এসএমপি: গ্রামীণফোনের ওপর নতুন বিধিনিষেধ

প্রকাশিত: ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ২২, ২০২০

এসএমপি: গ্রামীণফোনের ওপর নতুন বিধিনিষেধ

Manual4 Ad Code

ঢাকা, ২২ জুন ২০২০: গ্রাহকসংখ্যায় দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনকে ‘সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার’ বা এসএমপি ঘোষণার এক বছরের মাথায় নতুন দুটি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি।

প্রথম নির্দেশনায় গ্রামীণফোনের নতুন সেবা, প্যাকেজ বা অফার চালু করা কঠিন করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় নির্দেশনায় নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলানোর ক্ষেত্রে গ্রাহকের গ্রামীণফোন ছাড়ার সুযোগ সহজ করা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

বিটিআরসি বলছে, টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় ‘একক আধিপত্য তৈরির অবস্থা’ যাতে তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে ‘গ্রাহকের স্বার্থে’ এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে গ্রামীণফোন বলেছে, বিটিআরসির এসব নতুন নির্দেশনাই বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ এবং গ্রাহক স্বার্থের পরিপন্থি।

Manual1 Ad Code

রোববার গ্রামীণফোনকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ১ জুলাই থেকে বিটিআরসির আগাম অনুমোদন ছাড়া গ্রামীণফোন নতুন কোনো সেবা, প্যাকেজ বা অফার দিতে পারবে না। বিদ্যমান সেবা, প্যাকেজ, অফার পরিবর্তন করতে চাইলেও কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে। আর এখন যেসব সেবা, প্যাকেজ বা অফার চালু আছে, সেগুলো আগামী ৩১ অগাস্টের মধ্যে নতুন করে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।

দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের ক্ষেত্রে গ্রামীণফোনের বেলায় ‘লকিং পিরিয়ড’ হবে ৬০ দিন, যেখানে অন্য অপারেটরদের ক্ষেত্রে তা ৯০ দিন। এই নির্দেশনাও ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

একজন গ্রাহক তার নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলানোর পর আবারও অপারেটর বদলাতে চাইলে তাকে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হয়, একে বলা হয় লকিং পিরিয়ড।

বিটিআরসির নতুন নির্দেশনার ফলে কেউ গ্রামীণফোন ছাড়তে চাইলে তিন মাসের বদলে দুই মাস পার হলেই নতুন অপারেটরে যেতে পারবেন।

চিঠিতে বিটিআরসি বলেছে, করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কলরেটের শর্ত (সর্বনিম্ন ৫০ পয়সা/মিনিট) আপাতত আরোপ করা হল না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করবে।

আর কল টার্মিনেশন থেকে গ্রামীণফোনের আয় কমিয়ে দেওয়ার (মিনিটে ১০ পয়সার বদলে ৫ পয়সা) বিষয়ে আরও যাচাই বাছাই করে কমিশন পরে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানানো হয় চিঠিতে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, “টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় একক আধিপত্য তৈরির অবস্থা যাতে তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কোনো অপারেটরের কোনো ক্ষতি হবে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করতেই এ উদ্যেগ।”

গ্রামীণফোন এ নির্দেশনা পুনর্বিবেচনা করার আবেদন করতে পারবে কি না জানতে চাইলে বিটিআরসি প্রধান বলেন, ৬ মাস পর এটি রিভিউ করার সুযোগ আছে।

“জনগণ যদি বলে তাদের ক্ষতি হচ্ছে বা অপারেটররা যদি বলে, তখন এটা দেখা যাবে।”

সেবা, প্যাকেজ বা অফারের অনুমোদনের বিষয়ে নতুন যে নির্দেশনা গ্রামীণ ফোনকে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “এসএমপির নিয়ম অনুযায়ী তারা অনুমেোদন নেবে, তবে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে যদি অনুমোদন না দেওয়া হয়, তাদের ধরে নিতে হবে তা অনুমোদন পায়নি।“

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নতুন এই বিধিনিষেধের প্রতিক্রিয়ায় গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব পাবলিক অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত এক ইমেইলে বলেন, বাংলাদেশের মোবাইলখাত যথেষ্ট প্রতিযোগিতামূলক এবং সময়োচিত বিনিয়োগ, নিত্যনতুন উদ্ভাবন এবং ব্যবসায়িক পরিচালন দক্ষতার মাধ্যমেই এ বাজারে গ্রামীণফোন প্রসার লাভ করেছে।

“সর্বশেষ আরোপিত বিধিনিষেধগুলো এসএমপির মূল উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বাজার বিনষ্ট হয়েছে এমন কোনো প্রমাণের ভিত্তিতেও সেগুলো আরোপ করা হয়নি।”

“অসামঞ্জস্যপূর্ণ এই বিধিনিষেধগুলোই প্রতিযোগিতার পরিবেশবিরোধী, যা গ্রাহক স্বার্থের পরিপন্থি বলেও আমাদের বিশ্বাস। জাতীয় রাজস্ব এবং বিনিয়োগের পরিবেশের ওপর এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বিটিআরসির ওই চিঠি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে বলে হোসেন সাদাত জানান।

টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় ‘একক আধিপত্য তৈরির অবস্থা’ যাতে তৈরি না হয়, তা নিশ্চিতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে এসএমপি প্রবিধানমালা জারি করে বিটিআরসি।

সেখানে বলা হয়, কোনো মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা, বার্ষিক রাজস্ব বা বরাদ্দ পাওয়া তরঙ্গের পরিমাণ বাজারের মোট হিস্যার ৪০ শতাংশের বেশি হলে তাকে ‘সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়া ‘ বা এসএমপি ঘোষণা করা যাবে।

ওই কোম্পানি দানবীয় আকার নিয়ে যাতে বাজার গ্রাস বা প্রতিযোগিতার পথ রুদ্ধ করতে না পারে, সেজন্য বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয় নীতিমালায়, যা গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছে বিটিআরসি।

বিটিআরসি ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোনকে সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) ঘোষণা করে। ফলে নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেওয়াসহ কিছু বিধিনিষেধ আরোপিত হয় গ্রামীণফোনের ওপর, যা ওই বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে জানানো হয়।

তবে বিধিনিষেধ কার্যকর করার যে প্রক্রিয়া নীতিমালায় ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটি যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ার অভিযোগ নিয়ে গ্রামীণফোন আদালতে গেলে বিষয়টি পিছিয়ে যায়।

Manual8 Ad Code

এরপর একই বছর ২০ মার্চ গ্রামীণফোনের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে আরোপিত বিধি-নিষেধ তুলে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে মে মাসে গ্রাহকদের বিনামূল্যে ১০ কোটি মিনিট দেয় গ্রামীণফোন। এছাড়া চিকিৎসকদের জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

Manual2 Ad Code

কিন্তু বাকি অপারেটরগুলো এ বিষয়ে আপত্তি জানায়। রবির পক্ষ থেকে বলা হয়, টেলিকম খাতের ‘মার্কেট লিডার’ তাদের বাজারভিত্তিক পদক্ষেপকে সিএসআরের মোড়কে উপস্থাপন করায় প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

বিটিআরসির হিসেবে এপ্রিল শেষে দেশে মোট মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৬ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে সাত কোটি ৪৩ লাখ ৬১ হাজার গ্রাহক নিয়ে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন।

এছাড়া রবির ৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক ৪৮ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক রয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code