সিলেট ২২শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:০৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২৫
বিশেষ প্রতিনিধি | মৌলভীবাজার | ১৯ অক্টোবর ২০২৫ : “মাছে-ভাতে বাঙালী। মাছ-ভাতের চাহিদা পূরণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার আন্দোলনে সামিল হোন।”- এই প্রতিপাদ্য ও শ্লোগানকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের হাওরাঞ্চলে কৃষিজমি শ্রেণি পরিবর্তন করে অপরিকল্পিতভাবে সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিবাদকারীরা দাবি করেছেন, এসব প্রকল্পের ফলে প্রায় ১৫ হাজার কৃষক ও মৎস্যজীবীর জীবন-জীবিকা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে জেলা প্রেসক্লাবের সামনে হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার জেলা শাখার আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সদর উপজেলার ৪নং আপার কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া এলাকার কৃষক, শ্রমিক, মৎস্যজীবী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হাওর রক্ষা আন্দোলনের জেলা আহবায়ক আ. স. ম. সালেহ সোহেল এবং সঞ্চালনা করেন নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ শাহিন ইকবাল।
প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ও পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুল করিম কিম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা শাখার সদস্য সচিব এম. এ. খসরু চৌধুরী, সমন্বয়ক মো. খায়রুল ইসলাম, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক প্রভাষক মোহাম্মদ সেলিম, ডাক্তার রওশন আহমদ, কাউয়াদিঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি শামসুদ্দিন মাস্টার, এবং স্থানীয় কৃষক প্রতিনিধি আব্দুস সুবহানসহ অনেকে।
“বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও কৃষিজমি নষ্ট”
বক্তারা জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া গ্রামসহ আশপাশের এলাকা কৃষিনির্ভর। এখানকার প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের জীবন চলে হাওরের ধান ও মাছের উপর নির্ভর করে।
তারা অভিযোগ করেন, এসব কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে হাওরের প্রাণকেন্দ্রে ২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর আগেই Moulvibazar Solar PV Park নামে একটি কোম্পানি ১০০ একর কৃষিজমি ব্যবহার করে ১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে, যার ফলে ইতোমধ্যে হাওরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ফসলী জমি উৎপাদন হারিয়েছে।
বক্তাদের অভিযোগ, কোম্পানি প্রথমে স্থানীয়দের আশ্বাস দিয়েছিল— সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ধান ও মাছের কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু বাস্তবে সেই আশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে। বর্তমানে জমি শুকিয়ে যাচ্ছে, পানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের পথে।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি
প্রতিবাদকারীরা বলেন, নতুনভাবে পরিকল্পিত ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হাওরের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ জমিও কৃষি উৎপাদন হারাবে। এতে জলজ উদ্ভিদ, মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হবে।
তারা বলেন, “হাওর কেবল কৃষিজমি নয়— এটি একটি জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্র। এখানে সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট মানে কৃষি, মাছ, পরিবেশ ও মানুষ— সবকিছুর উপর সরাসরি আঘাত।”
পরিবেশবিদ ও স্থানীয় বক্তারা মনে করেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির উদ্যোগ নিলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করা উচিত।
“হাওর বাঁচলে কৃষক বাঁচবে, দেশ বাঁচবে”
মানববন্ধনে বক্তারা কৃষিজমি ও হাওরের পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় পর্যায়ে হস্তক্ষেপের দাবি জানান। তারা বলেন, দেশের সীমিত কৃষিজমি রক্ষায় সরকার যে নীতি নিয়েছে, সেটির লঙ্ঘন ঘটছে এসব প্রকল্পে।
তারা সতর্ক করে বলেন, “অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প যদি হাওরের ভারসাম্য নষ্ট করে, তাহলে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্যনিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।”
সমাবেশ শেষে সংক্ষিপ্ত মিছিল বের করা হয় এবং সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
প্রসঙ্গত
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পূবের হাওর বাংলাদেশের অন্যতম উৎপাদনশীল বোরো ধান উৎপাদন এলাকা। একই সঙ্গে এটি মাছের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের কৃষিজমি শ্রেণি পরিবর্তন করে শিল্পায়ন বা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকে পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে “অস্থিতিশীল উন্নয়ন” হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন।
সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি