আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু আর নেই

প্রকাশিত: ৭:২২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০২১

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু আর নেই

ঢাকা, ১৪ এপ্রিল ২০২১ : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।আজ বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা গেছেন বলে জানান তার জুনিয়র আইনজীবী সুপ্রিমকোর্টের এডভোকেট আতিকুর রহমান খান।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩ এপ্রিল থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন আব্দুল মতিন খসরু।
করোনা আক্রান্ত হওয়ায় রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরে করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতায় তার চিকিৎসা সেখানে চলছিল।
গত ৩১ মার্চ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে কেবিনে আনা হয়েছিল। পরে আবার অবস্থার অবনতি হলে গত ৬ এপ্রিল তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ১৩ এপ্রিল অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয় আবদুল মতিন খসরুকে।
গত ১৫ মার্চ আব্দুল মতিন খসরু সংসদ সচিবালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ১৬ মার্চ সকালে পাওয়া রিপোর্টে তার করোনা পজিটিভ আসে। ওইদিনই তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
গত ১০ ও ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২১-২২ সেশনের নির্বাচনে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন আবদুল মতিন খসরু।
আবদুল মতিন খসরু আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং – ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে পাঁচ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি বর্তমানেও ওই আসনের সংসদ সদস্য।

আবদুল মতিন খসরুর বর্ণাঢ্য জীবন

তৃণমূল থেকে জাতীয় রাজনীতির শীর্ষে উঠে আসা রাজনীতিবিদ ছিলেন এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ।
একজন আইনজীবী হিসেবে শতভাগ পেশাদার ছিলেন তিনি। কুমিল্লা জজ কোর্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে প্র্যাকটিসে সাফল্য অর্জন করেন তিনি। সর্বশেষ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরআগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।
তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য (প্রেসিডিয়াম সদস্য)। আবদুল মতিন খসরু কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচবার। আমৃত্যু ওই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজ কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন আবদুল মতিন খসরু। ১৯৮২ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন তিনি। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সর্বোচ্চ ভোটে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গৌরবও রয়েছে তার। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন জেষ্ঠ্য আইনজীবী ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।
১৯৯১ সালে কুমিল্লা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় বিচারের পথ বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল পাসে আবদুল মতিন খসরুর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এ বিল পাস করার প্রাক্কালে জাতীয় সংসদে আবদুল মতিন খসরুর বক্তব্য অগনিত মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তার ওই বক্তব্য ছিল ঐতিহাসিক।
তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আমৃত্যু দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।

আবদুল মতিন খসরু ১৯৫০ সালের ১২ ফেবব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তারা চার ভাই এক বোন৷ আবদুল মতিন খসরু ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে এক মেয়ের জনক।
তিনি ১৯৯২ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থানীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।
আব্দুল মতিন খসরু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে আব্দুল মতিন খসরু আইনমন্ত্রী থাকাকালে সংবিধান ও আইনের শাসন বিরোধী কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডর বিচারের ব্যবস্থা করেন তিনি। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের আত্মস্বীকৃত খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন।
আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে তার নির্বাচনী এলাকা, নিজ জেলা কুমিল্লা এবং সারাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েও দায়িত্ব পালন শুরুর পূর্বেই সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের অভিভাবক আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে শোকাহত আইনজীবীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

স্পিকারের শোক

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এমপির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
স্পিকার মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

পাঁচ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু’র মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

সৈয়দ আমিরুজ্জামানের শোক

কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং – ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে পাঁচ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক আইনমন্ত্রী, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু’র মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ