করোনাভাইরাস : সুস্থ হয়ে উঠতে কতদিন লাগে..

প্রকাশিত: ১:০৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২০

করোনাভাইরাস : সুস্থ হয়ে উঠতে কতদিন লাগে..

Manual5 Ad Code

আদর্শ বাংলা ডেস্ক ঃ ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে, কিন্তু এখনি বোঝা যাচ্ছে যে, অনেক রোগীর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে লম্বা সময় লাগবে।

সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়টি নির্ভর করবে আপনি কতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তার ওপরে। অনেক মানুষ সামান্য কিছু উপসর্গ নিয়েই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, কিন্তু অন্যদের জন্য এটা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ এবং অন্যান্য শারীরিক বিষয়ও গুরুতর অসুস্থতার কারণ হয়ে ওঠে।

যত গভীর চিকিৎসা আপনাকে নিতে হয়েছে, যত বেশি সময় লেগেছে, আপনার সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রেও ততটাই সময় লাগবে।

আমার যদি সামান্য কয়েকটি উপসর্গ থাকে, তাহলে কী হবে?

যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে, তাদের বেশিরভাগের ক্ষেত্রে কাশি বা জ্বরের মতো প্রধান উপসর্গগুলো দেখা গেছে। তবে তারা শরীরের ব্যথা, ক্লান্তি, গলা ব্যথা এবং মাথা ব্যথা অনুভব করতে পারেন।

প্রথমদিকে শুষ্ক ধরণের কাশি হতে পারে। কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ভাইরাসের খেয়ে ফেলা ফুসফুসের মৃত কোষমুক্ত শ্লেষ্মা কাশি শুরু হতে পারে।

মূলত বিশ্রাম, বেশি করে তরল পান এবং প্যারাসিটামলের মতো ব্যথানাশক ব্যবহার এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে।

হালকা লক্ষণ যাদের থাকে, তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে জ্বর চলে যায়, তবে কাশি আরও কিছুদিন থাকতে পারে।

আমার যদি গুরুতর লক্ষণ-উপসর্গ থাকে, তাহলে কী হবে?

Manual6 Ad Code

এই রোগটি অনেকের জন্য গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। এটি সংক্রমণের সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ঘটে থাকে।

এই পরিবর্তন অনেক সময় হঠাৎ হয়ে থাকে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং ফুসফুস ফুলে যায়।

এর কারণ হলো, শরীরের ভেতরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করে। এটা আসলে শরীরের প্রতিক্রিয়া তৈরির চেষ্টা, যার ফলে শরীরের ভেতরের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।

এই সময়ে অনেক মানুষকে অক্সিজেন সহায়তা দেয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

চিকিৎসক সারাহ জার্ভিস বলছেন, ”শ্বাসকষ্টের এই ব্যাপারটি ভালো হয়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যায়… শরীর তার ভেতরের কষ্টের ব্যাপারগুলো কাটানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়।”

তিনি বলছেন, সুস্থ হয়ে উঠতে দুই থেকে আট সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে, যদিও আরও কিছুদিন ক্লান্তি ভাব থেকে যাবে।

আমার যদি নিবিড় পরিচর্যা দরকার হয়, তাহলে কী হবে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছে, প্রতি ২০ জন রোগীর ভেতরে একজনের নিবিড় পরিচর্যার দরকার হয়ে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে ঘুম পাড়িয়ে রাখা এবং ভেন্টিলেটর দেয়ার মতো ব্যবস্থাগুলো।

যেকোনো ধরণের অসুস্থতাই হোক না কেন, নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট থেকে ফিরে সুস্থ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বেশ সময় লাগে। বাড়ি যাবার আগে রোগীদের নিয়মিত ওয়ার্ডে পাঠানো হয়ে থাকে।

ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন অ্যালিসন পিটার্ড বলছেন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) থেকে বেরিয়ে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে ১২ থেকে ১৮ মাস লেগে যেতে পারে।

হাসপাতালের বিছানায় দীর্ঘদিন শুয়ে থাকলে শরীরের পেশির ক্ষয় হয়ে যায়। রোগীরা দুর্বল হয়ে পড়েন এবং পেশী পুনরায় তৈরি হতে সময় লেগে যায়। অনেকের এজন্য ফিজিওথেরাপির সহায়তাও দরকার হয়।

আইসিইউতে থাকার সময় শরীর যেসব পর্যায়ের ভেতর দিয়ে যায়, সে কারণে অনেকের মধ্যে প্রলাপ বকা এবং মানসিক সমস্যা হওয়ারও সম্ভাবনা দেখা দেয়।

চীন ও ইতালির রোগীদের ক্ষেত্রে পুরো শরীরের দুর্বলতা, সামান্য শারীরিক পরিশ্রমের পরেও শ্বাসকষ্ট হওয়া, ক্রমাগত কাশি এবং অনিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের খবর পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে অনেক ঘুমেরও দরকার হয়।

কার্ডিফ এন্ড ভেল ইউনিভার্সিটি হেলথ বোর্ডের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ফিজিওথেরাপিস্ট পল টুজ বলছেন, ”আমরা জানি, পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে রোগীরা অনেক সময় নেন, অনেক সময় সেটা কয়েক মাস হয়ে যায়।”

কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে এটা বলাও কঠিন। অনেক মানুষ ক্রিটিক্যাল কেয়ারে তুলনামূলকভাবে অল্প সময় থাকেন। আবার অনেককে দীর্ঘদিন ভেন্টিলেটরের সহায়তাও দিতে হয়।

Manual5 Ad Code

করোনাভাইরাস কি আমার স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে?

Manual5 Ad Code

যেহেতু এই বিষয়ে এখনো দীর্ঘমেয়াদী কোন তথ্য উপাত্ত নেই, তাই এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কারো জানা নেই। কিন্তু অন্যান্য অবস্থার কথা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।

অ্যাকুইট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (যাকে আরডস বলা হয়ে থাকে) এমন সব রোগীদের মধ্যে তৈরি হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিষয়টি অতিরিক্ত চাপের ভেতর দিয়ে যায়, যা তাদের ফুসফুসের ক্ষতি করে দেয়।

Manual8 Ad Code

মি. টুজে বলছেন, ”এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, মানুষজন পাঁচ বছর পরেও শারীরিক ও মানসিক জটিলতার মুখোমুখি হয়েছেন।”

ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুলের প্রভাষক ডক্টর জেমস গিল বলছেন, ”পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তারও দরকার।”

”আপনার যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তখন হয়তো চিকিৎসক বলছেন, আমরা তোমাকে এখন ভেন্টিলেটরে নিয়ে যাবো। আমরা তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখবো। আপনি কি আপনার পরিবারকে বিদায় জানাতে চান?”

এই গুরুতর রোগীদের মধ্যে পিটিএসডি [পোস্ট-ট্রোমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার] দেখা দেয়া আশ্চর্যজনক নয়। অনেকের উল্লেখযোগ্য মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত তৈরি হতে পারে।”

অনেক সময় হালকাভাবে আক্রান্ত হলেও সেটা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।

কতো মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন?

এ বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া দুষ্কর।

১৮ এপ্রিল পর্যন্ত জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার ৩৮৮ জন। যদিও আক্রান্ত হয়েছেন ২২ লাখের বেশি মানুষ।

তবে অনেক দেশে এই হিসাব রাখার পদ্ধতি আলাদা। অনেক দেশ সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের তথ্য প্রকাশ করে না। অনেক ক্ষেত্রে সামান্য বা হালকা আক্রান্ত ব্যক্তিদের তথ্য হিসাবের বাইরে থেকে যায়।

গণিত মডেলের হিসাবে বলা যায়, ৯৯-৯৯.৫ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

আমার কি আবার কোভিড-১৯ হতে পারে?
আবারো রোগটি হওয়ার বিষয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা আছে, কিন্তু নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ রয়েছে খুব কম। রোগীরা যদি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করে জয়ী হতে পারে, তারা হয়তো শরীরের ভেতর একটি প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্ম দেয়।

করোনাভাইরাসের টিকা কতটা কার্যকর বা সফল হতে পারে, সেটি বোঝার ক্ষেত্রে পুনরায় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে পারার এই ক্ষমতার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

(সুত্র: বিবিসি বাংলা)

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code