সব দোষ যেভাবে শেখ হাসিনার হয়ে যায়!

প্রকাশিত: ৫:১২ পূর্বাহ্ণ, মে ৬, ২০২০

Manual4 Ad Code

ফজলুল বারী, সিডনি (অস্ট্রেলিয়া), ০৬ মে ২০২০ : করোনা দূর্যোগের মধ্যে পরিবহন শ্রমিকরা ত্রানের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাদের প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিদিন কারা বেআইনি টাকা তুলতো তা বাংলাদেশের আইন-শৃংখলা রক্ষার সঙ্গে জড়িতরা জানেন। শ্রমিকরা তাদের সেই পাওনা তহবিল থেকেই টাকা-ত্রান চায়। এসব নেতৃত্বের সঙ্গে জড়িত একজন শাহজাহান খান এখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামেরও সদস্য। এসব দেখেশুনেও তিনি সুফিসাহেব সেজে চুপচাপ বসে আছেন!

Manual5 Ad Code

এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সবকিছু সামাল দিচ্ছেন তখন শাহজাহান খান আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার শুভাকাংখী হয়ে থাকলে ত্রানের দাবিতে শ্রমিকদের ওখানে বসিয়ে রেখে চুপ করে মুখ লুকিয়ে থাকতে পারেননা। শ্রমিকদের নামে তোলা ওই টাকা এই দূর্যোগে যদি না পায় কখন পাবে এর জবাব শাহজাহান খানকেই দিতে হবে।
শাহজাহান খান হয়তো ভাবছেন চুপ করে থেকে অন্যদের মতো পরিবহন শ্রমিকদের ত্রান সহায়তা দেবে রাষ্ট্র। পরিবহন শ্রমিকদেরও সহায়তার উদ্যোগ শেখ হাসিনার আছে। কিন্তু শ্রমিকদের নামে গড়া তহবিল যদি শাহজাহান খানগং গিলে খান-তসরূপ করেন, এরজন্য জবাবদিহিও তাকে করাতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে বসে মুখ লুকিয়ে থেকে তিনি পার পেতে পারেননা।
শফিকুল ইসলাম কাজল নামের একজন সাংবাদিক দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর তাঁর হাতে হাতকড়াওয়ালা ছবি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক আলোড়ন হচ্ছে। মিডিয়ার একজন মানুষ হিসাবে এমন ছবি আমাকেও হতাশ-ক্ষুদ্ধ করেছে।
কাজল নিখোঁজের পর ভয় করেছে। খোঁজ পাবার পর স্বস্তি পেয়েছি। কিন্তু আমার আরও খটকা লাগলো দেশে এত সাংবাদিক থাকতে তার হাতে হাতকড়া নিয়ে এর প্রতিবাদ করছেননা কেনো?
কাজল নিখোঁজ হবার পর তাকে নিয়ে লেখার জন্যে আমার সঙ্গে যারা যোগাযোগ করেছিলেন, হাতকড়ার ছবির পর তাদেরও চুপ মেরে যাওয়া দেখে দ্বিধায় পড়ে যাই! দেশে এই সাংবাদিককে নিয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে মুদ্রার আরেকপিঠ সম্পর্কেও জেনেছি।
বাংলাদেশের মিডিয়ার এখনকার বড় একটা সমস্যা হলো এগুলোর বাজার থাকুক আর না থাকুক হাজার হাজার মিডিয়ার পিছনের লোকজনের অর্থনীতি নিয়ে অনেকের অনেক কালো অধ্যায় আছে।
পত্রিকা কোন বৈশাখী লিটলম্যাগ নয় যে লোকজনের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে বিজ্ঞাপন নিয়ে বছরে একটা বের করলাম! পত্রিকা একটি ব্যয়বহুল শিল্প। তাই যে দেশের কর ব্যবস্থা স্বচ্ছ সেদেশে এটি হুট করে বের করার চিন্তা কেউ করেনা।
এরপরও যে পণ্যের বাজার নেই সে পণ্যের এমন ছড়াছড়ি বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার আর কোন দেশে আছে তা আমি অন্তত জানিনা। জেনেশুনে এসব কেনো দেশে চলতে দেয়া হয় সরকার সে দায় এড়াতে পারেনা।
যেহেতু এসবের বাজার নেই কিন্তু এর পিছনের লোকজনের একটি সংসার আছে অর্থনীতি আছে, কাজলও তেমন নানা অভিযোগ-দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। যাদের সঙ্গে তিনি টক্করে গিয়েছিলেন সেখানে পেরে ওঠেননি। তার স্ত্রীর ক্যান্সার। এটিও তাকে আর্থিক-মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করে রাখে।
একজন প্রতিমন্ত্রী তাঁকে হয়রানির সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগও করেছিলেন। সবগুলো অভিযোগের সংকলন যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে। ওই কর্মকর্তা বিষয়টি দেখতে বলেন এক বাহিনী প্রধানকে।
সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থায় যেতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তুলে নিয়ে গেলেন! এরপর এই করোনার সময়ে তাকে যেখানে উদ্ধার দেখানো হলো, এমন না করলেও চলতো। মাজেদকে গাবতলীতে রিকশায় পেয়ে গেলেন! কাজলকে বেনাপোল নিতে হবে কেনো?
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরাতো আর কাজল কাহিনী জানেনা। এরপর বিজিবি থেকে পুলিশ যে কোন সাধারন আসামী পেলে যেভাবে করে সেভাবে হাতকড়া পরিয়ে সিএনজিতে যশোর নিয়ে যায় বেনাপোলের পুলিশ! দিনটা যে মুক্ত গণমাধ্যম দিবস বেনাপোলের পুলিশের সে জ্ঞান ছিলোনা।
এরপর দু’য়ে দু’য়ে চার হওয়া মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে সাংবাদিকের হাতে হাতকড়ার ঘটনায় আমরা বিক্ষুদ্ধ হয়েছি। এই পক্ষের অজ্ঞতায় দেশের মানুষকে দেখানো গেলো শেখ হাসিনার সরকার এতো খারাপ! মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে একজন সাংবাদিককে হাতকড়া পরিয়ে নেয়া হয়েছে আদালতে!
কাজল জাসদ ইনুর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তার জন্যে বক্তব্য ছিলেন আ স ম আব্দুর রব। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, সাংবাদিকের নয়, রাষ্ট্রের হাতে হাতকড়া পরানো হয়েছে।
আদতে ঢাকার সাংবাদিক-ফটো সাংবাদিক মহলে জাসদ ইনু তথা সরকারপন্থী সাংবাদিক হিসাবেই তার পরিচয় ছিল। কাজলের খবর পেয়ে যশোরের একজন সাংবাদিক নেতা সরকার সমর্থক একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে তার সঙ্গে আরেক রাজনৈতিক রঙ যুক্ত হয়ে যায়!
কাজলের ছেলে মনোরম ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত। সরল সেভাবে সে বিএনপির আইনজীবীদের সেখানে সংযুক্ত করলে যশোরের সহমর্মী সাংবাদিকরা পিছিয়ে আসেন। কাজলের খোঁজ নিতে গিয়ে তারা দেখেন মনোরম স্থানীয় ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীতে পরিবেষ্টিত।
অতএব বাংলাদেশে যা হয় তাই হয়েছে। সরকারপন্থী সাংবাদিক বলে পরিচিত কাজল বিএনপির রঙ নিয়েই যশোর কারাগারে গেলেন! অথচ সরকারপন্থী সাংবাদিক হিসাবে পরিচিতির কারনে বিএনপি তার মুক্তি দাবিও করেনি। হায় সাংবাদিকতা!
এখন ঢাকা থেকে তার নামে থাকা আরেক মামলার কাগজপত্র যশোর যাচ্ছে। হাইকোর্টের জাসদ দলীয় একজন সিনিয়র নেতা তার কিভাবে জামিন করানো যায় সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
কিন্তু মাঝখানে মানুষের কাছে দোষ কিন্তু শেখ হাসিনার নামেই গেছে! তিনিতো দেশের প্রধানমন্ত্রী। দিনশেষে দেশের ভালোমন্দ সবকিছু তাঁর একাউন্টেই যায়। প্রবীর শিকদারকে গ্রেফতার হয়রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জড়িত না থাকলেও তাঁর মুক্তিতে তিনি কিভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন তা আমি জানি। কাজলের মুক্তির উদ্যোগটাও তিনি নিতে পারেন। তাঁর কাছেতো সবাই সমান।

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code