অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে প্রণয়ন করা হচ্ছে অাগামী অর্থবছরের বাজেট

প্রকাশিত: ৮:০২ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২০

অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে প্রণয়ন করা হচ্ছে অাগামী অর্থবছরের বাজেট

Manual8 Ad Code

ঢাকা, ০৮ মে ২০২০: ‘লকডাউনে’ গোটা দেশের অধিকাংশ মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে বন্দি। স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। বছরের শুরুতে যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাও এখন অনিশ্চিত।

Manual3 Ad Code

অনেকে ধারণা করছে শেষ পর্যন্ত তা ৬ শতাংশ হতে পারে। আর এসব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই চলে আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট।
নানা টানপোড়েনের মধ্যেই সম্ভাব্য একটি খসড়া তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরেই তিনি মঙ্গলবার এটি উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সেখানে তিনি কোভিট-১৯ আঘাত শেষে আশার আলো দেখিয়েছেন অর্থনীতিতে। সবেচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও কৃষিতে। তবে বাজেট প্রণয়নে জড়িতদের মতে, আগামী বাজেট হবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের।
করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি না হলে অর্থাৎ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে নতুন বাজেট ২ মাস পেছানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থবিভাগ থেকে বাজেট ঘোষণার দিনক্ষণ ঠিক করে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেটের খসড়া উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে নতুন বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৫ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।
তবে শেষ পর্যন্ত এটি সামান্য বাড়তে বা কমতে পারে। বছরের শুরুতে ৬ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল অর্থ বিভাগের। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আঘাতে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ধাক্কার কথা বিবেচনা করে সেটি কমিয়ে আনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আগামী বাজেটে করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও নিম্ন আয়ের মানুষকে পুনর্বাসনে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ওপর নতুন করে করের চাপ না বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। বাজেটে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, আগামী বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথম বৈঠক হয়েছে। এখনও বাজেট চূড়ান্ত হয়নি। লকডাউনের কারণে আগামী ১২ মে’র মধ্যে অনলাইনে বাজেটের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত চাওয়া হয়েছে। সে মতামত পাওয়ার পর সংযোজন-বিয়োজন করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে নতুন বাজেট চূড়ান্ত করা হবে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমার নিজস্ব মত হচ্ছে নতুন বাজেটে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে বেশি গুরুত্ব দেয়া। এবারের বাজেট হবে পুনর্বাসনের বাজেট। করোনা ভাইরাসের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি অনেকটা কম হবে। তবে আশা করি এ অবস্থা দীর্ঘদিন না থাকলে আগামীতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও ভালো হবে। এখন সেটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
করোনার কারণে চলতি এবং আগামী উভয় বছরের রাজস্ব আয় নিয়ে সরকারের বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এরই মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে আছে কল-কারখানা। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি ও রফতানি খাতে। ফলে চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ অনুমান করছে, জুন শেষে সরকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব কম পাবে।
এই হিসাবকে সামনে রেখে আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি এবং সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। চলতি সংশোধিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট খাত থেকে আদায় করা হবে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা, আয়কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা এবং কাস্টমস ডিউটি থেকে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। এদিকে রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাড়বে বাজেট ঘাটতিও। বরাবরের মতো বাজেট ঘাটতি এবার আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যে থাকছে না। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত তা ৬ শতাংশ হতে পারে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। বরাবরই বাজেটের একটি বড় অংশজুড়ে থাকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)।
আগামী বাজেট এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় তা মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা বেশি। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে উন্নয়ন বাজেটে অগ্রাধিকার পাচ্ছে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাত।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত বেশি গুরুত্ব পাবে এবং তারা যেন এই দুই খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো মাথায় রেখেই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পাঠায়। আগামী বছরে জিনিসপত্রের মূল্য নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগ নেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের। কারণ বিশ্বব্যাপী করোনার আঘাতে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে নেমে এসেছে।
এর সুফল পাবে ভোক্তা পর্যায়ে। যে কারণে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের ঘরে রাখা হবে। এদিকে আগামী বছর সরকার ব্যাংক থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। ওই হিসাবে কমপক্ষে ৭২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। এটি মূলত ঘাটতি বাজেট পুরণে ব্যয় করা হবে। চলতি বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪০ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code