সিলেট ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:২৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২১
প্রেস – ছাপাখানা বা মুদ্রণালয়। যদিও হালআমলে
প্রেস/press শব্দটি সংবাদ বা সংবাদ অঙ্গনকেও
বুঝায়। রয়েছে সংবাদ সংশ্লিষ্ট কিছু শব্দ। যেমন- প্রেসক্লাব, প্রেসনোট, প্রেসব্রিফিং, প্রেসরিলিজইত্যাদি। তবে এগুলো আমার আলোচ্য নয়।
প্রথম প্রেস বা ছাপাখানা কে কোথায় আবিষ্কার
করেছিলেন, উপমহাদেশের প্রথম প্রেস কোথায়
স্থাপন হয়েছিলো এবং আমাদের দেশে সর্বপ্রথম
১৮৪৮ সালে কালীচন্দ্র রায় রংপুরে যে ছাপাখানা
চালু করেছিলেন তা কমবেশি সবার জানা। উল্লেখ্য
সিলেটে জনৈক কবি প্যারীচরণ ১৮৭৪ সালে প্রথম প্রেস বা ছাপাখানার গোড়াপত্তন করেন।
আমাদের শ্রীমঙ্গলে ছাপাখানা বা প্রেসের পূর্বাপর
ও প্রসঙ্গকথা জানতে দারস্থ হই এককালে প্রেস বা
ছাপাখানা ব্যবসায়ী অধুনালুপ্ত স্বনামখ্যাত সুলেখা প্রিন্টিং প্রেসের সত্ত্বাধিকারী এবং বারবার কারা
নির্যাতিত নেতা, একাধিক সেনাশাসকের ত্রাস, দুঃসময়ের কাণ্ডারি, প্রতিকুল পরিবেশ ও বিরুপ
পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতির চ্যালেঞ্জিং ও পঙ্কিল
পথের অগ্রপথিক শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সংগ্রামী সভাপতি শ্রদ্ধেয় দাদা রজত পাল মহোদয়ের। কানাডা প্রবাসী বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব এবং পোড়খাওয়া এই রাজনীতিকের সাথে টেলিফোনিক অন্তরঙ্গ আলাপনে অবগত হই, সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গলের ছাপাখানার পূর্বাপরসহ অন্যান্য অজানা আখ্যান।
তাঁর স্মৃতিভাষ্য অনুয়ায়ী মৌলভীবাজার সড়কের অধুনালুপ্ত হক প্রেস এবং এই জনতা প্রেস হলো শ্রীমঙ্গলের প্রথম দুইটি প্রেস। অতঃপর এলাহি প্রেস, তাঁর নিজের সুলেখা প্রিন্টিং প্রেস, মৌসুমি প্রিন্টিং
প্রেস, জয়ন্তী প্রিন্টিং প্রেসসহ আরও অনেক প্রেসের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সুলেখা প্রিন্টিং প্রেসের অবস্থান ছিলো বর্তমানে সুধা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বিপরীতে।
আরও অবগত হই সুলেখা প্রেস কেবল একটি ছাপাখানাই ছিলো না। তৎকালিন সময়ের সকল রাজনীতিক, শিল্পী, সাহিত্যিক এবং সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষের অন্তরঙ্গ আড্ডাস্থল আর তীর্থভূমি ছিলো সুলেখা প্রেস। তবে পুরনো সকল প্রেস পুরোপুরিভাবে বন্ধ হলেও যুগের তালে তাল মিলিয়ে স্বমহিমায় আছে মৌসুমি প্রিন্টিং প্রেস এখনও। হক, এলাহি, সুলেখাসহ সকল প্রিন্টিং প্রেস কালের গর্ভে বিলীন হলেও স্বর্ণালী সময়ের স্মৃতি ও স্মারক হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে জনতা প্রেস। এই জনতা প্রেসের কার্যক্রম বর্তমানে
বন্ধ থাকলেও অতীতের নস্টালজিক স্মৃতি বহন করে আজও দাড়িয়ে আছে কলেজ রোডে।
বলাবাহুল্য আগে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন
ধাতব অক্ষর ছিলো। সেই ছাঁচের অক্ষরগুলো
একটি কাঠের ফ্রেমে আবদ্ধ থাকতো। যাতে একটি পৃষ্ঠায় অক্ষর ও বাক্যগুলো সোজা লাইনে ও সুবিন্যস্ত আকারে থাকতো পারে। এটাই ছিল আধুনিক ছাপাখানা শিল্পের প্রথম পদক্ষেপ। এর ফলে হাতে লেখার চেয়ে অনেক দ্রুত ও কম সময়ে বই লেখা অর্থাৎ প্রকাশ করা সম্ভব হয়। যদিও সেটির মাঝেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন- কাগজগুলোতে কেবল লেখা ব্যতীত অন্যান্য কাজ, যেমন- বিভিন্ন রং করা কিংবা ডিজাইন করা- ইত্যাদি তখনো হাতেই করতে হত। প্রেসের সর্বশেষ হলো অফসেট প্রিন্টিং আর আরও আপডেট বর্তমানের ডিজিটাল প্রিন্টিং। আর শ্রীমঙ্গলে অফসেট প্রিন্টিং এর জগতে মুদ্রণবিদ
কম্পিউটার এন্ড অফসেট প্রিন্টার্স অন্যতম প্রধান
পথ প্রদর্শক। অতঃপর অক্ষরবিন্যাস আর দেশ কম্পিউটারর্সসহ অন্যান্য।
যাইহোক, কলেজ রোডের কালের ঐতিহ্যবাহী
জনতা প্রেস নিঃসন্দেহে বহতা সময়ের এক নীরব
সাক্ষী, স্মারক ও স্মৃতিচিহ্ন। জনতা প্রেসে আমি
৯২ – ৯৩ সালের দিকে শেষতক গিয়েছিলাম।
জনতা প্রেস বা অন্যান্য প্রেস নিয়ে হয়তো আরও
অনেকের স্মৃতি ও নানা নস্টালজিক আখ্যান আছে।
এখানে যা লিখলাম তা শ্রুতিকথন মাত্র।
পরিশেষে জনতা প্রেসের সত্ত্বাধিকারীসহ শ্রীমঙ্গলের সুধীজন ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানাই
জনতা প্রেসকে নিয়ে যেন একটি উন্মুক্ত প্রদর্শনীর
ব্যবস্থা করা হয়। নতুন প্রজন্মের যাঁরা প্রেস দেখেনি
তাঁরা যেন দেখতে ও জানতে পারে ছাপাখানার
অনেক অজানা আখ্যান। প্রেস, ছাপাখানা কিংবা
মুদ্রণালয়ের গোড়াপত্তন, ক্রমবিকাশ, বিবর্তন বা
আধুনিকায়ন সম্পর্কে সকলের অবগত হওয়া উচিৎ।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by M-W-D