পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিরত থাকছে ওয়ার্কার্স পার্টি

প্রকাশিত: ২:৪৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৫

পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে বিরত থাকছে ওয়ার্কার্স পার্টি

Manual6 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ : বাংলাদেশের চলমান গভীর রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে গণতান্ত্রিক পথযাত্রায় একটি অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সকল দলের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবী এদেশের জনগণ করে এসেছেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিও সেই দাবীর সংগে সহমত পোষণ করে একটি ভয়ভীতিহীন, লেবেলপ্লেয়িং ফিল্ড, ভোটার ও প্রার্থীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের নিরাপত্তা প্রত্যাশাসহ একটি অবাধ সুষ্টু অর্ন্তভূক্তি নির্বাচন প্রত্যাশ্যা করেছে। তার জন্য পার্টি প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছিল।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় মিডিয়া বিভাগের আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড মোস্তফা আলমগীর রতন কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক জাতির উদেশ্যে দেওয়া ভাষণ সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা ধ্বনিত হলেও বাস্তবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ধাপগুলো ক্রমান্বয়ে এখন ধুসর হয়ে উঠছে, দুরে সরে যাচ্ছে, নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলছে।
প্রথমতঃ নির্বাচন কমিশন বিশেষ রাজনৈতিক চাপে প্রথমেই নিরপেক্ষতা হারিয়ে নিবন্ধন থাকার পরও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অনেক দলকেই নির্বাচন প্রস্তুতি কালে সংলাপে ডাকে নাই ও চিঠিও প্রদান করে নাই। উপরন্তু ওয়ার্কার্স পার্টি ১০দফার একটি প্রস্তাবনা সিনিয়র সচিবের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল।

Manual7 Ad Code

দ্বিতীয়ত: তফসিল ঘোষণা পরবর্তীতে দেশে আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি ঘটেছে, রাজনৈতিক খুন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাহীনতা, গার্মেন্টস কর্মী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ দীপু দাসকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির আক্রমণে মাজার, পীরের খানকা, বাউলদের ওপর আক্রমণ, নির্বাচনী প্রার্থীর ওপর আক্রমণ, স্বনামধন্য দুটি জাতীয় দৈনিকের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া, বাংগালী জাতির অস্থিত্বের স্মারক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে আক্রমণ, উদীচীর অফিস জ্বালিয়ে দেওয়ার মত নির্মম ঘটনা ঘটেই চলেছে। মবতন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকল ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রন হারিয়েছে বলে প্রতিভাত হচ্ছে, যা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

তৃতীয়ত: নির্বাচন জামানতসহ সিডি কেনার যে শর্ত এবং অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে কালো টাকা উৎসারিত দল বা ব্যক্তিদের সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে, গণমানুষ, সৎ, যোগ্য মানুষকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা অবাধ, লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডকে অনুমোদন দেয় না, কালোটাকার প্রভাব মুক্ত নির্বাচনের কোন প্রতিপালন দেখা যাচ্ছে না।

Manual1 Ad Code

চতুর্থত: ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন থানা লুট হওয়া অস্ত্র, বর্তমান আইন শৃঙ্খলার অবনতিতে ব্যবহারিত বিভিন্ন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যাচ্ছে যা এখন পর্যন্ত উদ্ধার সম্ভব হয়নি। নির্বাচন চলাকালিন সময়ে ঐ সকল অস্ত্র নির্বাচনী সহিংসতায় ব্যবহৃত হবে বলে শঙ্কা বিদ্যমান। এই ব্যাপারে জনমনে তুমুল ভীতি, ভোটার ও প্রার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথকে সংকুচিত করছে।

পঞ্চমত: একটি নির্বাচনী গণতন্ত্রের ধারায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির অতীতে বহু নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, সংসদে ও সরকারে থেকে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে, দুভার্গ্যজনক হলেও সত্যি অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও তার সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় সরকারের সমর্থিত মবগোষ্ঠী ১৩ নভেম্বর ২০২৫ থেকে দখলে রেখেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর ১০ দফা প্রস্তাবের স্মারকলিপি ও দরখাস্ত প্রেরণের পরও তা উদ্ধার হয়নি, নির্বাচন কমিশনারের কোন উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি। পুলিশ, সেনাবাহিনী, কোর্টের আশ্রয় নেওয়া হলেও, কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। গোটা বিষয়টি একটি ভয়ভীতিহীন নিরপেক্ষ আচরণ নির্দেশিত করে না।

ষষ্ঠত: গায়েবী মিথ্যা মামলায় আটককৃত বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেননের মুক্তি, সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশার মিথ্যা মামলা, পলিটব্যুরোর সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য কমরেড রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, এড. টিপু সুলতান সহ বহু নেতা কর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কোন উদ্যোগ নেয়নি। ওয়ার্কার্স পার্টিকে রাজনৈতিক চাপে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে, যা নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।

Manual1 Ad Code

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুনরায় দ্বার্থ্যহীন ভাবে ওয়ার্কার্স পার্টি বলতে চায়, বিগত সরকারের ঘাড়ে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হওয়ায় দোষ চাপিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত ড: ইউনুসের সরকার পুনরায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেখে একপেশে নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছেন। পুনরায় একটি ভুল প্রক্রিয়ায় এদেশের জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশের ভোটারদের দলকে ও ভোটারকে নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দিচ্ছেন, যা আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্রের পথ মসৃণ হবে না। রাজনৈতিক সংকট এড়িয়ে দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা আসবে না। নতুন সংকটে দেশ পতিত হবে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এখনও মনে করে নির্বাচনের পরিবেশ ফেরাতে সরকারের উচিত হবে সকল পক্ষের জন্য নির্বাচনের পথকে বিকশিত করে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সেটি করতে না পারলে ব্যর্থতার দায়ভার অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে।

Manual8 Ad Code

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সর্বোচ্চ উদ্যোগ রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করলেও উপরিউল্লেখিত পরিস্থিতি নির্বাচনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে রেখেছে বিধায়, আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

চলমান সংকট থেকে মুক্তি পেতে দেশের জনগণের প্রতি ওয়ার্কার্স পার্টির আহবান মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতার চেতনা উর্দ্ধে রেখে, অসম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপক্ষে ’৭২ এর সংবিধানের ভিত্তিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের সার্বভৌম রক্ষায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও উগ্র ধর্মান্ধ দক্ষিণপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। জীবন জীবিকার সংগ্রামে গরীব মেহনতী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি ন্যায্যতার সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ