চলে গেলেন বরেণ্য সংগীত পরিচালক, সুরকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলম আলম খান

প্রকাশিত: ১:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২২

চলে গেলেন বরেণ্য সংগীত পরিচালক, সুরকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলম আলম খান

বিনোদন প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৮ জুলাই ২০২২ : চিরতরে চলে গেলেন ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস’- এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার, বরেণ্য সংগীত পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলম খান।

শুক্রবার (৮ জুলাই ২০২২) বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে রাজধানী শ্যামলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

আলম খানের ছেলে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আরমান খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

২০১১ সালে ফুসফুসে ক্যানসারে আক্রান্ত হন আলম খান। দীর্ঘদিন দেশ ও বিদেশে চিকিৎসা চলছিল তাঁর।

পপ সম্রাটখ্যাত আজম খানের আপন বড় ভাই আলম খানের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

ছেলে আরমান খান জানান, আজ বাদ আসর এফডিসিতে আলম খানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দাফন হবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মসজিদুল আউলিয়া হযরত খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (র.) এর প্রাঙ্গণে। সেখানে জান্নাতুল ফেরদৌস কমপ্লেক্সে স্ত্রীর কবরের পাশে শায়িত হবেন তিনি।

সেক্রেটারিয়েট হোম ডিপার্টমেন্টের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আফতাব উদ্দিন খানের সন্তান গুণী সংগীত ব্যক্তিত্ব আলম খান ১৯৪৪ সালে সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা জোবেদা খানম ছিলেন গৃহিণী। সংগীতজ্ঞ আলম খানের পুরো নাম খুরশিদ আলম খান।

১৯৬৩ সালে রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে ‘তালাশ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সংগীত পরিচালনায় আসেন আলম খান। এরপর ১৯৭০ সালে চলচ্চিত্রকার আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘কাচ কাটা হীরে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম এককভাবে সংগীত পরিচালনা শুরু করেন।

বিখ্যাত এই সুরকারের সুর করা প্রথম জনপ্রিয় গান ‘তবলার তেড়ে কেটে তাক’। গানটি ‘স্লোগান’ ছায়াছবির। এরপর ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রে আবদুল জব্বারের গাওয়া ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি অনন্যতা পায়।

১৯৮২ সালে ‘রজনীগণ্ধা’ চলচ্চিত্রে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’ এবং ‘বড় ভালো লোক ছিল’ চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হক রচিত ও এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।

‘বড় ভালো লোক ছিল’ চলচ্চিত্রের জন্য আলম খান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

আলম খানের সুর ও সংগীত পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য কিছু গান হলো—‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘হীরামতি হীরামতি ও হীরামতি’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘বুকে আছে মন’, ‘ সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনোদিন নয়’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী’, ‘মনে বড় আশা ছিল’ ইত্যাদি।

আলম খান ১৯৭৬ সালে হাবিবুননেসা গুলবানুকে বিয়ে করেন। গুলবানু একজন গীতিকার। আলম খানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া ‘তুমি তো এখন আমারই কথা ভাবছ’ গানটির গীতিকার গুলবানু। তিনি মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তাঁদের দুই ছেলে আরমান খান ও আদনান খান—দুজনই সংগীত পরিচালক এবং একমাত্র মেয়ে আনিকা খান।

প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলম খান- এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, এই বরেণ্য সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব বাংলা সঙ্গীত অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। চলচ্চিত্র সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।

রাষ্ট্রপতির শোক

রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ আজ মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলম খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন।
এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপ্রধান মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলম খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান এমপি ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

সৈয়দ অামিরুজ্জামানের শোক

ওরে নীল দরিয়া’, ‘হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস’- এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার, বরেণ্য সংগীত পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলম খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, সাপ্তাহিক নতুন কথার বিশেষ প্রতিনিধি, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ অামিরুজ্জামান।