বাংলার প্রথম নারী “নওয়াব” ফয়জুন্নেসা চৌধুরী

প্রকাশিত: ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ, মে ২৯, ২০২১

বাংলার প্রথম নারী “নওয়াব” ফয়জুন্নেসা চৌধুরী

Manual5 Ad Code

।।|| জেসমিন খান চাঁদনি ||।। ঢাকা, ২৯ মে ২০২১ : বাংলার প্রথম নারী “নওয়াব” ফয়জুন্নেসা চৌধুরী। যিনি চারটি ভাষা জানতেন। ছিলেন সুসাহিত্যিকও।

Manual2 Ad Code

১৫ বছর বয়সী কিশোরীর শরীর জুড়ে ছিল রূপ-লাবণ্যের ঢেউ। টানা টানা চোখ, হরিণীর মতই সদা চন্চল। বাবা ছিলেন কুমিল্লা অন্চলের (তৎকালীন ত্রিপুরা) পশ্চিমগাঁওয়ের (বর্তমান লাকসাম) বিরাট জমিদার।
অল্প বয়সেই কিশোরীর বিয়ের প্রস্তাব আসে ভাউকসারের জমিদার গাজী মোহাম্মদ চৌধুরীর কাছ থেকে। পশ্চিমগাঁওতে জমিদারির কাজে এসে তিনি কিশোরীকে দেখে পছন্দ করেন। পরে বিয়ে হয়।

ফুটফুটে দুটি মেয়েও হয়। তখন তিনি পরিপূর্ণ যুবতী। বিয়ের ১৭ বছর পর জানতে পারেন, তার স্বামীর আরেকটি বউ আছে। বিষয়টি তাঁর আত্মসম্মানে লাগে। তিনি প্রতারিত বোধ করেন।

স্বামীকে স্পষ্টত জানিয়ে দেন, সতীনের সঙ্গে ঘর করার জন্য জন্ম হয়নি তার। তিনি স্বামীর বাড়িতে আর ফিরে যাবেন না।

এরই মধ্যে বাবা মারা যাওয়ায় তিনি নিলেন পৈতৃক জমিদারির দায়িত্ব। এ নিয়ে তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।

কিন্তু এক সময় বাবার সান্নিধ্যে কাজ শেখা তার মজ্জাগতই ছিল। তিনি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগান সফলভাবে। সারাদেশে তিনি ছিলেন একমাত্র মহিলা জমিদার।

তখন ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন মি.ডগলাস। একদিন তিনি খেয়াল করলেন ত্রিপুরা অঞ্চল শিক্ষা ও উন্নয়ন খাতে ভীষণ অবহেলিত।

তিনি এই খাতে অর্থ বরাদ্দ চান ব্রিটিশ সরকারের কাছে। কিন্তু সেই অর্থ নির্ধারিত সময়ে আসছে না।

ডগলাস সাহেব চিন্তিত হলেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ডগলাস স্থানীয় ১০জন জমিদারের কাছে ঋণ হিসাবে ১০ হাজার টাকা করে ১ লাখ টাকা চাইলেন। কিন্তু কেউই এতো অল্প সুদে অর্থ দিতে রাজি হলেন না।

একে একে সব আশা যখন শেষ হয়ে গেল তখন হঠাৎ একদিন এই নারী জমিদারের নায়েব পুটুলি ভর্তি নগদ ১ লাখ টাকা নিয়ে এসে ডগলাসের হাতে দিলেন। ডগলাস খুব আনন্দিত এবং নিশ্চিন্ত হলেন।

তিনি কালবিলম্ব না করে নায়েবের সাথেই রওনা হয়ে জমিদারের বাড়িতে গেলেন ঋণের চুক্তি করতে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটকে বিস্মিত করে জমিদার নারীটি বললেন,

“আমি কাউকে ঋণ দিই না। আপনার পরিকল্পনা জনহিতকর। এটা নিশ্চিত হয়েই এই টাকা ত্রিপুরার কল্যাণে আমি দান করলাম।”

ডগলাস কৃতজ্ঞচিত্তে ফিরে গেলেন এবং জানলেন যে এই নারী জমিদার জনকল্যাণমূলক অসংখ্য কাজ করেছেন এবং প্রতিনিয়ত করে চলেছেন।

ডগলাস এইসব কথা জানিয়ে ইংল্যান্ডে মহারানী ভিক্টোরিয়াকে পত্র পাঠালেন। রাণী ভিক্টোরিয়া এই জমিদারকে “বেগম” উপাধি দিলেন।

কিন্তু জমিদার এই উপাধি প্রত্যাখ্যান করলেন। কারণ অন্য জমিদারদের যেখানে ‘নওয়াব’ উপাধি দেয়া হয় সেখানে তাকে কেন ‘বেগম’ উপাধি দেয়া হবে? উপাধির কোন জেন্ডার থাকা উচিৎ নয়।

ভিক্টোরিয়া এই প্রত্যাখানের খবর পেয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে ত্রিপুরায় পাঠালেন।

তদন্ত কমিটি এসে নানা বিষয়ে তদন্ত করে একদিন সেই তেজী নারী জমিদারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখেন, জমিদার হাতিতে চড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Manual6 Ad Code

তিনি কোথাও কাজে যাবেন, সেখানে তাকে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছুতে হবে।

তদন্ত কমিটি জমিদারের কাছে সময় চাইলে জমিদার বললেন –”আমি পূর্ব নির্ধারিত কাজে যাচ্ছি, এখন আপনাদের সময় দেয়া সম্ভব নয়।” আর কথা না বাড়িয়ে সময়নিষ্ঠ জমিদার তাঁর কাজে রওনা হয়ে গেলেন।

ব্রিটিশ তদন্ত কমিটি হতবাক হয়ে গেল নেটিভ এই জমিদারের সময়ানুবর্তীতা, তেজস্বী মনেভাব ও অহংকার দেখে !!

এবং তারা ফিরে গিয়ে ভিক্টোরিয়াকে জানালেন সব কথা। এইবার রানী ভিক্টোরিয়া আর ভুল করলেন না। প্রবল ব্যক্তিত্বময়ী এই জমিদারকে “নওয়াব” উপাধি দিলেন।

১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ সরকার পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় করে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে কুমিল্লায় এই জমিদারকে সম্বর্ধনা দিলেন। তিনি হলেন বাংলার প্রথম নারী “নওয়াব”।তাঁর নাম নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরী।

Manual6 Ad Code

তিনি কেবল জনহিতকর কাজই করেননি, নারী শিক্ষা,নারী উন্নয়নমূলক অসংখ্য কাজ করেছেন। ছিলেন সুশিক্ষিত, চারটি ভাষা জানতেন। ছিলেন একজন সুসাহিত্যিকও।
_______________________________
কার্টেসি: সাব্বির নেওয়াজ

কৃতজ্ঞতা স্বীকার Main Uddin

Manual6 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code