ভাষা সৈনিক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিন অাজ

প্রকাশিত: ২:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২০

ভাষা সৈনিক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিন অাজ

Manual5 Ad Code

বিশেষ প্রতিনিধি || ঢাকা, ০২ নভেম্বর ২০২০ : ভাষা সৈনিক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিন অাজ।

Manual3 Ad Code

ভাষা অান্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সহ নানা অবদানের জন্যই বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি ভারতে ব্রিটিশশাসন-বিরোধী সংগ্রামের সৈনিক, পাকিস্তান-রাষ্ট্রে বাংলাভাষার মর্যাদা-প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রবর্তক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বাপ্নিক।

এর প্রতিটি পর্যায়ে নিজের বিশ্বাস ও কর্মের জন্যে মূল্য দিয়েছেন তিনি— সর্বাধিক মূল্য দিয়েছেন ১৯৭১ এর মার্চে। তখন তিনি নিজের হাতে কুমিল্লার বাড়িতে তুলেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। তার কয়েকদিনের মধ্যেই তার রক্তে সিঞ্চিত হয়েছিল বাংলাদেশের মাটি। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে ছোট ছেলে দিলীপকুমার দত্তসহ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদেরকে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। তবে হত্যার সঠিক দিনটি জানা যায়নি।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিন আজ। ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে তার জন্ম। বাবা জগবন্ধু দত্ত ছিলেন কসবা ও নবীনগর মুন্সেফ আদালতের সেরেস্তাদার।

Manual8 Ad Code

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে দেশভাগের পর নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের প্রথম ভাষা সৈনিক। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকে মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।

Manual1 Ad Code

সে থেকেই পাকিস্তানে ভাষা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত। অধিবেশনের শুরুতে আলোচনার সূত্রপাত করে পূর্ব বাংলার কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন, বাংলা একটি প্রাদেশিক ভাষা হলেও সমগ্র পাকিস্তানের মোট ৬ কোটি ৯০ লাখ লোকের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে, অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠি বাঙালি। অথচ ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকার যে ভূমিকা পালন করেছে তা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।

Manual4 Ad Code

সদ্য প্রয়াত হওয়া কথা সাহিত্যিক রশীদ হায়দার তার এক প্রবন্ধে লিখেন- আজ আমরা নিঃসংশয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে করাচীতে পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত যে দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন তা পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠি তথা সামরিক জান্তা ভোলেনি, ভুলতে পারেনি। তার অকুতোভয় ভূমিকাই যে পাকিস্তানকে দ্বিখন্ডিত করার বীজ বপন করেছিলেন তা পরবর্তীকালে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে, প্রমাণিত হয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ৮৫ বছরের ধীরেন্দ্রনাথ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কী অমানবিক অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন, এক সাক্ষাৎকারে সেই বিবরণ দিয়েছেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের নাপিত রমণীমোহন শীল।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উপর যে অমানবিক নির্যাতন হয়েছে তা দেখে কোন সুস্থ ও বিবেকবান মানুষের চোখের জল সংবরণ করা সম্ভব নয়। সাখাওয়াত আলী খান প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে জানা যায়ঃ “ধীরেন বাবু সম্পর্কে বলতে গিয়ে রমণী শীলের চোখের জল বাঁধন মানেনি। মাফলারে চোখ মুছে তিনি বলেন, ‘আমার সে পাপের ক্ষমা নেই। বাবু স্কুলঘরের বারান্দায় অতি কষ্টে হামাগুড়ি দিয়ে আমাকে জেজ্ঞেস করেছিলেন কোথায় প্রস্রাব করবেন। আমি আঙ্গুল দিয়ে ইশরায় তাকে প্রস্রাবের জায়গা দেখিয়ে দিই। তখন তিনি অতি কষ্টে আস্তে আস্তে হাতে একটি পা ধরে সিঁড়ি দিয়ে উঠানে নামেন। তখন ঐ বারান্দায় বসে আমি এক জল্লাদের দাড়ি কাটছিলাম। আমি বারবার বাবুর দিকে অসহায়ভাবে তাকাচ্ছিলাম বলে জল্লাদ উর্দুতে বলে, ‘এটা একটা দেখার জিনিস নয়-নিজের কাজ কর।’ এরপর বাবুর দিকে আর তাকাবার সাহস পাইনি। মনে মনে শুধু ভেবেছি বাবু জনগণের নেতা ছিলেন, আর আজ তাঁর কপালে এই দুর্ভোগ। তাঁর ক্ষতবিক্ষত সমস্ত দেহে তুলা লাগান, মাথায় ব্যান্ডেজ, চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় উপর্যুপরি কয়েকদিনই ব্রিগেড অফিসে আনতে নিতে দেখি।” (শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারকগ্রন্থ: পৃষ্ঠা ৩০২)।

ভাষা সৈনিক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ অামিরুজ্জামান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code