কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের গৌরবময় ১২৭ বছরে পদার্পণ

প্রকাশিত: ২:০৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২৫

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের গৌরবময় ১২৭ বছরে পদার্পণ

Manual2 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক | কুমিল্লা, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ : দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতির অন্যতম শিকড়ভূমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ আজ তার গৌরবময় ১২৭ বছরে পদার্পণ করেছে।

১৮৯৯ সালের ২৪ নভেম্বর রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠ বহু প্রজন্ম ধরে এ অঞ্চলের মানুষকে আলোকিত করে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর এর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার আনন্দচন্দ্র রায়কে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল। রানী ভিক্টোরিয়ার নাম অনুসারে কলেজটির নামকরণও সেই সময়েই করা হয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সকাল ১০টায় কলেজ প্রাঙ্গন থেকে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হয়। পরে কলেজের হৃদয়ে অবস্থিত মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাবেক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পুরো ক্যাম্পাস উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

ঐতিহ্যের ধারক ভিক্টোরিয়া কলেজ

কলেজ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা রূপান্তর ও বিকাশের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্রিটিশ ভারতের প্রথম দিকের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম এই কলেজ। পাকিস্তান আমলে এর নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ‘ভিক্টোরিয়া’ নামটি অটুট থেকেছে ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে।

বর্তমানে কলেজটি দুটি অংশে বিভক্ত—

ইন্টারমিডিয়েট শাখা: কান্দিরপাড়ের রানীদীঘির পাড়ে

অনার্স-মাস্টার্স শাখা: ধর্মপুর ক্যাম্পাসে

প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস। ২২টি বিষয়ে অনার্স ও ১৯টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে এখানে। এছাড়া ১২টি সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন কলেজের শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে রেখেছে।

ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সংগ্রামী ইতিহাস

Manual6 Ad Code

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম—সবক্ষেত্রেই ভিক্টোরিয়া কলেজের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখা বহু কৃতী ব্যক্তিত্ব এ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—
শচীন দেববর্মণ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, অদ্বৈত্য মল্লবর্মণ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, হানিফ সংকেতসহ আরও বহু গুণী জন।

Manual4 Ad Code

এদের অন্যতম কুমিল্লার সন্তান ও বাম রাজনৈতিক ধারার বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট কলামিস্ট এবং আরপি নিউজের সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান। কলেজ সম্পর্কে তার মূল্যায়ন—
“প্রাচীনত্বের বিচারে এ কলেজটি বুড়োদের দলেই পড়ে। মূলত এইটিই ছিল পূর্বাঞ্চলীয় অন্ধকার যুগের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।”

আধুনিকতার পথে অগ্রসরমাণ ক্যাম্পাস

কলেজ ক্যাম্পাসে গত কয়েক দশকে যুক্ত হয়েছে একাধিক স্থাপনা, যা সৌন্দর্য ও আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছে পুরো প্রাঙ্গণে। এর মধ্যে রয়েছে—
হৃদয়ে মুক্তমঞ্চ, স্বাধীনতা স্তম্ভ, আনন্দচন্দ্র রায়ের প্রতিকৃতি, শহীদ মিনার, কলেজ লেক, রানীদীঘি, ক্যান্টিন, মুতাহের হোসেন চৌধুরী লাইব্রেরি, কবি নজরুল ইসলাম হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল।

Manual5 Ad Code

রানীদীঘির পাশেই একসময় বসতেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এখানেই তিনি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, কবিতা লিখতেন এবং প্রিয়তমা নার্গিসকে প্রেমপত্র পাঠাতেন বলে কথিত আছে। এসবই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাসে রোমান্টিক ও সাংস্কৃতিক আবহ যোগ করেছে।

অধ্যক্ষের অভিমত

Manual2 Ad Code

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন,
“১২৭ বছরের পথচলা আমাদের জন্য এক অসীম গৌরবের বিষয়। শিক্ষা-সংস্কৃতির চর্চা এবং মেধা বিকাশে ভিক্টোরিয়া কলেজ আজও দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। এ বছর সীমিত পরিসরে র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।”

সাবেক ছাত্রনেতা কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামানের শুভেচ্ছা

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ১২৭ বছরের পদযাত্রা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানের সংগঠক, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর চার মেয়াদের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা জেলা শাখার সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান। তিনি বলেন, “ভিক্টোরিয়া কলেজ শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক। ১২৭ বছর পূর্তি বাংলাদেশের শিক্ষাচর্চায় এক অনন্য মাইলফলক।”

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ