একজন শ্রমিকের মাসিক আয় ৫২ হাজার টাকা হওয়া উচিত

প্রকাশিত: ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ, মে ১, ২০২৩

একজন শ্রমিকের মাসিক আয় ৫২ হাজার টাকা হওয়া উচিত

Manual4 Ad Code

অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন | ঢাকা, ০১ মে ২০২৩ : করোনা মহামারির পর মূল্যস্ফীতির কারণে পারিবারিক ব্যয় অনেক বেড়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের আয় বাড়েনি। তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের দুজন সদস্য কাজ করেও ব্যয় নির্বাহ করা যাচ্ছে না।

২০২১ সালে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, সে সময় শ্রমিকদের পরিবারের মাসিক গড় ব্যয় ছিল ২৪ হাজার ৩৭৩ টাকা। অথচ সামগ্রিকভাবে দুজনে কাজ করেও আয় হয় ২১ হাজার ৬৪২ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি মাসেই তাদের ধার করে চলতে হচ্ছে। দেশের বিদ্যমান মজুরি কাঠামো তৈরি পোশাকশ্রমিকদের ঋণের চক্রে ঠেলে দিচ্ছে।

Manual5 Ad Code

এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স (এফডব্লিউএ) শনিবার (২৯ এপ্রিল ২০২৩) এক অনলাইন আলোচনায় এসব তথ্য দিয়েছে। ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে ৬৩টি কারখানার ৩০০ শ্রমিকের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে এ তথ্য দিয়েছে এফডব্লিউএ।

প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, পরিবারের ভরণপোষণ করতে ২০২২ সালে দেশের একজন শ্রমজীবী মানুষের মাসিক আয় হওয়া উচিত ছিল ৫১ হাজার ৯৯৪ দশমিক ৫১ টাকা। একজন মানুষের দৈনিক ৩ হাজার ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, সেই মানদণ্ডে মাসিক আয় এমন হওয়া উচিত বলে জানিয়েছে এফডব্লিউএ। তারা মনে করে, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৩ হাজার ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বা দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ও দুজন শিশু আছে, এমন পরিবারের জন্য মাসে প্রায় ৫২ হাজার টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে এফডব্লিউএ। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত—উভয় ব্যয় মিলিয়েই এই অর্থ প্রয়োজন। পরিবারের একজন সদস্য কাজ করবে, সেই বিবেচনায় তারা এই হিসাব দিয়েছে।

Manual2 Ad Code

এফডব্লিউএ মনে করে, বর্তমানে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় শ্রমিক পরিবারের শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বাড়বে। বাধ্য হয়ে অনেক শ্রমিক শিশুদের কাজে পাঠাবেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে ২৪ হাজার ৩৭৩ টাকার পারিবারিক ব্যয়ের মধ্যে খাদ্য বাবদ ব্যয় হয় এর ৪৪ শতাংশ বা ১০ হাজার ৭৫৪ টাকা। খাদ্যবহির্ভূত, অর্থাৎ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা, পোশাক—এসব বাবদ ব্যয় হয় ৫৬ শতাংশ বা ১৩ হাজার ৬১৯ টাকা।

এফডব্লিউএর বাংলাদেশ সমন্বয়ক আরিফুর রহমান অনুষ্ঠানে জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকেরা দৈনিক মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে ১ হাজার ৯৫০ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করছেন। অথচ ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে গেলে একজন মানুষকে দিনে ২ হাজার ১২২ ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহণের ক্ষেত্রে এ ঘাটতি গুরুতর উদ্বেগের কারণ বলে তিনি আখ্যা দেন।

এফডব্লিউএর তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে ভারতের একজন শ্রমজীবী মানুষের আয় হওয়া উচিত ছিল ৩৩ হাজার ২১১ রুপি। পাকিস্তানে ৬৫ হাজার ৭৯৬ রুপি ও শ্রীলঙ্কায় ৯২ হাজার ৪২৭ রুপি।

এদিকে মূল্যস্ফীতির চাপে বাংলাদেশের ৭৪ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার ধার করে চলছে বলে সম্প্রতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-সানেমের এক জরিপে উঠে এসেছে। মার্চে প্রকাশ করা ওই জরিপে বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে এসব পরিবারের ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ, কিন্তু তাদের আয় বাড়েনি।

Manual5 Ad Code

দেশের গ্রাম ও শহরের নিম্ন আয়ের পরিবারের ওপর করা এই জরিপে যেসব পরিবার অংশ নিয়েছে, তাদের ৯০ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, অর্থনৈতিক চাপে তাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বাজার অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি।

Manual3 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ