“প্রকৃতি কোনো বিলাস নয়, এটি আমাদের টিকে থাকার অবকাঠামো”— শহর পরিকল্পনায় নতুন ভাবনা

প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৫

“প্রকৃতি কোনো বিলাস নয়, এটি আমাদের টিকে থাকার অবকাঠামো”— শহর পরিকল্পনায় নতুন ভাবনা

Manual8 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২২ অক্টোবর ২০২৫ : আজকের পৃথিবীতে শহর আর প্রকৃতির মধ্যে দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। অথচ বাস্তবতা হলো—প্রকৃতি কোনো বিলাস নয়, এটি অবকাঠামোর অংশ। জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন্যা ও দূষণের বিরুদ্ধে টেকসই লড়াইয়ে এখন শহরগুলো ফিরছে প্রকৃতির কাছেই। তবে, প্রতিটি শহরের সমস্যাই এক নয়, তাই সমাধানও এক হওয়া সম্ভব নয়।

Manual6 Ad Code

????
শহরে প্রকৃতির প্রত্যাবর্তন: ‘Nature-based Solutions’ বা NbS

বিশ্বজুড়ে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে Nature-based Solutions (NbS) ধারণা। এটি এমন সব পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির সমষ্টি, যেখানে প্রাকৃতিক উপাদান—গাছ, জলাভূমি, খাল, পার্ক বা সবুজ ছাদ—কে ব্যবহার করা হয় শহরের সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা মোকাবিলায়।

Manual3 Ad Code

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন শহরের জন্য কোন সমাধানটি উপযুক্ত?
????️
শহরের প্রকৃতি নির্ভর পরিকল্পনায় প্রেক্ষিতভেদে ভিন্নতা

বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে শহরগুলো ভিন্ন ভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। কোনোটি অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে জায়গার সংকটে ভোগে, কোনোটি আবার বন্যা বা পানির স্থায়ী জমে থাকার সমস্যায়।
এই প্রেক্ষাপটে শহর পরিকল্পনাকারী, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় নেতৃত্বদের জন্য জরুরি—‘সঠিক জায়গায় সঠিক সমাধান’ বেছে নেওয়া।

একটি সহজ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধাপ হতে পারে—

১. মূল চ্যালেঞ্জ কী?

জলাবদ্ধতা বা বন্যা,

তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট,

Manual8 Ad Code

জীববৈচিত্র্য হ্রাস,

জায়গার অভাব বা ঘনবসতি।

২. বিদ্যমান অবকাঠামো কি অভিযোজনযোগ্য?
পুরনো ড্রেন, খাল বা পরিত্যক্ত স্থানে কি ‘বায়ো-সোয়েল’, ‘রেইন গার্ডেন’ বা সবুজ বাফার তৈরি করা যায়?

৩. স্থানীয় মানুষ কি সম্পৃক্ত?
প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের সাফল্য নির্ভর করে কমিউনিটির অংশগ্রহণের উপর। গাছ লাগানো থেকে রক্ষণাবেক্ষণ—সবক্ষেত্রে স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা টেকসই ফল দেয়।

৪. সমাধান কি তাৎক্ষণিক, নাকি দীর্ঘমেয়াদি?
গরম কমানোর জন্য অস্থায়ী ছায়া তৈরি করা ও স্থায়ী নগর-বন গড়ে তোলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পরিকল্পনায় এই দূরদৃষ্টি জরুরি।
????
সম্ভাব্য সমাধানগুলোর উদাহরণ

সবুজ ছাদ (Green Roof): উচ্চ ঘনত্বের এলাকায় তাপমাত্রা কমানো ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে কার্যকর।

আরবান ফরেস্ট বা শহুরে বন: শহরের পরিত্যক্ত খোলা জায়গা বা সরকারি জমিতে ঘন বৃক্ষরোপণ।

বায়োসোয়েল ও রেইন গার্ডেন: বৃষ্টির পানি প্রাকৃতিকভাবে শোষণ করে জলাবদ্ধতা কমায়।

কমিউনিটি নার্সারি: স্থানীয় প্রজাতির গাছের চারা উৎপাদন করে, কর্মসংস্থান ও পরিবেশ দুই-ই টেকসই করে।
????
ঢাকার মতো শহরে সম্ভাবনা

ঢাকা শহর আজও বন্যা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেক নগর পরিকল্পনাবিদ বলছেন, যদি পুরনো খালগুলো পুনরুদ্ধার করা যায়, পার্ক ও সবুজ বাফার বাড়ানো যায়, তাহলে শহরের ‘প্রাকৃতিক শ্বাস-প্রশ্বাস’ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
????
ভবিষ্যতের নগর ভাবনা: মানুষ ও প্রকৃতির সহাবস্থান

প্রকৃতি-নির্ভর সমাধান শুধু পরিবেশগত নয়, এটি সামাজিক ন্যায়েরও বিষয়। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই সাধারণত জলবায়ু দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই পরিকল্পনায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, এবং তাদের বাস্তব চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া, টেকসই নগর উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

শেষ কথা

শহর গড়ার মানে কংক্রিটের দেয়াল তোলা নয়, বরং এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি একসাথে বাঁচে।
Nature-based Solutions সেই পথ দেখায় —
যেখানে শহর শুধু টিকে থাকে না, বরং নিজেই হয়ে ওঠে আরোগ্যের স্থান।

Manual1 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code