ড: স্টিফেন হকিং এর ভবিষ্যৎ বাণী, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ- লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২২

ড: স্টিফেন হকিং এর ভবিষ্যৎ বাণী, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ- লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

সুরাজ দেবনাথ |

সম্প্রতি প্রকাশিত নাসার বিস্ময়কর যে ছবিগুলো আমারা প্রত্যক্ষ করছি সেগুলো মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলোর বর্তমান অবস্থা নয়। এগুলি ১৩শ’ কোটি বছরেরও আগের গ্যালাক্সি গুলোর ঘনত্ব , উজ্জ্বলতা ও গ্রহ-নক্ষত্রের বিন্যাসের চিত্র।
গ্যালাক্সিগুলোর বর্তমান অবস্থা জানতে হলে তার জন্য পুনরায় অপেক্ষা করতে হবে আরো ১৩শ’ কোটি বছরেরও অধিক সময়।

জ্যোতির পদার্থবিদ ড. স্টিফেন হকিং।

হকিং এর ভবিষ্যৎ বাণী :

জ্যোতির পদার্থবিদ ড: স্টিফেন হকিং যাকে আইনস্টাইনের পর বিখ্যাত পদার্থবিদ মনে করা হয় তাঁর বিশ্বাস – পারমাণবিক যুদ্ধ বা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে তৈরি ভাইরাস অথবা অন্য কোন কারণে পৃথিবীতে প্রাণের অবসান হতে পারে। মানুষ যদি মহাকাশে না যায় তাহলে মানবজাতির কোন ভবিষ্যৎ নেই।
চীনের বেজিংয়ে শীর্ষ সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় তিনি আরোও সতর্ক ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন- দ্রুত হারে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের জন্য বিশ্বব্যাপী শক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের মাত্রা যে হারে বাড়ছে তার জন্যে আগামী ২৬০০ সালের মধ্যে ( ৬০০ বছর পর ) এই গ্রহ পুরো মাত্রায় অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হয়ে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে অন্য কোনো গ্রহে মনুষ্য-সভ্যতা স্থানান্তরের প্রয়োজন হতে পারে – টেলিগ্রাম অবলম্বনে।

জেমস ওয়েব এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

এমনি এক বাস্তব বিশ্ব পরিস্থিতিতে
১ হাজার কোটি ডলার বা ১ লাখ কোটি টাকার
বেশি ব্যয়ে ২০ হাজার বিজ্ঞানীর ৩০ বছরের গবেষণা ও পরিশ্রমে নির্মীত হয়েছে এই স্পেস টেলিস্কোপটি ।
তাই একটি সাধারণ প্রশ্ন এই বিপুল অর্থ ব্যয়ে জেমস ওয়েবের মহাকাশ অভিযানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি ?

পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কি.মি. দূরে অবস্থিত (হাবলের দূরত্ব ছিল মাত্র ৫৪৭ কি.মি) হাবলের চেয়ে ৩ গুণ বড় ও ১০০ শ’ গুণ বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন জেমস ওয়েবের উদ্দেশ্য হলো
২ টি :

১ম টি –
প্রায় ১৪ শ’ কোটি বছর আগের [ বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড সৃষ্টির শুরুর দিক ] মহাবিশ্বের আদি অবস্থার চিত্র ধারণ করে ছায়াপথ ও এর গ্রহ-নক্ষত্রের জন্ম রহস্য উদঘাটন।
নাসার বিজ্ঞানী (প্রশাসক) বিল নেলসন বলেছেন – প্রায় ১৪ শ’ কোটি বছর আগের অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরুর দিককার ছবি নাসা শীঘ্রই প্রকাশ করবে। – বিবিসি ।

২য় টি হলো –
মহাবিশ্বের দূর-দূরান্তের কোন গ্রহ প্রাণ ধারণের উপযোগী কিনা তা অনুসন্ধান করা।

ইতিমধ্যে জেমস ওয়েব ১১৫০ আলোক বর্ষ দূরের ডব্লিউএএসপি – ৯৬বি নামের [ নাসার প্রদত্ত নাম ] একটি গ্রহের আকাশে মেঘ ও কুয়াশা দেখতে পেয়েছে। আগে মনে করা হতো তপ্ত ঐ গ্রহের আকাশ মেঘ-কুয়াশা মুক্ত একেবারে পরিস্কার। প্রধানত হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়ে গঠিত ঐ গ্যাসদানব এক্সোপ্লানেটটি [ সৌরমন্ডলের বাইরের গ্রহ ] আমাদের সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।

এমন এক সময় ছিলো যখন যাজক সম্প্রদায়সহ দার্শনিক এরিস্টটল বা টলেমীর তত্ত্ব ছিল বিশ্বজগতের কেন্দ্র হলো পৃথিবী। আর এমন ধারণাকে ভিত্তিহীন ঘোষণা দিয়ে কপারনিকাস বললেন কেন্দ্র হচ্ছে সূর্য (সৌরজগতের) যাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহরাজিসহ সকল বস্তু। এমনি এক অবৈজ্ঞানিক অজ্ঞানতার অন্ধকার যুগ পেরিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত আসতে বিজ্ঞানের যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি তাতে হয়তো আর বেশি যুগ অপেক্ষা করতে হবে না যখন বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে ঘোষণা আসবে মহাবিশ্বের কোনো এক গ্রহে প্রাণের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে।

মানব সভ্যতা অপেক্ষায় রইলো সেই মহাশুভক্ষণের।

তাং ০৩.০৮.২০২২ ইং

১৩৫০ কোটি বছর অাগের মহাবিশ্বের গ্যালাক্সির এসএমএসিএস ০৭২৩ নামের একটি অংশ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ