কিংবদন্তী শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল বাশারের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২৫

কিংবদন্তী শ্রমিক নেতা কমরেড আবুল বাশারের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Manual7 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ০৭ নভেম্বর ২০২৫ : বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম কমরেড আবুল বাশার। দেশের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী নেতা, শ্রমিক ঐক্যের প্রতীক এবং ওয়ার্কার্স পার্টির প্রাক্তন সভাপতি এই কিংবদন্তী নেতার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে আজ।

১৯৩৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার (বর্তমান লহ্মীপুর) রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ কেরুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কমরেড আবুল বাশার। সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি শ্রমজীবী মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে আজীবন সংগ্রাম করেছেন।

শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রপথিক

পঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ইস্পাহানী জুট মিলসে কারিগরি বিভাগের শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। অল্প সময়েই কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে হয়ে ওঠেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা। সাহসী, ত্যাগী ও নির্ভীক নেতৃত্বের কারণে শীঘ্রই তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাটকল, বস্ত্রকল, বন্দর ও অন্যান্য শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের কাছে আস্থার প্রতীকে পরিণত হন।

ষাটের দশকে সামরিক শাসক জেনারেল আয়ুব খানের শাসনামলে তিনি নেতৃত্ব দেন ঐতিহাসিক ৫৬ দিনের লাগাতার ধর্মঘটের, যা দেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। এই ধর্মঘটের মাধ্যমে পাটকল মালিক ও সামরিক প্রশাসন শ্রমিকদের দাবিদাওয়া মেনে নিতে বাধ্য হয়। এ আন্দোলনের ফলে আবুল বাশার জাতীয় পর্যায়ের শ্রমিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান।

ঐক্যের রাজনীতিতে দৃঢ় অবস্থান

Manual6 Ad Code

শ্রমিক আন্দোলনের বিভাজন নিরসনে তিনি ছিলেন আপসহীন। ১৯৮৪ সালে দলমত নির্বিশেষে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে গঠন করেন “শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ”। পরবর্তীতে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প শ্রমিকদের সংগঠিত করতে ১৯৮৬ সালে তিনি গঠন করেন “পাট-সুতা-বস্ত্রকল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ”। তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন নানা দাবিদাওয়ার সফল বাস্তবায়ন ঘটায় এবং শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে নতুন আস্থা সঞ্চার করে।

মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতিতে অবদান

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কমরেড আবুল বাশার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি “মজদুর পার্টি” গঠন করেন এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৮৫ সালে মজদুর পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টি ঐক্যবদ্ধ হলে তিনি ঐক্যবদ্ধ দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে শ্রমিক রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

শ্রমিক ঐক্যের অবিচল বিশ্বাস

কমরেড আবুল বাশার বিশ্বাস করতেন—দলমত নির্বিশেষে শ্রমিকদের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। তিনি সর্বদা শ্রমিক আন্দোলনে সংকীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকেছেন। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের নির্দেশিত বি-শিল্পায়ন ও বেসরকারিকরণ নীতির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন।

চিরস্মরণীয় অবদান

২০০০ সালের দশকে তিনি শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ৯০-এর দশকে এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনে শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করেন নিরলসভাবে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক ও শ্রমিকজীবনে অসংখ্য দমন-পীড়ন, কারাবরণ ও নির্যাতন সত্ত্বেও তিনি তার আদর্শ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের মূলকথা ছিল—“শ্রমিক ঐক্যই মুক্তির পথ।”

প্রয়াণ ও স্মরণ

Manual2 Ad Code

২০১০ সালের ৭ নভেম্বর (২৩ কার্তিক ১৪১৭ বাংলা) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। মৃত্যুর পরও তাঁর সংগ্রামী জীবন ও আদর্শ আজও দেশের শ্রমিক আন্দোলনে প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিলাদ, স্মরণসভা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

কমরেড আবুল বাশারের জীবন, সংগ্রাম ও আদর্শ—বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির আন্দোলনে চিরপ্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে।

Manual7 Ad Code

 

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

 


Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code