আইএমএফের শর্তে দেশে বৈষম্য আরও বাড়বে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: ১:৩০ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০২৩

আইএমএফের শর্তে দেশে বৈষম্য আরও বাড়বে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Manual2 Ad Code

বিশেষ প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৫ মে ২০২৩ : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের কারণে দেশে ধনী ও গরীবের বৈষম্য আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এমন পরিস্থিতিতে বৈষম্য কমাতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে আরও সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

Manual7 Ad Code

আগামী বাজেট প্রণয়নে আইএমএফের শর্তগুলো বড় ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাজেট হয়েছে অনাথ আর আইএমএফ তার পালক পিতা।”

তবে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বাজেটের ক্ষেত্রে আইএমএফ ‘কোনও ফ্যাক্টর নয়’।

তিনি বলেন, আমরা আইএমএফ-এর উপর নির্ভরশীল নই। এই বাজেট আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেরাই তৈরি করছি।”

সোমবার (১৫ মে ২০২৩) সকাল ১০টায় ঢাকার শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও সিপিডি আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপে বক্তব্য রাখছিলেন তারা।

এ সংলাপের বিষয় ছিল ‘আইএমএফ-এর সময়কালে অসুবিধাগ্রস্থ মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে’।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আইএমএফ যখন কোনো দেশে কর্মসূচি নিয়ে যায়, তখন সেই দেশের অর্থনীতির ওপর একক কর্তৃত্ব আরোপ করে বা আরোপের চেষ্টা করে।

ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে টানাপড়েনের মধ্যে বাড়তি আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া চাপ কমাতে চলতি বছরে আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ।

এ ঋণ নিতে গিয়ে ভর্তুকি কমানো ও আর্থিক খাতে সংস্কারসহ সংস্থাটির দেওয়া বিভিন্ন শর্ত মানতে সমঝোতা করে বাংলাদেশ।

ভর্তুকির প্রসঙ্গ টেনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ভর্তুকি অনেক সময় ভালো হয়, আবার খারাপও হয়। বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে তা বাদ দিয়ে কৃষকের কাছে সার, বীজ ও ডিজেলে ভর্তুকি বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

Manual8 Ad Code

তিনি বলেন, “দেশে এমনিতেই বৈষম্য বাড়ছে। তারসঙ্গে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে তা করতে গেলে দেশে ধনী ও দরিদ্র্যের বৈষম্য আরও বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে।

Manual2 Ad Code

“বিভিন্ন গবেষণায় এমনকি আইএমএফের গবেষণায়ও দেখা গেছে, তারা বিশ্বের যেসব দেশে গেছে সেসব দেশের সব জায়গায় বিভিন্ন রকম কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলেও বৈষম্য বাড়ে।”

পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ করের কারণে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ উন্নয়ন বাজেটের শীর্ষ দশে না থাকার বিষয়টিও বৈষম্য বাড়ায় বলে তুলে ধরেন তিনি।

পাশাপাশি সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অনেক সময় প্রচারের অভাবে গরিব মানুষের নজরে আসে না। সেজন্য তারা সেগুলোর সুবিধা পায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, খাদ্য সহায়তার জন্য যত কার্ড দেওয়া হয় সেগুলো অপ্রতুল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ঋণ নেওয়ার জন্য আইএমএফ যা চেয়েছে সেগুলোকে ‘শর্ত’ বলে মানতে রাজি নন।
তিনি বলেন, “আইএমএফের শর্ত বলা হয়, আইএমএফ কোনও শর্ত দেয়নি। কন্ডিশনের অর্থ বাংলায় শর্ত নয়, ‘রিকোয়ারমেন্ট’ বলতে পারেন। ঋণ আনার জন্য প্রয়োজন। কত দিন পরে দেবেন, এই হারে দেবেন ইত্যাদি ইত্যাদি…।”

তিনি বলেন, “শুধু আমরা নয়, পৃথিবীর যে কোনও দেশের প্রয়োজন হলে আইএমএফ-এর সহযোগিতা নেবে। প্রয়োজন হলে সদস্য দেশগুলোকে শুধু টাকা নয় নানা ধরনের পন্ডিতি উপদেশও তারা দিয়ে থাকে।”

এসময় পরিকল্পনামন্ত্রী আইএমএফ-এর ‘মিশন’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, “বলে কি মিশন। আমি মিশন শব্দটি নিয়ে আমার আপত্তি জানিয়েছি। আমি বলেছি আমরা এখানে মরে যাচ্ছি না কি যে তোমরা মিশনে আসছো এখানে।”

মূল প্রবন্ধে ড. দেবপ্রিয় আইএমএফের রাজস্ব বাড়ানোর শর্তের কথা তুলে ধরে বলেন, রাজস্ব বাড়াতে হবে এর সঙ্গে দ্বিমত নেই। কিন্তু কাদের কাছ থেকে সেই কর আদায় করা হবে। বর্তমানে দেশে ৮৩ লাখ টিআইএনধারী আছেন। কিন্তু কর দেন মাত্র ২৩ লাখ মানুষ। অথচ দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কর দেওয়ার মতো আছে তাও বলা হয়।

Manual3 Ad Code

“এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কর আহরণ কার কাছ থেকে বাড়াবেন। যার কর দিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে নেবেন। না কি যারা কর দেওয়ার যোগ্য কিন্তু দিচ্ছে না তাদের কাছ থেকে নেবেন।”

তিনি বলেন, বর্তমানে যে কর আহরণ হচ্ছে তার দুই তৃতীয়াংশই পরোক্ষ কর। অথচ পরোক্ষ করে একজন ধনী যে পরিমাণ কর দেন একজন গরীব মানুষকেও একই হারে কর দিতে হয়। এতে বৈষম্য আরও বাড়ছে। বৈষম্য কমাতে তিনি সম্পদের ওপর আরও করারোপের পরামর্শ দেন।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংসদ রানা মোহাম্মদ সোহেল, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক রুমিন ফারহানা, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ