এক বছরেও শেষ হয়নি রেনু হত্যার তদন্ত

প্রকাশিত: ৫:২৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০২০

এক বছরেও শেষ হয়নি রেনু হত্যার তদন্ত

Manual2 Ad Code

ঢাকা, ২০ জুলাই ২০২০: ছেলেধরা গুজবের মধ্যে ঢাকার একটি বিদ্যালয়ের সামনে গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনুর মৃত্যুর ঘটনার হত্যামামলাটির তদন্ত এক বছরেও শেষ না হওয়ায় শুরু হয়নি বিচার।

Manual5 Ad Code

গ্রেপ্তার ১৪ আসামির ৫ জন পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দেরির সুযোগে জামিনে বেরিয়ে গেছেন কারাগার থেকে।
এই পরিস্থিতিতে বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ী এখন নিহত রেনুর পরিবার।
পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে গত বছরের মাঝামাঝিতে ফেইসবুকে গুজব ছড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকটি আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
তার এর মধ্যেই ২০ জুলাই ঢাকার উত্তর বাড্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তসলিমাকে (৪২) পিটিয়ে মারা হয়। তিনি তার মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য খবর নিতে সেখানে গিয়েছিলেন।
ওই ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হলে পুলিশ তৎপর হয়; গণপিটুনিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের কথাও তখন জানানো হয়েছিল।
রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু তখন অজ্ঞাত পাঁচশ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে বাড্ডা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ বেগমসহ প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও আসামি করতে চেয়ে আদালতে সম্পূরক এজাহার দাখিল করেন তিনি। তখন আদালত তা তদন্তের নির্দেশ দেয়।
মামলার পর প্রথমে বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক প্রায় ৫ মাস তদন্ত করেন। অধিকাংশ আসামি গ্রেপ্তার করেন তিনি। এর মধ্যে তিনজন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

এরপর মামলার তদন্তের ভার যায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।

বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদশর্ক আব্দুল হক বলেন, “থানা-পুলিশের কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কনিষ্ঠ কমর্কর্তারা মামলাটি সঠিক নিয়মে তদন্ত করছিলেন না।

“আমাদের সময়েই প্রধান আসামি হৃদয় ধরা পড়েছে। আমি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার কারণে তদন্ত থেমে ছিল। এখন সুস্থ হয়েছি। কাজে ফিরব কয়েকদিনের মধ্যে, তদন্ত শেষ হবে তাড়াতাড়ি।”

তবে তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে মামলার বাদী টিটু বলেন, “থানা পুলিশই ১৩ জন আসামিকে ধরে ফেলেছিল। তারা খুব দ্রুত গতিতে এ কাজ করেছিল। কিন্তু মামলাটি ডিবিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত একেবারে বন্ধই হয়ে গেল।

“তদন্তে তাদের আগ্রহ নেই। তদন্ত কমর্কতা অসুস্থ হয়েছিলেন বলে তদন্ত কেন বন্ধ থাকবে? তদন্ত টিমে তো আরও লোক রয়েছে। তদন্তের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার। তারা কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখছেন না আমাদের সঙ্গে।”

তিনি বলেন, “আমি ভিডিও ফুটেজটি দেখেছি। মারধরে ৪০ থেকে ৫০ জনের সম্পৃক্ততা রয়েছে, যার মধ্যে কমপক্ষে ২০ থেকে ২২ জন সরাসরি জড়িত। সেখানে এ পর্যন্ত ১৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। জড়িত অন্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা উচিৎ। আর সেটা না করা গেলে তাড়াতাড়ি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হোক।”

এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল হক বলেন, “এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভাসমান প্রান্তিক শ্রেণির। ভাড়াটিয়া হিসাবে অনেকেই বাসা পরিবর্তন করে ওই এলাকা থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। যাচাই-বাছাই করে নাম ঠিকানা সংগ্রহে একটু সময় লাগছে।”

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ২৫ নভেম্বরে গ্রেপ্তার আসামি রিয়া বেগম জামিনে মুক্তি পান। পরে বাচ্চু মিয়া, মো. শাহীন, মো. মুরাদ মিয়া, মো. বাপ্পি জামিনে বেরিয়ে আসেন।

Manual6 Ad Code

এই মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী শামীম দাঁড়িয়া ও আক্তার হোসেন ভূঁইয়াও বলছেন, তারা চান বিচার দ্রুত শুরু হোক। তাহলে নির্দোষরা অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবে।

রেনুর কথা ‘বুঝতে চায়নি কেউ’

Manual8 Ad Code

নিহত রেণুর বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমা বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশ কণ্ঠে বলেন, “আমার বোনের ছেলে-মেয়ে দুটি বারবার তাদের মায়ের কথা বলে। তারাও ঘটনার বিচার চায়।”

স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটনা রেনুর বড় ছেলেটির বয়স ১২ বছর, মেয়েটির বয়স ৫ বছর।

Manual4 Ad Code

রেনু লেখাপড়া শেষে আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছেন। স্কুলেও করেছেন শিক্ষকতা। ২০১৭ সালে স্বামী তসলিম হোসাইনের সঙ্গে তার বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর মায়ের সঙ্গে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটের একটি ভাড়া বাসায় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকছিলেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code