লক্ষ্মীপুরে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন কাল: শুরু হচ্ছে জাতীয় উদ্যোগের নতুন অধ্যায়

প্রকাশিত: ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২৫

লক্ষ্মীপুরে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন কাল: শুরু হচ্ছে জাতীয় উদ্যোগের নতুন অধ্যায়

Manual8 Ad Code

মেহেদী হাসান রাসেল, বিশেষ প্রতিনিধি | লক্ষ্মীপুর, ১১ অক্টোবর ২০২৫ : সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও আগামীকাল রবিবার (১২ অক্টোবর ২০২৫) শুরু হচ্ছে “টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫”।

শিশুমৃত্যু ও সংক্রমণজনিত জটিলতা রোধে এই জাতীয় ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য হলো দেশে প্রায় ৫ কোটি শিশুকে এক ডোজ টাইফয়েড টিকা প্রদান করা।

জাতীয় এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৬ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৭৮ জন শিশু-কিশোরকে টিকার আওতায় আনা হবে। এ টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করা হবে লক্ষ্মীপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে, যেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সাংবাদিকরা।

প্রস্তুতি সভা ও স্থানীয় সমন্বয়

উদ্বোধনের পূর্বে শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১০টায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভা কার্যালয়ে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সুপারভাইজার, দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মূল আলোচ্য বিষয় ছিল—টাইফয়েড টিকাদান কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার স্বাস্থ্য ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক আব্দুল্লাহিল হাকিম বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে টিকাদান দল, পরিবহন, কোল্ড চেইন ব্যবস্থাপনা, ও গণসচেতনতা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য একটিও শিশু যেন বাদ না যায়।”

জাতীয় কর্মসূচির পটভূমি ও লক্ষ্য

জাতীয় পর্যায়ে ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৮ কার্যদিবসব্যাপী চলবে এই টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫।
এর আওতায়—

দেশের প্রায় ৫ কোটি শিশু (৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী) শিশুকে ১ ডোজ টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিশুদের তাদের নিজ নিজ বিদ্যালয়ে এবং

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানবহির্ভূত শিশুদের বিদ্যমান ইপিআই (EPI) স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।

Manual5 Ad Code

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশে টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি চালুর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের টাইফয়েড প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছে।

লক্ষ্মীপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাঁরা থাকবেন

লক্ষ্মীপুরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন—

পুলিশ সুপার, লক্ষ্মীপুর

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ

প্রশাসক, লক্ষ্মীপুর পৌরসভা

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)

প্রশাসক, সদর উপজেলা পরিষদ

উপপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা, লক্ষ্মীপুর

জেলা শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারবৃন্দ,

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর,

ইসলামী ফাউন্ডেশন, রেডক্রিসেন্ট, ব্র্যাক, আইসিডিডিআরবি, লায়ন্স ক্লাব, রোটারি ক্লাব, বয়স্কাউটসহ নানা সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন।

পূর্ব প্রস্তুতি ও সংবাদ সম্মেলন

গত ৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির অগ্রগতি ও সফল বাস্তবায়ন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার সরকার।
তিনি বলেন, “টাইফয়েড এখনো বাংলাদেশের শিশুস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। সরকারের লক্ষ্য, টিকাদানের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে টাইফয়েড সংক্রমণ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা।”

এসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা বিশ্বব্যাপী টাইফয়েড জ্বরের ভয়াবহতা, সংক্রমণের উৎস ও বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বিষয়ে বিশদ তথ্য তুলে ধরেন।

Manual8 Ad Code

টাইফয়েডের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পরিস্থিতি

Manual3 Ad Code

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী—

প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়,

Manual6 Ad Code

এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে,

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো—বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান—এই সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল।

বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রতি ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ৩৫০ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যবিধি ও টিকাদান—এই তিনটি স্তম্ভই টাইফয়েড প্রতিরোধের মূল উপায়।

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ

লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর ওয়ার্ডে টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে ফিল্ড সুপারভাইজার, কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ান, ডেটা কালেকশন টিম ও স্থানীয় স্কুলশিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
জনগণকে সচেতন করতে ঘোষণাপত্র বিতরণ, মাইকিং, ব্যানার-পোস্টার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রচারণা ও অভিভাবক সচেতনতা সভা আয়োজন করা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের টিকাদান অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে জেলা পর্যায়ে মনিটরিং সেল কাজ করবে।

পরিশেষে

দেশে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নে আরেকটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার একযোগে এই কর্মসূচিকে শতভাগ সফল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code