আজ ঐতিহাসিক ২০ মে

প্রকাশিত: ৪:৫২ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০২১

আজ ঐতিহাসিক ২০ মে

Manual1 Ad Code

।।|| সুদর্শন শীল ||।।

আজ ঐতিহাসিক ২০ মে। ১৯২১ সালের মে মাসে অবিভক্ত ভারতের সিলেট ও কাছাড় অঞ্চলের প্রায় ত্রিশ হাজার চা শ্রমিক স্ত্রী, পুত্র,পরিজন নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার (মুল্লুক চলো) আন্দোলনের ডাক দিয়ে রেলষ্টেশনের দিকে যাত্রা শুরু করে।।
১৯২১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও গণজাগরণ তাদেরকে এই আন্দোলনে উৎসাহিত করে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইংরেজ মালিকেরা এই অঞ্চলের চা চাষের
জন্য শ্রমিক হিসেবে মধ্যভারতের বিভিন্ন এলাকা হতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় এ জনগোষ্ঠী শ্রমিক হিসেবে আসে ‘গিরমিট প্রথা’ চুক্তিতে। বাস্তবে ইংরেজ মালিকগণ তাদের সাথে দাসের মতো আচরণ করেছে।জংগল পরিষ্কার করতে গিয়ে হিংস্র বন্যপ্রাণীর আক্রমণে অনেক শ্রমিক মারা যায়।ম্যালেরিয়া, কালাজ্বরসহ আরো মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি চলে মালিকের অত্যাচার ও নিপীড়ন। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে এই দিনে আন্দোলনরত শ্রমিকরা রেলষ্টেশনে জড়ো হয় আসাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ব্রিটিশ মদদপুষ্ট রেল কর্তৃপক্ষ তাদের রেলে ওঠতে দেয়নি।অতঃপর তারা রেললাইন ধরে হাঁটতে থাকে চাঁদপুরে স্টিমারঘাটে জাহাজে ওঠার জন্য।পথিমধ্যে খাদ্য, পানীয় ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নারী,শিশুসহ অনেক চা শ্রমিক মারা যায়।১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুর স্টিমারঘাটে পৌঁছলে জাহাজে ওঠতে শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে আসাম রাইফেলস এর গুর্খা সৈন্যরা বাধা দেয় ও গুলি চালায়। তাদের গুলিতে হাজার হাজার চা শ্রমিক নিহত হয়।অনেকে গ্রেফতার হয়।শোনা যায় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পন্ডিত দেওশরণ ও পন্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত। অবশিষ্ট শ্রমিকদের চাবাগানে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়।পন্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত গ্রেফতার হয়ে জেলে ছিলেন।চা শ্রমিকদের উপর এই নির্যাতনের প্রতিবাদে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে শ্রমিকগণ তখন দশদিন ধর্মঘট পালন করে। পন্ডিত গঙ্গাদয়াল দীক্ষিত জেলে থাকাকালীন সময়ে প্রতিবাদ স্বরুপ তিনি অনশন করে প্রাণ ত্যাগ করেন। শোনাযায় মহাত্মা গান্ধী চা শ্রমিকদের এই আন্দোলন সমর্থন করেননি। তিনি চা শ্রমিকদের চা বাগানে ফিরে যাওয়ার অহবান জানিয়েছিলেন। অধিকার আদায়ের এ গৌরব গাঁথা আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন। জানা যায় এ আন্দোলনের পর গিরমিট প্রথা বাতিল হয় এবং চা শ্রমিকদের উপর জুলম কিছুটা কমানো হয়।
আজ হতে শতবর্ষ পূর্বে ১৯২১ সালের ২০ মে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শহিদ সকল শ্রমিকদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আজ চা শ্রমিকেরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক। চা শিল্পকে তারা একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চা-শ্রমিকেরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে ও শহিদ হয়েছে।চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন ছাড়া শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয় এসত্য আমাদের স্বীকার করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
১.চা-জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি – পরিমল সিং বাড়াইক
২.সুরমা উপত্যকার চা শ্রমিক আন্দোলন – অতীত ও বর্তমান –
ইসহাক কাজল

#

Manual6 Ad Code

সুদর্শন শীল

Manual1 Ad Code

সহকারী অধ্যাপক

Manual7 Ad Code

Manual4 Ad Code

বিভাগীয় প্রধান, গণিত

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code