ড পরিমাণ ১০ কোটি ০১ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, চায়ের দাম বেড়েছে, মালিকের মুনাফা বেড়েছে, বিপরীতে বাড়ছে শ্রমিকের বঞ্চনা, বাড়ছে শ্রম শোষণ, কমছে মজুরি, কমছে কর্মসংস্থান। চা বাগানের সূচনা লগ্ন থেকেই যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্রিটিশ মালিকরা বাগান পরিচালনা করত বর্তমানেও তার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাজার দরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মজুরি থেকে চা শ্রমিকরা আজও বঞ্চিত। উন্নত আবাসন, শিক্ষা, চিকিৎসার নামে চলছে প্রহসন। বিশুদ্ধ পানি, উন্নত পয়ঃপ্রণালী, মানসম্মত পূর্নাঙ্গ রেশন, নিরাপদ কর্ম পরিবেশ কোন কিছুরই সন্তোষজনক আয়োজন নেই। বংশপরম্পরায় চা বাগানে বসবাস করলেও নেই ভূমির অধিকার। রোগে শোকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা এখানে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। বাংলাদেশে কোন বিচারেই একটি পরিবার নূন্যতম পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, ভবিষ্যৎ সঞ্চয় বিবেচনা করলে ২৫ হাজার টাকার নিচে মাস চালানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া উর্ধ্বগতির এই বাজারে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭৮.৫০ টাকা অর্থাৎ মাসে ৫.৩৫৫ টাকা, যেখানে সরকারি শিল্পকারখানার শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বর্তমান মজুরি ১৮ হাজার টাকার বেশি। একারনেই চা শ্রমিকদের জীবন এত শ্রীহীন, ভবিষ্যৎ এত স্বপ্নহীন। এই বৈষম্য প্রমাণ করে এদেশের চা শ্রমিকরা শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মালিক শ্রেণী এবং রাষ্ট্রের চরম অবহেলার শিকার। এক সময় চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে গড়ে উঠা “বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন” বর্তমানে নেতৃত্বের অদক্ষতা-আপোষ কামিতা ও সুবিধাবাদিতার কারণে কার্যকর যৌথ দরকষাকষির মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। চা শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা, নেতৃত্ব গড়ে তুলার চাইতে নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে রাখছে। চা শ্রমিকরা মনে করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের আপোষকামী সুবিধাবাদী নেতৃত্ব শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেয়ে মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বদা ব্যস্ত। এমনকি আন্দোলনের মাধ্যমে ন্যায্য মজুরি কিংবা সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা আদায় করার নৈতিক শক্তিও হারিয়েছে। চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি আদায়ে ইউনিয়নের নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তা শুধু তাদের যোগ্যতা নয়, তাদের সততাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। যৌথ দরকষাকষির প্রাথমিক শর্ত হলো বিদ্যমান আইনে উল্লেখিত সুবিধায় চেয়ে বেশী আদায় করা। “চা শ্রমিক ইউনিয়ন” আর “চা সংসদ” এর মধ্যে প্রতি দুই বছরে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও এবং তা শ্রমিকরা “শ্রম বিধিমালা-২০১৫” এর ৫ম তফসিলে বর্ণিত ন্যূনতম সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চাকরির অবসানে গ্রাচুইটি বা লভ্যাংশে শ্রমিকের অংশিদারিত্বের অধিকার আইনে থাকলেও “শ্রম অধিদপ্তর” বা “কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর তা বাস্তবায়ন করেনি। শ্রমিক ইউনিয়নকেও শ্রম আইন ও বিধিমালায় স্বীকৃত অধিকারসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়ন কিংবা শ্রম আইনের শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যপূর্ণ বিধানসমূহ সংশোধনের দাবিতে আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। শ্রেণী সচেতনতা ছাড়া গোষ্ঠী নেতৃত্ব যে শ্রমিকদের অধিকার আদায় করতে পারে না। “চা শ্রমিক ইউনিয়ন’ এর নেতৃত্বের ভূমিকা তার স্পষ্ট প্রমাণ।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D