বিনা ধান ২৫ আবিষ্কার বিজ্ঞানী ড. সাকিনার : ১ কেজি বীজ থেকে পাওয়া যাবে ৮০ কেজি ধান

প্রকাশিত: ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০২৩

বিনা ধান ২৫ আবিষ্কার বিজ্ঞানী ড. সাকিনার : ১ কেজি বীজ থেকে পাওয়া যাবে ৮০ কেজি ধান

Manual5 Ad Code

কৃষি বিষয়ক প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৯ মে ২০২৩ : ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি যে ১ কেজি ধান বীজ থেকে পাওয়া যাবে ৮০ কেজি ধান।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট “Bangladesh Institute of Nuclear Agriculture” (BINA)-এর বিজ্ঞানী ড. সাকিনা খানম এমনি এক ধান বীজ আবিষ্কার করেছেন। এ বীজের নাম ‘বিনা ধান ২৫’।
ড. সাকিনা খানমের চেষ্টায় ৮ বছরের গবেষণায় দেশে প্রথমবারের মতো অতি লম্বা ও সবেচেয়ে সরু ধান আবিস্কার করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে মোটা চাল চিকন করে প্রিমিয়াম কোয়ালিটি বলে কর্পোরেটরা চালাতে পারবে না। সাধারণ জনগণও ঠকবেনা।
ড. সাকিনা খানমের আবিষ্কৃত বিনা ধান ২৫ বোরো ধানের জাত হলেও এই ধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। তাছাড়া ধান চাষে পানি ও ইউরিয়া সার কম লাগে। এরই মধ্যে এর পরীক্ষামূলক প্রমাণও পেয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের। এখন কৃষকদের এ ধান চাষে উৎসাহিত করতে হবে।
এ বছর সারাদেশেই স্বল্প পরিসরে চাষ হয়েছে এই ধান। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত আকর্ষণীয় ও রপ্তানিযোগ্য বিনা ধান-২৫ আবাদে আশার আলো দেখছেন গবেষকরা।

Manual4 Ad Code

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দেশের চাহিদা অনুসারে সরু ও চিকন (প্রিমিয়াম কোয়ালিটি) চাল অপ্রতুল থাকায় এবং বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিনার উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ বিনা ধান-২৫ উদ্ভাবন করে। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিনা ধান-২৫ জাতের উন্মোচন করা হয়। উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খানমের ৮ বছরের গবেষণায় আসে সাফল্য। বিনা ধান-২৫ বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাবে।

Manual5 Ad Code

বিনা ধান-২৫ মূলত ব্রি ধান-২৯ এর বীজে জাপানের একটি ল্যাবে ৪০ গ্রে মাত্রার কার্বন আয়রন রশ্মি প্রয়োগ করে উদ্ভাবন করা হয়। যা চেকজাত ব্রি ধান ৫০ থেকে দশ শতাংশ ফলন ও প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন এবং আগাম পরিপক্ক। গড়ে ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিনে এই ধান ঘরে তোলা যায়। এ ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে সাত থেকে সাড়ে আট মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত ধান জাতের মধ্যে বিনা ধান ২৫ সর্বাধিক লম্বা ও সরু। জমিতে পানি জমে থাকলে এবং বৈরী আবহাওয়ায় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে গাছ সাময়িক হেলে পড়লেও জমি থেকে পানি সরে গেলে এবং রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থায় জাতটি ২-৩ দিনের মধ্যে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসে ও স্বাভাবিক ফলন দেয়।

বিনা ধান-২৫ এর গবেষক ড. সাকিনা খানম বলেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো ধানের জাত আবিষ্কার হয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে লম্বা এবং সরু বিনা ধান-২৫। এই ধান স্বল্পমেয়াদি, জীবনকাল খুবই কম। ব্রি ধান-২৯ এর চেয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পেকে যায়। কৃষক সারাদেশে এ বছর চাষ করেছে। এ ধান চাষ করে কৃষকরা খুবই খুশি।

তিনি আরও বলেন, এই ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ৮ মেট্রিক টন। এটি যেমন প্রিমিয়াম কোয়ালিটি, অল্প জীবনকাল এবং ফলনও বেশি। গাছটি লম্বা বেশি হওয়ায় কৃষক খড় পাবে প্রচুর। প্রচলিত বোরো ধানের জাতের চেয়ে এই ধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। এ ধান চাষে পানি যেমন কম লাগে ইউরিয়া সারও কম লাগে। এ জন্য বিনা ধান-২৫ কে ইউরিয়া এবং পানি সাশ্রয়ী, বালাইনাশক সাশ্রয়ী জাতও বলা যায়।

Manual4 Ad Code

বিনা ধান ২৫ আবিষ্কার করলেন বিজ্ঞানী ড. সাকিনা

Manual1 Ad Code

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ২৬টি ধানের জাত আবিষ্কার করেছি। এর মধ্যে বিনা ধান-২৫ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাত। বিশেষ করে এ জাতটি বিদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির সরু বা চিকন। পাকিস্তান বা ভারতে এ ধরনের বাসমতি টাইপের জাত আছে। এ ধানের বাজারমূল্য বেশি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আসল উদ্দেশ্য কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করা, রপ্তানিমুখী করা। আমদানি নির্ভরতা কমানো সরকারের বড় উদ্দেশ্যে। সেই জায়গায় বিনা ধান-২৫ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ধান আবাদ করলে কৃষক দ্বিগুণ লাভ করতে পারে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ