“মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য…”

প্রকাশিত: ১:২৭ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০২২

“মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য…”

কমলকলি চৌধুরী |

কবি নজরুলের কবিতা ও গানে স্পষ্টতই দুটি বিভাগ রয়েছে — বিদ্রোহ আর প্রেম।
সংখ্যানুপাতিক বিচারে প্রেমানুভূতিজাত কাব্য তাঁর দ্রোহী বাণীকে পেছনে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
এমনকি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মধ্যেও কবির হৃদয়সিঞ্চিত-প্রেম ফল্গুধারার মতো প্রবহমান —
“আমি বন্ধন-হারা কুমারীর বেণী,
তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ
প্রেম-উদ্দাম আমি ধন্যি।”
কিংবা,
“আমি চির অভিমানী, ব্যথা সুনিবিড়
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম পরশ কুমারীর।
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি
ছল করে দেখা অনুক্ষণ
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা তার কাঁকন চুড়ির কন-কন।”
অগ্নিবীণাধারী বিদ্রোহী কবির মর্মলোকে যে প্রেমের পিপাসা অতৃপ্ত অবস্থায় কেঁদে ফিরছিলো তা-ই কবির অসামান্য কাব্যপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিলো। কবির প্রেমের প্রদীপ্ত আবেগ ছিলো স্বতঃস্ফূর্ত, উদ্দাম, দুর্বার। প্রেমিক-প্রেমিকার বিচিত্র প্রণয়লীলা ও তার মান-অভিমান, অনুরাগ-বিরাগ, দ্বন্দ্ব-সংশয় প্রভৃতি সবরকম ভাবই, তথা পঞ্চেন্দ্রিয় চেতনার সব জ্বালা, অভিলাষ ও বাসনা নিয়ে প্রেম সামগ্রিকরূপে কবির কাব্যে অভিব্যক্ত।
কবির ভাষায়, “এই ধূলির ধরায় প্রেম ভালোবাসা — আলেয়ার আলো। সিক্ত হৃদয়ের জলাভূমিতে এর জন্ম। ভ্রান্ত পথিককে পথ হতে পথান্তরে নিয়ে যাওয়াই এর ধর্ম।”

নজরুলের প্রেমচেতনা কেবল ব্যক্তিগত জীবন-ভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তাঁর প্রেম সমগ্র বিশ্বমানবের মুক্তির পথের দিশা।
“গাহি সাম্যের গান —
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান,
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি…”

মানবপ্রেমী কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ