সিলেট ২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ : সাংবাদিকতায় প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ ধারার অন্যতম প্রবর্তক, দৈনিক সংবাদ-এর প্রধান সম্পাদক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদুল কবির (মনু মিয়া)-এর ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৩ সালের এই দিনে কলকাতার এপোলো গ্লেনইগল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল থেকে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালের পারিবারিক কবরস্থানে পরিবার ও আহমদুল কবির (মনু মিয়া) স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া মাহফিল, কোরআন খতম ও কাঙালি ভোজসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চ্যাটার্জী জানান, দিনের শুরুতে পারিবারিক মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনে এক অসামান্য ব্যক্তিত্ব
ব্রিটিশ ভারত, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশ—তিনটি রাজনৈতিক পর্বেই নেতৃত্ব, চিন্তা ও নীতিনিষ্ঠতার স্বতন্ত্র পরিচয় রেখে গেছেন আহমদুল কবির। পাকিস্তান আমলে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও একই আদর্শকে সমুন্নত রাখেন। সত্তরের দশকে তার নেতৃত্বেই গঠিত হয় গণতন্ত্রী পার্টি; মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দলের সভাপতি ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—ডাকসুর প্রথম নির্বাচিত ভিপি ছিলেন তিনি (১৯৪৫–৪৬)। ১৯৬৫ সালে ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে নরসিংদী-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দু’বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তার অবদান তাকে আলাদা মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। দৈনিক সংবাদ-এর সম্পাদক হিসেবে বস্তুনিষ্ঠ, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারার সাংবাদিকতায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন তিনি। পাকিস্তানি সামরিক শাসনের সময় সংবাদ পত্রিকাটি পুড়িয়ে দেওয়া এবং নানা প্রলোভন সত্ত্বেও সংবাদ প্রকাশে অস্বীকৃতি জানান—যা তার অটল নীতিনিষ্ঠতার উজ্জ্বল উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সংবাদ পুনরায় প্রকাশ করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
শিল্পোদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি
অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় কর্মজীবন শুরু করেন, যেখানে ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে পাকিস্তান সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন এবং ১৯৫১ সালে গ্যাট সম্মেলনে অংশ নেন। ১৯৫৪ সালে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন এবং শিল্প-বাণিজ্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার ছিল সক্রিয় উপস্থিতি। ফাও ও ইইসি দেশগুলোর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি—কখনও প্রতিনিধি দলের প্রধান—হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
পারিবারিক পটভূমি ও উত্তরসূরি
১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর ঘোড়াশালে জমিদার পরিবারে জন্ম আহমদুল কবিরের। বাবা আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ও মা সুফিয়া খাতুন। স্ত্রী বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা লায়লা রহমান কবির। দুই ছেলে—আলতামাশ কবির (বর্তমান প্রধান সম্পাদক, দৈনিক সংবাদ) ও আরদাশির কবির (চা শিল্প ব্যবসায়ী), এবং একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার নিহাদ কবির সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত।
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা
২২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আহমদুল কবিরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা তার অবদান স্মরণ করে বলেন—দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
আদর্শ, নীতিনিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজও তিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছেন।
দৈনিক ‘সংবাদ’-এর প্রধান সম্পাদক, দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদুল কবিরের (মনু মিয়া) ২২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান।

সম্পাদক : সৈয়দ আমিরুজ্জামান
ইমেইল : rpnewsbd@gmail.com
মোবাইল +8801716599589
৩১/এফ, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০।
© RP News 24.com 2013-2020
Design and developed by ওয়েব নেষ্ট বিডি