গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: মিথ ও বাস্তবতা

প্রকাশিত: ২:৫৬ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০২০

Manual5 Ad Code

অারশাদ সিদ্দিকী, ০৩ মে ২০২০ : সালটা ২০০১। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হচ্ছে ‘প্রেস ফ্রিডম ডে’। হা রে রে রে উত্তেজনা। ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রধানের উপস্থিতিতে সাংবাদিকরা কথা

Manual1 Ad Code

অারশাদ সিদ্দিকী

বললেন। আজ সেই দিনটি মনে করে অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে এলো।

ইউনেস্কো ১৯৯৩ থেকে ফি বছরই দুনিয়াজুড়ে ৩ মে আয়োজন করে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে হিসেবে। বছর বছর স্লোগান পাল্টায়। ২০০১ থেকে ২০২০। দিনটি বাংলাদেশেও নিয়ম করে পালন করা হচ্ছে। সংবাদকর্মীদেরও গনমাধ্যমের স্বাধীনতার নামে ফুটফাট কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আর স্বাধীনতার হয়েছে লবডঙ্কা।

Manual4 Ad Code

অসার সব কথাবার্তার ভিড়ে স্বাধীনতা উঠেছে মাচায়। ইউনেস্কোর এবারের প্রতিপাদ্য JOURNALISM WITHOUT FEAR AND FAVOUR তো তাই বলে। ওরা দুনিয়াজুড়ে শঙ্কা ও তোষণ মুক্ত সাংবাদিকতা চাইছে। শঙ্কা ও তোষণ কি হালফিল সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণ করেছে? নাকি এর ইতিহাস আদ্যিকালের?

শঙ্কা ও তোষণ মুক্ত সাংবাদিকতা তথা গনমাধ্যমের স্বাধীনতা কে নিশ্চিত করবে? কেমন করে? ক্ষমতাধরদের উপর চাপ প্রয়োগ করে, সাংবাদিকদের শঙ্কামুক্ত করবে? তোষণ তেলাওয়াতির সাংবাদিকতা ঠেকাবে কোন জাদুমন্ত্রে? চাকরি বাঁচানো রুটিন ওয়ার্কের চাপে, এসব প্রশ্নের উত্তর ইউনেস্কোরও জানা নেই।

একথা সবাই জানেন, ইউনেস্কো হচ্ছে জাতিপুঞ্জের সবচেয়ে দুর্বলতম অঙ্গ সংগঠন। জাতিপুঞ্জের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের মতো, তাদের মাথার ওপরে বাক-স্বাধীনতার ধ্বজাধারী পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের আশীর্বাদ নেই। ‌ হলে ঠুঁটো জগন্নাথের মতো রুটিন ওয়ার্ক করে যাওয়া ছাড়া অন্যকিছু তারা করতে পারতো কিনা সে নিয়েও প্রশ্ন করা যায়। আপাতত সেই কূট তর্ক থাক।

পৃথিবীতে কোন কালে গণমাধ্যমের অস্তিত্ব ছিল? এবারে সেই প্রশ্নে আসা যাক। ইউনেস্কো সেই প্রশ্ন কখনো তোলেনি। ফি বছর গনমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক যারা তৈরি করেন, তারাও কখনো সে প্রশ্ন করেনি। সেই প্রশ্ন করার উপায়ও তাদের নেই। কর্পোরেটোক্রেসির বর্তমান যুগে তো নয়ই।

বাস্তবতা হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আদতে কোন কালেই ছিল না। বেচারা গণমাধ্যমের জন্ম ক্ষমতাসীনদের হাতে। তার বেড়ে ওঠা, ব্যবসায়ীদের অর্থানুকুল্যে। তার যৌবন ও বিকাশ কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণে। সুতরাং ক্ষমতার তোষণ আর মুনাফার পদলেহনই তার নিয়তি।

Manual8 Ad Code

এই সত্য মেনে নিলে, ‘গনমাধ্যম’কে (mass media) কেবল ‘প্রচার মাধ্যম’ (publicity media) হিসেবে বিচার করলে অনেক ল্যাঠা চুকে যায়। নানান আওভাও বুঝানোর দায়টাও থাকেনা। প্রচার মাধ্যমে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বস্তিতে থাকতে পারে। পেশাদার সাংবাদিকরাও হতে পারেন ঝুঁকিমুক্ত। প্রচার মাধ্যমের কাছে জনসাধারণের প্রত্যাশার মাত্রাটাও কমে আসে।

বিষয়টা অতখানি সরল নয়। গোল আরও আছে। বাক স্বাধীনতার (freedom of speech) সাথে প্রচার মাধ্যমের (freedom of press) স্বাধীনতাকে গুলিয়ে ফেলা। ১৭৩৪ সালে এক মামলার ফলাফলের প্রেক্ষিতে ১৭৯১ সালে আমেরিকায় বাকস্বাধীনতা (freedom of speech) সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। তালগোল পাকিয়ে ফেলার শুরু সেই থেকে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই লেজেগোবরে অবস্থা থেকে মুক্তি বা স্বাধীনতার প্রত্যাশা জিইয়ে রেখে press freedom day উদযাপনের রুটিন ওয়ার্ক থেকে বেরিয়ে এসে ইউনেস্কো সহজ-সরলভাবে গণমাধ্যমকে (mass media) প্রচার মাধ্যম (publicity media) হিসেবে বালা কি শুরু করবে? কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত মাধ্যমগুলো কি তা মেনে নেবে?

জয় হোক প্রচার মাধ্যমের (publicity media)। মিথের জগৎ থেকে ফিরে আসি আমরা বাস্তবতায়।
অবসান হোক, শঙ্কা ও তোষনমুক্ত সাংবাদিকতার স্লোগান দেয়ার অসাড় দিনের।

Manual8 Ad Code

Happy world press freedom Day 2020

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code