সিলেট ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ, মে ২৬, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৬ মে ২০২৫ : বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেছেন, ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছিল। আর আজকের দিনে অর্থাৎ ২০২৫ সালে শুধুমাত্র শিল্প নয়, শিল্পোদ্যোক্তাদেরও একইভাবে মেরে ফেলা হচ্ছে।
তিনি এটাকে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। গ্যাস সংকট চলতে থাকলে ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে উল্লেখ করে শিল্প খাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
রবিবার (২৫ মে ২০২৫) রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)সহ বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) ও প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, শিল্পে গ্যাসের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে, একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু উপদেষ্টা এখনো উটপাখির মতো বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে বসে আছেন, বাস্তবতা দেখতে পারছেন না।
শিল্প বাঁচানো না গেলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ধ্বংস হতে পারে, যা দুর্ভিক্ষ ও বিশৃঙ্খলার কারণ হবে। তিনি আরও বলেন, শিল্পবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের শিল্পকারখানাগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে পড়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে, মূলধন কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ঈদে কারখানাগুলো বেতন ও ভাতা দিতে পারবে কি না তা অনিশ্চিত।
শওকত আজিজ রাসেল বলেন, দেশের বহুল প্রচারিত জাতীয় পত্রিকায় গ্যাস সংকটের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বিজ্ঞাপন প্রদান করা হলেও অদ্যাবধি এই সংকটের কোনো সমাধান হয়নি। বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিটিএলএমইএর অধীনের টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল পোশাক কারখানাগুলোর দেশের রপ্তানিতে প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান। গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার ক্ষেত্রে রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করা উচিত হলেও তা করা হচ্ছে না বরং রপ্তানি আয়ের মূল উৎসের প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাসের অভাবে স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। অধিকাংশ টেক্সটাইল মিল এবং পোশাক কারখানায় গ্যাসের শূন্য চাপের প্রমাণ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহের এই অবস্থা চলতে থাকলে বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিটিএলএমইএ এর অধীনের টেক্সটাইল এবং পোশাক খাতের প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, এই সংকট চলতে থাকলে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে রপ্তানি কমে যাবে। ফলে রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সামষ্টিক অর্থনীতি মেরামতের সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। এতে আর্থিক সংকট ঘনীভূত হবে, ব্যাংক ঋণ এবং শ্রমিকদের বেতনাদি পরিশোধের আশঙ্কা তৈরি হবে বিধায় উৎপাদক এবং রপ্তানিকারকরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নতুন কোনো কর্মসংস্থান হচ্ছে না বরং কর্মরত শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা বাড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- অবিলম্বে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শিল্প খাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; শিল্পখাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোয় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি প্রতিযোগীশীল ও টেকসই মূল্য নির্ধারণ নীতিমালা প্রণয়ন করা; শিল্প খাতে বিরাজমান গ্যাসের সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্ষমতা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে শিল্পোদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। তিন মাস সুদ না দিলে ব্যাংক ঋণ খেলাপি ঘোষণা করছে, যা শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।
বিটিটিএলএমইএর চেয়ারম্যান হোসেন মেহমুদ বলেন, গ্যাসের অভাবে ইতোমধ্যে পাঁচ-ছয়টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ সমস্যা সমাধান করতে না পারলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। বিটিএমএ পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, সরকার কি টেক্সটাইল শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে চায়, নাকি পাট ও চিনি শিল্পের মতো অন্যদের হাতে দিয়ে দিতে চায় তা বুঝতে পারছি না। গ্যাস না থাকলেও অদ্ভুত বিল করা হচ্ছে।
বিটিএমএ পরিচালক সালেহউদ জামান বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে কারখানায় দিনের অধিকাংশ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকছে। অথচ আমার ফ্যাক্টরিতে প্রতিদিন বেতন আসে ৬০ লাখ টাকা। শ্রমিকরা শুয়ে-বসে সময় কাটিয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D