আশেপাশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করি ও এগিয়ে যেতে সাহায্য করি

প্রকাশিত: ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০২১

আশেপাশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করি ও এগিয়ে যেতে সাহায্য করি

।| ইশরাত নাহের ইরিনা |। জার্মানি, ১৭ জুলাই ২০২১ : “তুমি একেবারেই তোমার বাবার গায়ের রং পাওনি, খুব ভালো হয়েছে” – এই কথাটি ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত অনেক বেশি শুনেছি,অনেক বার শুনেছি ।আমার আম্মু অনেক ফর্সা আর আব্বু অনেক কালো। আমি আসলে কারোর গায়ের রং এর মত না। এবং এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই।

কিন্তু বাসায় কিছু আত্নীয় বা আশেপাশের প্রতিবেশী আসলেই এসব কথা বলতেন। ছোট ছিলাম কিন্তু কথাগুলো কেনো জানি ভালো লাগতো না।

আমাদের দেশে parenting এর অবস্থা খুব একটা ভালো না। অনেক মা বাবাই জানেন না সন্তানকে কিভাবে ভালোভাবে বড় করতে হবে। তার মধ্যে আশেপাশে এরকম common senseless কিছু মানুষ থাকেন, যারা ছোট বাচ্চাদের এসব বলেন। একটা বাচ্চার মানষিক বিকাশে এসব কথা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, এটা আমাদের বড়দের অনেকেই জানেন না।

এরকম সমাজ ব্যাবস্থায় এবং মানুষের গায়ের রং নিয়ে অতি উৎসাহের কারনে, আমাদের দেশের অনেক মেয়ে এবং তার পরিবার হিনমন্যতায় ভোগেন। সুন্দর মানে ফর্সা, আর কালো মানে অসুন্দর -এসব চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে এসে আমাদের দক্ষতা নিয়ে কথা বলতে হবে।

সুন্দর মানে গায়ের রং না। আল্লাহ যেভাবে আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, আমরা প্রত্যেকে সেভাবেই সুন্দর। প্রত্যেকটা মানুষের কিছু ভালো গুণ থাকে। সেটাই তার জন্য সুন্দর। আমি চাই, আমার মা বাবা যেভাবে আমাকে “একজন মেয়ে” হিসেবে বড় না করে “একজন মানুষ” হিসেবে বড় করতে সাহায্য করেছেন, প্রত্যকেটা পরিবার এমন হোক। কালো বা শ্যামলা গায়ের রং এর জন্য যেনো কোনো মেয়ের আত্নবিশ্বাস কমে না যায়। তাই আমি মেয়েদের এক্ষেত্রে দোষ না দিয়ে তার পরিবার এবং সমাজকেই দায়ী করতে চাই।

আমাকে কেউ “দেখতে ভালো লাগছে৷ সুন্দর লাগছে” টাইপ কমেন্ট করলে খুব অস্বস্থিতে পরে যাই। আমাকে কেউ আমার দক্ষতা এবং আমার দুর্বল দিক নিয়ে কথা বললে, আমি খুশি হই। এখানে আমাদের নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে প্রস্তুত করার সুযোগ আছে। তাই আসুন গায়ের রং এর কথা ভুলি যাই। দক্ষতা নিয়ে কথা বলি, আশেপাশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করি এবং এগিয়ে যেতে সাহায্য করি। এই পেইজে অনেক ভিডিও পাবেন যেখানে আমি ইতিমধ্যেই এই গায়ের রং এবং আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা নিয়ে কথা বলেছি, তাই আর বেশি লিখবোনা।

গত বছর দেশে গিয়েছিলাম বেড়াতে। বেশির ভাগ মানুষ আমাকে দেখেই বলেছেন “আল্লাহ তুমি জার্মানিতে গিয়ে অনেক ফর্সা হয়ে গেছো “। তখন বুঝিনি যে হয়তো এটাই সত্যি। কিন্তু ছবি দেখলে বুঝি। এখানে ধুলাবালি নেই, ট্রাফিক জ্যাম এর মানষিক অশান্তি নেই,  বায়ু দূষণ নেই। তাই হয়তো দেশের বাইরে আসলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে এবং উজ্জ্বল হয়। কিন্ত বাংলাদেশের মেয়ে আমি। দেশেই ফিরে যাবো। এসব গায়ের রং নিয়ে বা বাহ্যিক সুন্দর এর তথাকথিত বর্ননায় আমার বিন্দুমাত্রও আগ্রহী নই। আমার জীবনে আমি মুখে একটা pace pack ও লাগাই না, মেকাপ ব্যাবহার করিনা, সান্সক্রিন পর্যন্ত দেই না, আর  খুব কম প্রডাক্ট ব্যাবহার করি। কাজল আর লিপস্টিক ব্যাবহার করি তাও অনেক দিন পর। যদি ইচ্ছা হয়। এই ছবিটা লাস্ট ফেব্রুয়ারিতে আমার বার্থডে তে তোলা। ফ্রেন্ড্ররা দাওয়াত দিয়েছিলো। তাও একটু কাজল আর লিপ্সটিক দিয়েছিলাম। এর পর আর দেয়া হয়নি। ইচ্ছে করেনি। ইচ্ছা হলে দিবো হয়তো আগামী সপ্তাহে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাচ্ছি, সেখানে।

এই পেইজে আমার সাথে এতোদিন আমার হোমটাউনের(শ্রীমঙ্গল) মানুষ যুক্ত ছিলেন
মূলত শ্রীমঙ্গল এর বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলতাম। কিন্তু ইদানিং এই পেইজে আমার হোমটাউনের অনেক মানুষ যুক্ত হয়েছেন যারা আমার ব্যাপারে জানেন না। তারা ইনবক্সে এবং ভিডিওতে পরিচয় জানতে চেয়েছেন। তাই সবার ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা এবং প্রশ্নের প্রতি পূর্ন সম্মান রেখেই আমি আমার  ব্যাপারে বিস্তারিত লিখছি এখানে :

Ishrat Naher Erina,
-Family Planning Leader, Bill & Melinda Gates Institute for Population & Reproductive Health,USA.

-Founder and CEO, Prescription Bangladesh

-Bachelor in Pharmacy, Brac University, Dhaka, Bangladesh.

-Master’s in Biochemistry, Friedrich Schiller University, Germany.

আর বর্তমানে আমি জার্মানির একটি হসপিটালে একটি গবেষনামূলক কাজ করছি। আমার কাজের বিষয় Exosome Based vaccine and Drug delivery system . আমি আসলে পাব্লিকেশন এর জন্য এতোদিন এখানে থেকে গেছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে যাবো এবং Prescription Bangladesh | নিজেকে জানো এর এই প্রজেক্ট টা নিয়ে সারা বাংলাদেশে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। আর আমার শ্রীমঙ্গলে এই Active Citizens of Sreemangal এর প্রজেক্টটির মাধ্যমে স্থানীয় তরুন তরুনীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাদের চাকরির বাজারের জন্য  প্রস্তুত করে ভবিষ্যত জীবনের  জন্য তৈরী করে  দেয়ার জন্য কাজ করবো।

এসব ছাড়াও আমি আরও অনেক freelancing projects এ কাজ করি, যার বর্ননা এখানে দিতে গেলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই আপনাদের বিরক্ত করতে চাচ্ছি না। তবে আমি প্রজেক্ট এবং বিজনেস প্রপোজাল লিখার কাজটা করি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য (যখন টাকার দরকার হয় এবং সময় পাই)।

আর আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশী। আমি অনেক গর্বিত একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে। আর এর বাইরে আমি একজন সিলোটী। আমার হোমটাউনে শ্রীমঙ্গল । আব্বু শ্রীমঙ্গল এর আর আম্মু মৌলভীবাজারের। এই তো। আর বেশি কিছু বলার নেই। অনেকেই জানতে চেয়েছেন এবং বলেছেন পরিচয় দিয়ে কথা বলার জন্য। আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে অনুপ্রানিত করার জন্য এবং সাপোর্ট করার জন্য। আর সিলেটের বাইরে যার আছেন,আমি আপনাদের সাথেও আমার প্রজেক্ট এর মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সারা বাংলাদেশে কাজ করতে চাই। অবশ্যই আমার সাথে যোগাযোগ করবেন(Ishraterina52@gmail.com).

সবাই ভালো থাকবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, মানষিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিবেন  এবং আমার জন্য এবং আমার পরিবারের সবার জন্য দোয়া করবেন ❤️

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ