সুরের রানী নূর জাহান

প্রকাশিত: ২:২২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

সুরের রানী নূর জাহান

মুনমুন বনিক |

পাকিস্তানি গায়িকা এবং অভিনেত্রী নূর জাহান। জন্মনাম : আল্লাহ রাখি ওসাই। তিনি ছিলেন একজন পাকিস্তানি গায়িকা এবং অভিনেত্রী, যিনি প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ ভারতের হয়ে এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ছ’দশকের অধিক সময় ধরে তার কর্মজীবন পার করেন। তিনি বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পাকিস্তানের অন্যতম সম্মানসূচক ‘মালিকা-ই-তারান্নুম’ বা ‘সুরের রানী’ খেতাব লাভ করেছিলেন। তিনি হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি সংগীতের অন্যান্য ধারার প্রতিও দূরদর্শী ছিলেন।

সঙ্গীত অনুরাগী একটি পরিবারে নূর জাহান জন্মগ্রহণ করেন এবং পিতা মাতার বাদ্যযন্ত্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। যদিও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। তিনি ভারত ও পাকিস্তান- এর বিভিন্ন ভাষায় প্রায় ১৮ হাজারের উপরে গান রেকর্ড করেছেন, যার মধ্যে – উর্দু, পাঞ্জাবী, পশতু, সিন্ধী এবং ফার্সি ভাষা রয়েছে। সঙ্গীতশিল্পী আহমেদ রুশদির সাথে দ্বৈতকণ্ঠ দিয়ে তিনি পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক চলচ্চিত্রে গানের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করার কীর্তি গড়েন। তাকে সর্বকালের সেরা একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে মনে করা হয়। এছাড়াও তাকে প্রথম মহিলা পাকিস্তানি চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান নূর জাহানকে অভিনয় এবং সঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ পাকিস্তানের অন্যতম সম্মানীয় পুরস্কার ‘প্রাইড অব পারফরমেন্স’ প্রদান করেন। বিশেষ করে ১৯৬৫ সালে ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধের সময়কার দেশাত্মবোধক গান গাওয়ার জন্য। এছাড়াও তিনি পাকিস্তানি সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘তামা-ই-ইমতিয়াজ’ এবং ‘সিতারা-ই- ইমতিয়াজ’ পুরস্কার জিতে নেন।

নূর জাহান আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন দু’বার। এরমধ্যে ১৯৮৭ সালে একবার এবং ২০০২ সালে মৃত্যু পরবর্তী সময়ে আরো একবার পান।

নূর জাহান ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের কাসুরের একটি পাঞ্জাবী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর । তিনি ইমদাদ আলী এবং ফতেহ বিবি দম্পতির ঘরে এগারো ভাই বোনের মধ্যে অন্যতম একজন হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন।

নূর জাহান অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা – শীলা, গুল বাকাওলি, ইমানদার, পিয়াম-ই-হক, সজনি, যমলা জাত ,চৌধুরী, রেডসিগনাল, উমরিদ, সাসরাল, চন্দনি, ধীরাজ, ফরিয়াদ, খানদান, নাদান, দুহাই, নকার, লাল হাবেলী, দোস্ত, জুগনু।

নূর জাহান ১৯৪২ সালে শওকত হোসেন রিজভীকে বিয়ে করেন। এরপর ১৯৫৩ সালে তাকে তালাক দেন। এই দম্পতির ঘরে তিন সন্তানের জন্ম হয়, যেখানে জিল-ই-হুমা নামে একজন কন্যা সন্তান সঙ্গীতশিল্পী হন। এছাড়া ১৯৫৯ সালে তিনি পুনরায় এজাজ দারানিকে বিবাহ করেন। এই দম্পতির ঘরেও তিন সন্তানের জন্ম হয় কিন্তু পরিশেষে আগের মতই ১৯৭০ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

সুরের রানি নূর জাহান ২০০০ সালের ২৩ ডিসেম্বর, পাকিস্তানের করাচি শহরে পরলোকগমন করেন।