জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ও বৈষম্য

প্রকাশিত: ২:০২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২৫

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ও বৈষম্য

Manual1 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ও বৈষম্য বৈষম্য বেড়েই চলেছে।

Manual6 Ad Code

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর ভবিষ্যতের সতর্কবার্তা নয়—এটি প্রতিদিনের বাস্তবতা। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও তাপপ্রবাহের মতো চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ দেশের প্রায় সব স্তরের মানুষের জীবন-জীবিকায় ধারাবাহিক ক্ষতি ডেকে আনছে। তবে এর প্রভাব যে সকলের ওপর সমান নয়, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে নারী ও পুরুষের অভিজ্ঞতার পার্থক্যের মধ্য দিয়ে।
সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য জলবায়ু সংকটের অভিঘাতকে নারীদের জন্য আরও বাড়িয়ে তুলছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের যাওয়ার পথে সামাজিক বাধা

ঘূর্ণিঝড় বা নদীভাঙনের মতো দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো জীবন বাঁচানোর শেষ ভরসা। কিন্তু বাস্তবে অনেক নারী–বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলের প্রয়োজনে—সেসব কেন্দ্রে যেতে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। গোপনীয়তা রক্ষা, উপযুক্ত স্যানিটেশন সুবিধার অভাব, পুরুষদের ভিড়ে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা এবং সামাজিক রক্ষণশীলতা তাদের কাজ করতে নিরুৎসাহিত করে। ফলে দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ে বহুগুণ।

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পানি সংগ্রহের অতিরিক্ত বোঝা

বন্যা ও লবণাক্ততার বিস্তারে বহু অঞ্চলের পানির উৎস দূষিত বা অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। নিরাপদ পানির খোঁজে নারীদেরকে আগের তুলনায় আরও দূরে, কখনো কখনো কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়। এতে সময়, পরিশ্রম এবং শারীরিক ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে ঘরের ভেতরের সব কাজ—রান্না, শিশুর দেখভাল, বয়স্ক সেবাযত্ন—সবকিছুর চাপ তাদের কাঁধেই পড়ে।

Manual2 Ad Code

কৃষিজ উৎপাদন কমে গিয়ে আয়ের বৈষম্য আরও প্রকট

গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাদের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সীমিত। খরা, অতিবৃষ্টি বা লবণাক্ততার কারণে কৃষিজ উৎপাদন কমে গেলে নারীরা কাজ হারান দ্রুত, কিন্তু বিকল্প আয়ের সুযোগ পান না। পুরুষরা অনেক সময় অন্য জেলায় গিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে পারেন, কিন্তু নারীদের পক্ষে তা সাধারণত সম্ভব হয় না। ফলে তারা আরও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়েন।

কিশোরীদের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত, বেড়ে যায় ঘরোয়া শ্রম

Manual4 Ad Code

দুর্যোগ-পরবর্তী সময় পরিবারের সদস্যরা যখন জীবিকা পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন, তখন মেয়েদের ওপর বাড়ে বাড়তি কাজের চাপ। ভাইবোনদের দেখাশোনা, রান্নাবান্নায় সহায়তা কিংবা পানির জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া—এসব কারণে অনেক কিশোরী স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। এর প্রভাব পড়ে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক অবস্থানের ওপর।

গর্ভবতী ও প্রসূতি নারীদের বাড়তি ঝুঁকি

দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় চিকিৎসা সুবিধার ঘাটতি সব সময়ই বড় সমস্যা। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো অচল হয়ে গেলে সবচেয়ে বিপদে পড়েন গর্ভবতী ও প্রসূতি নারীরা। জরুরি সেবা না পেয়ে জটিলতা এবং মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া খাদ্য সংকট ও আয় কমে যাওয়ায় পুষ্টিহীনতা বাড়ে, যা মা ও শিশুর জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনে।

লিঙ্গসংবেদনশীল নীতি-প্রয়োগ জরুরি

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নারী ও পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে নীতি নির্ধারণ করা জরুরি। দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে নারী-সংবেদনশীল অবকাঠামো, নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ সুযোগ, কিশোরীদের শিক্ষায় সহায়তা এবং নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর ওপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন।

স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনায় যুক্ত করা হলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব—এমন মন্তব্যও করেছেন গবেষকরা।

উপসংহার

জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সংকট হলেও এর ক্ষতি সামাজিকভাবে অসমভাবে বিতরণ হচ্ছে। নারী ও কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক জায়গায় তাদের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত। জলবায়ু নীতি ও কর্মসূচিকে লিঙ্গসমতা-ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক না হলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। টেকসই উন্নয়ন ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যতের জন্য নারী-সংবেদনশীল জলবায়ু উদ্যোগ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

Manual7 Ad Code

 

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ