বইয়ের ফেরিওয়ালা মোতাহার হোসেন মাহবুব ভাই

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০২৩

বইয়ের ফেরিওয়ালা মোতাহার হোসেন মাহবুব ভাই

Manual8 Ad Code

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১২ নভেম্বর, ২০২৩ : মোতাহার হোসেন মাহবুব। কুমিল্লা নগরীর পূর্ব মাথা নূরপুর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস। রিকশা বা অটো রিকশায় কম চড়েন। হাতে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে হাঁটতে থাকেন। কখনো চলে যান বাগিচা গাঁও, কখনো অশোকতলা কিংবা পুরাতন চৌধুরীপাড়া। পথে পরিচিতজনদের মাঝে বই বিতরণ করেন। কেউ সম্মানী দেন, কেউ দেন না। এটা তার চার দশকের রুটিন। অনেকে কুমিল্লা নগরীতে তাকে বইয়ের ফেরিওয়ালা বলে জানেন। তিনি আমৃত্যু এভাবেই চলতে চান।

Manual4 Ad Code

১৯৫৮ সালে তার জন্ম। তবে বয়স এখনো তাকে ছুঁতে পারেনি। নিজে বই লিখে ও সম্পাদনা করে মানুষের হাতে পৌঁছে দেন। ১৯৮১ সাল থেকে সাহিত্য সংস্কৃতির ম্যাগাজিন ‘আপন’ প্রকাশনা করছেন। এটি কুমিল্লা থেকে নিয়মিত দীর্ঘ সময় ধরে প্রকাশিত ম্যাগাজিন। ম্যাগাজিনটির দেশের ৩৮ জেলায় প্রচার রয়েছে। এতে লিখছেন কলকাতার লেখকরাও। স্বাধীনতা আন্দোলন, ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে লিখেছেন ১৩টি বই। কুমিল্লায় বঙ্গবন্ধু নামে একটি বইও লিখেছেন। তার ম্যাগাজিনে নবীন-প্রবীণ সবার লেখা প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি বিনয় সাহিত্য সংসদ নামের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। মোতাহার হোসেন মাহবুব স্থানীয় একটি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার। বই ও ম্যাগাজিন প্রকাশনা চালাতে গিয়ে পৈতৃক জমি বিক্রি করেছেন। পরিবারের বিরাগভাজন হয়েছেন। ঢাকায় লেখা সংগ্রহ করতে গিয়ে টাকা ফুরিয়ে যায়। রেল স্টেশনে ঘুমিয়েছেন। চায়ের দোকানে ওয়েটারের কাজ করেছেন।

Manual1 Ad Code

মোতাহার হোসেন মাহবুব বলেন, স্কুল জীবনে লেখার পোকা মাথায় ঢুকে। লিখে, প্রকাশ করে এবং বিতরণে আমি আনন্দ পাই। বলতে পারেন আমি আনন্দ ফেরি করে ফিরি। এখন মানুষ বই পড়তে চায় না, মোবাইল ফোন আর টিভিতে ডুবে থাকে। বই হাতে পৌঁছে দিলে, প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অনেকে বই পড়েন। এসব করতে গিয়ে পৈতৃক জায়গা-জমি হাতছাড়া হয়েছে। ১৯৯৪ সালে ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে গিয়ে অর্থ সংকট লাগে। তিন গন্ডা জমি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সেই জমির দাম এখন ২০ লাখেরও বেশি। বসতভিটা ছাড়া কিছু নেই। লেখা সংগ্রহ করতে গিয়ে কত স্মৃতি। ১৯৮২ সালের দিকে একজনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছি। তখন মোবাইল ছিল না। তিনি পরের দিন আসতে বললেন। ফেরি পাড়ি দিয়ে বাসে ঢাকায় গিয়েছি। আবার আসতে ভাড়া লাগবে। তাই রাতে রেল স্টেশনে ঘুমিয়েছি। একবার গুলিস্তানের বিপরীতে এক হোটেলে উঠেছি। সঙ্গে চাচাতো ভাই মনজুর। হোটেলে ব্যাগ রেখে বাইরে গেছি। এসে দেখি চোর ঢুকে ব্যাগের সব নিয়ে গেছে। আরেকবার কাক্সিক্ষত লোকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে থাকা ও খাওয়ায় টাকা শেষ। তখন কুমিল্লার বাস ভাড়া ছয় টাকা। সঙ্গে আছে দুই টাকা। কমলাপুর রেল স্টেশনের বিপরীতে চায়ের দোকানে দিনভর কাজ করে পাঁচ টাকা পেয়েছি। সেই টাকায় বাড়ি ফিরেছি। তবে মানুষের যে ভালোবাসা, সম্মান ও স্নেহ পেয়েছি, তা বর্ণনা করার মতো নয়।
তার স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, ১৯৮১ সালে বিয়ের পর থেকে দেখছি বাইরে বই বিতরণ আর বাসায় বই পড়া ও লেখায় ব্যস্ত। পারিবারিক কাজের চাপ দিলে অভিমান করে বলেন, আমার কাজের মূল্য তুমি বুঝলে না। প্রথম দিকে বিরক্ত লাগলেও এখন সয়ে গেছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ