ইরানেরই বিজয় হয়েছে!

প্রকাশিত: ১:০২ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২৫

ইরানেরই বিজয় হয়েছে!

কাজী হালিমা আফরীন |

এই লেখায় সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত মতামত দেব। আর যেসব তথ্য বলব সেগুলো অবশ্যই main stream মিডিয়ার নিউজের ওপর ভিত্তি করে। আর একটা কথা, আমি কোনো রাজনীতিবিদ বা রাজনীতির পাকা খেলোয়াড় না। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত, বিভিন্ন অথেনটিক নিউজ, পেপার-পত্রিকা এসব রিসার্চ করে আমি আমার সীমিত জ্ঞান অর্জন করি। তাতে হয়তো আপনাদের মতামতের সঙ্গে একশো ভাগ মিল হয় না। তবে একটা কথা পরিস্কার যে, যেকোনো নিউজ আমি main stream মিডিয়ার ভিত্তিতে করে থাকি। এক্ষেত্রে আমি আলজাজিরাকে প্রথম স্থানে রাখি। তারপর বিবিসি। আপনাদের কোনো রকম দ্বিমত থাকলে অবশ্যই আপনারা আপনাদের যুক্তি দেখাবেন। তাহলে বুঝব আমার ও আপনাদের তথ্যে বা বিশ্লেষণে তফাৎ কী!

যাই হোক, এখন আসা যাক মতামতে :

আমার মতামত হলো, এই যুদ্ধে ইরানের জয় হয়ে গেছে অনেক আগেই।

কীভাবে? ই স রা ই ল ও আমেরিকা কী বলতেছে? তারা বলতেছে যে, তারা ইরানের পরমাণু Bম বানাতে বা রাখতে দেবেই না। তাই তারা ইরানের পারমাণবিক সাইট ধ্বংস করে দেবে।

এই কারণে ই স রা ই ল সর্বপ্রথম ইরানে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে তেরই জুন।

তো ই স রা ই ল কী করেছে? ইরানের মানুষ ও বিজ্ঞানীদের মারা শুরু করল। এখন পর্যন্ত দশ দিন চলতেছে পাল্টাপাল্টি হামলা তাতে ইরানের চৌদ্দ জনের মতো পারমাণবিক বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন।

কিন্তু কথা হলো ই স রা ই ল কী করতে চেয়েছিল? পারমাণবিক সাইট ধ্বংস করতে। সেই ক্ষমতা কি ই স রা ই লে র আদৌ আছে? চারটা ই স রা ই ল জড়ো হলেও তো ইরানের পারমাণবিক সাইট ধ্বংস করা সম্ভব না। কারণ, যেসব Bমা দিয়ে ইরানের পারমাণবিক সাইট ধ্বংস করতে হবে তা ই স রা ই লের নেই। সাফ কথা।

এখন বলবেন তো হ্যাঁ, ই স রা ই ল তো বিজ্ঞানী মেরে ফেলেছে। হ্যাঁ, ফেলেছে। এটা অবশ্যই বিশাল ক্ষতি ইরানের জন্য। কিন্তু আপনারা কী মনে করতেছেন ইরানের এই বিশাল পারমাণবিক সাইট আর পরমাণু Bম তৈরি করার দ্বারপ্রান্তে যাওয়া মাত্র চৌদ্দ জন বিজ্ঞানী দিয়ে হয়েছে? না। এদের অসংখ্য বিজ্ঞানী রয়েছে।

এই ইরান এতোটা প্রোটেক্ট করেছে পারমাণবিক সাইট যে, সেখানে পৌঁছানো মোটামুটি পর্যায়ে কারোর সাধ্য নেই। বলা হচ্ছে একমাত্র আমেরিকার বিটু বোম্বার নাকি পারে সেটা ধ্বংস করতে। কিন্তু গতকালই তো দেখেছেন সেই রেজাল্ট। ট্রাম্প ফাঁকা আওয়াজ তুলে ইরানকে ভয় দেখিয়ে পরমাণু কার্যক্রম ছিনিয়ে নিতে চেয়েছে।

ট্রাম্পের বিটু Bম কতোটা পেরেছে সফল হতে? ট্রাম্প বলেছেন ভেরি মাস সাকসেস হয়েছে তার বিটু Bম। অনেক ক্ষতি করে এসেছে নাকি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলতেছেন যে তিনটা সাইটে ট্রাম্প Bম ফেলেছেন সেখানে এ্যাকচুয়ালি কতোটা ক্ষতি হয়েছে তা গবেষণা করার বিষয় আর তাতে সময় লাগবে। একজন ইরানি বলেছেন কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

কথা সেটা না। যে ই স রাই ল যুদ্ধ শুরু করেছে তার ক্ষমতার বাইরে ইরানের পারমাণবিক সাইট ধ্বংস করা। প্রথমদিকে ই স রাই লি একজন মিলিটারি দাবি করেছিল যে, তারা নাকি ইরানের একটা পারমাণবিক সাইট ধ্বংস বা ব্যাপক ক্ষতি করে ফেলেছে। পরে সেই মিলিটারি সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে বলল, ঐ পোস্টটা ভুল করে দেওয়া হয়ে গেছে।

যাই হোক, ই স রা ইল মোট কথা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে চিৎপটাং হয়েছে। তার পরাজয় হয়েছে। সে একা লড়তে গিয়ে তার দাঁত খুলে পড়েছে। তার ল্যান্ড গাজার মতো হয়ে গেছে।

যখন তার পিঠ আর দেওয়াল থেকে সরাতে পারেনি তখন সে ট্রাম্পকে বাধ্য করেছে এ্যাটাক করাতে।

আর ট্রাম্প কী ভেবেছিলেন? বিশাল বড়ো বিটু Bম দিয়ে প্রথমদিনই পারমাণবিক সাইট গুড়িয়ে দিয়ে ইরানকে কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেগোশিয়েশন নামক ড্রামা টেবিলে বসাইয়া বিশ্বকে দেখাইবেন, এই দ্যাখো তোমাদের ইরান আমার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তারা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে।

ট্রাম্প দেখাইতে চান যে আমি পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যার কথায় সবকিছুই হয়ে যাবে।

ইরান কী করেছে? ট্রাম্পের Bম মারার পর ই স রা ই লে র কানে সজোরে চড় বসাইয়া দিয়ে ট্রাম্পকে দেখায় দিছে যে, তোমার কাছে নতজানু হওয়ার জন্য আমাদের জন্ম হয় নাই।

ইরানের বিদেশ মন্ত্রী বারবার বলতেছেন যে, যতক্ষণ ইস রা ইল হামলা চালাবে ততক্ষণ আমরা কোনো আলোচনায় বসব না।

এদিকে ট্রাম্প ই স রা ই লকে না থামাইয়া বরং তাঁরই হাত-পা সব কিছুই ঢুকাইয়া দিছেন ইরানের কলিজায়।

এসব করে এসে ট্রাম্প মিডিয়ায় বলতেছেন যে, ইরানকে নেগোশিয়েশনে বাধ্য করতে Bম মেরেছি।

একজনকে কয়েকজন মিলে মেরে যদি বলা হয় ভেরি সাকসেসফুল, সেটা কি সাকসেসফুল হয়?

সুতরাং ই স রা ই ল নিজে একা তো ইরানের সঙ্গে লড়ে পারেই নি, অন্যদিকে ট্রাম্প তাঁর বিশাল শক্তিশালী বিটু দিয়ে পারমাণবিক সাইটে ফাঁকা মাঠে Bম ফেলে দিয়ে এসে প্রমাণ করেছেন যে, ইরানকে Surrendered করানো এতোটা সহজ না। ইরানেরই জয় হয়েছে।

এবার আসেন কিছু পলিটিক্যাল এনালিস্টদের বিশ্লেষণে:

গতকাল আমি আলজাজিরা একটা ইন্টারভিউ দেখতেছিলাম। সেখানে ই স রা ই লে র একজন পলিটিক্যাল এনালিস্ট আলোচনায় অংশ নেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, আমেরিকা যে হামলা চালাল, এতে ইরানের প্রতিক্রিয়া বা মোটিভেশন কী হতে পারে? ঐ এনালিস্ট বললেন, ফলাফলে যাই হোক, সবদেশের জনগণের পে করতে হচ্ছে। মানে জনগণ সাফার করতেছে। তাঁর মতে ট্রাম্পের এটা করা উচিৎ হয়নি নেতার হয়ে। তিনি আরো বললেন, এখন ইরানের একটা মোটিভেশন হতেও পারে যে, দেখা যাচ্ছে তারা পারমাণবিক Bম তৈরিই করে ফেলবে এই জেদে।

এদিকে আজকে আলজাজিরা আমেরিকার ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসরের মতামত জানতে চায়। তিনি বলেছেন যে, ট্রাম্প সম্পূর্ণভাবে নেতার দ্বারা প্লেড হয়েছেন ও মেনিপুলেটেড হয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, গেল ফেব্রুয়ারিতে যখন নেতা এসেছিলেন ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে তখন কিন্তু ট্রাম্প কোনো মতেই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে রাজি হন নি, আলোচনা ও ডিলই করতে চেয়েছিলেন পিসমেকার হয়ে। তারপর নেতা অনেকটা embrace হোন ট্রাম্পের আচরণে। পরে ট্রাম্পকে নেতা একরকম বাধ্য করেছেন যুদ্ধে নামাতে। নেতা নাকি ট্রাম্পকে বলেছেন, ডিল হবে তবে হামলা চালাতেই হবে শাস্তি দিতে। এসব উল্লেখ করেছেন আমেরিকার ইউনিভার্সিটির ঐ প্রফেসর এনালিস্ট।

যাই, হোক ইরানের জন্ম কখনো surrendered করার জন্য হয় নি। ইরানের বিদেশ মন্ত্রী আজকে যাচ্ছেন পুতিনের সঙ্গে ইমারজেন্সি মিটিং করতে। যেহেতু পুতিন ভালো মতো রাগ করেছেন আমেরিকার হামলায়। চীনও কঠোর কনডেম জানিয়েছে।
ইউকের মীরজাফর স্টারমার ট্রাম্পের হামলার আগে বলেছিলেন, deescalated করো। এখন হামলার পর সোস্যাল মিডিয়ায় বিশাল স্টেটমেন্ট দিয়ে এই মীরজাফর লিখেছেন, ইরান কোনো মতেই পরমাণু অস্ত্র রাখতে পারে না। একেই তো বলে মীরজাফর।

এদিকে কানাডার কার্নিও বলেছেন, ইরানের পরমাণু অস্ত্র রাখা উচিৎ না। তিনি তো তাঁর রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে ভাবতেছেন। ট্রাম্পের দলে না থাকলে তো ধরেন ট্রেড নিয়ে ঝামেলায় পড়ে যাইবেয়ানে কার্নি এসব হয়তো ভেবেছেন।

যাই হোক জয় ইরানেরই হয়েছে। ইরান মরে গেলেও আগামী জাতির জন্য একটা জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে যে, ঈমান কখনো কোনো হুংকারে থেমে থাকে না।

আল্লাহ আপনাদের সুস্থ রাখুন।
#

কাজী হালিমা আফরীন
টরন্টো, কানাডা।
জুন ২২, ২০২৫

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ