বাপ-দাদার জমিতে পূর্ণ অধিকার চান সাঁওতালরা

প্রকাশিত: ২:২৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২০

বাপ-দাদার জমিতে পূর্ণ অধিকার চান সাঁওতালরা

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি, ০৯ নভেম্বর ২০২০: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতাল বসতি উচ্ছেদের সময় বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ, নির্যাতন, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডের চতুর্থ বর্ষপূর্তিতে ‘সাঁওতাল হত্যাদিবস’ পালন করা হয়েছে। বাপ-দাদার জমিতে পূর্ণ অধিকার ও সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূল হোতাদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

শুক্রবার সকালে সাঁওতাল পল্লী জয়পুর মাদারপুরে উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে আদিবাসী বাঙালিরা পুস্পস্তবক অর্পণ করে মোমবাতি প্রজ্জলন ও নীরবতা পালনের মাধ্যমে দিনটির কর্মসূচি শুরু করেন। পরে ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও বাদ্য যন্ত্র নিয়ে দাবি দাওয়া সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন হাতে একটি লাল পতাকা মিছিল গোবিন্দগঞ্জ -দিনাাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এসে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেয়।
মিছিল থেকে সাঁওতাল বাঙালি নারী-পুরুষ নানা শ্লোগানে রাজপথ মুখর করে তোলেন। এইসব কর্মসূচি যৌথভাবে আয়োজন করে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, জনউদ্যোগ ও আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদ। সংগঠনগুলো সাঁওতাল হত্যা দিবস উপলক্ষে ১ নভেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী আলোচনাসভা, শোক মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

শহীদ মিনারের সমাবেশে সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি শহীদ আলফ্রেড সরেনের বোন রেবেকা সরেন, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদর আহবায়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, জন উদ্যোগের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, সিপিবি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, ভূমি অধিকার কর্মী অ্যাড. রফিক আহমেদ সিরাজী, আদিবাসী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, সিপিবি নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি মহসিন রেজা, আদিবাসী ইউনিয়নের উপদেষ্টা বদিউজ্জামান, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল গণি রিজন, সিপিবি উপজেলা কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, আদিবাসী পরিষদের নেতা অ্যাড. বাবুল রবিদাস, আদিবাসী নেতা সুনীল খালকো, সুফল হেমব্রম, প্রিসিলা মুর্মু, অলিভিয়া হেমব্রম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে আদিবাসী বসতি উচ্ছেদের নামে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু, মার্ডির হত্যাকাণ্ডের পর চার বছর অতিবাহিত হলেও ঘটনার মূল হোতারা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হত্যাকারী ও ইন্ধনদাতারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই নির্মম ঘটনার সাথে জড়িত মূল অপরাধীদের বাদ দিয়ে পিবিআইএর দেওয়া চার্জশিটকে গ্রহণযোগ্য নয় দাবি করে প্রত্যাখান করেছেন আদিবাসীরা। তাদের অভিযোগ দায়িত্ব পেয়েও সিআইডি তদন্তও ঢিলেঢালাভাবে করা হচ্ছে। অন্যদিকে আদিবাসীরা নতুন করে চাষাবাদ শুরু করলেও তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
বক্তরা আরো বলেন, বিকল্প জায়গা থাকা সত্বেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল কৃষি জমিতে তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আদিবাসীদের পৈত্রিক সম্পত্তির দখলের পাঁয়তারা করছে। যা সম্পূর্ণ আদিবাসী সাঁওতালদের স্বার্থ পরিপন্থী। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সাঁওতাল বাঙালিসহ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তারা। তারা ওই জমি তাদের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় হস্তান্তরেরও দাবি জানান।

ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতাল বসতি উচ্ছেদের সময় বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ, নির্যাতন, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ডের চতুর্থ বর্ষপূর্তিতে সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূল হোতাদের বিচারের অাওতায় নিয়ে অাসাসহ তাদের বাপ-দাদার জমিতে পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান।